নির্জন: ফাঁকা পড়ে রয়েছে ঝড়খালি পর্যটন কেন্দ্র। নিজস্ব চিত্র।
প্রায় ২২ বছর ধরে সুন্দরবনের নদী, খাঁড়িতে মাছ, কাঁকড়া ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন ঝড়খালি ৩ নম্বর বাঘমারি গ্রামের বাসিন্দা গৌতম রায়। বাবা গৌরপদর সঙ্গেই জঙ্গলে যেতেন। একদিন চোখের সামনে বাবাকে বাঘে তুলে নিয়ে যায়। সেই ঘটনার পর মা কৃষ্ণা জানিয়ে দেন, ছেলের কোনও মতেই জঙ্গলে যাওয়া চলবে না।
বিকল্প রোজগার হিসেবে গৌতম ঝড়খালি পর্যটন কেন্দ্রে আখের রস বিক্রির পেশা বেছে নেন। পরে এই পর্যটন কেন্দ্রে ছোট দোকান করেন। বিস্কুট, জল, ঠান্ডা পানীয়, চিপস বিক্রি করে গত ১২-১৩ বছর ধরে সংসার চলছিল। কিন্তু লকডাউনে পর্যটক আসা বন্ধ হওয়ায় পেটে টান পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে ফের জঙ্গলে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন তিনি। শুধু গৌতম নন, ঝড়খালি পর্যটন কেন্দ্রের ব্যবসায়ী গৌর মণ্ডল, মিলন মলঙ্গি, ভানু মাইতিদেরও একই অবস্থা।
গত বছর টানা লকডাউনে সুন্দরবনের পর্যটনশিল্পে মন্দা দেখা দেওয়ায় বিপুল ক্ষতির মুখে পড়েন ঝড়খালি পর্যটন কেন্দ্রের ছোট ব্যবসায়ীরা। মাঝে তিন মাস পর্যটন খুলে যাওয়ায় পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দিতে পেরেছিলেন। কিন্তু এ বছর মার্চ থেকে ফের পর্যটন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনটনের মুখে পড়েছেন বেশির ভাগ ছোট ব্যবসায়ী। এঁদের অনেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফের জঙ্গলে মাছ, কাঁকড়া ধরতে রওনা দিচ্ছেন পেটের তাগিদে।
গৌতম জানান, এখানে প্রায় ষাটজন ব্যবসায়ী রয়েছেন। সকলেরই এক অবস্থা। অনেকেই ইতিমধ্যে নতুন করে জঙ্গলে মাছ, কাঁকড়া ধরার কাজ শুরু করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘এ রকম পরিস্থিতি থাকলে আমাকেও আবার জঙ্গলের পথ বেছে নিতে হবে।”
ভানু মাইতি বলেন, ‘‘দিঘা, দার্জিলিং-সহ রাজ্যের প্রায় সমস্ত পর্যটন কেন্দ্রই শর্তসাপেক্ষে খুলে দেওয়া হয়েছে। আমরাও চাই করোনা সংক্রান্ত নির্দেশিকা মেনে সুন্দরবনের পর্যটন কেন্দ্রগুলি খুলে দেওয়া হোক। না হলে অনেকেই ফের জঙ্গলের পথ বেছে নিতে বাধ্য হবেন।”
গত কয়েকদিনে সুন্দরবনের নদী, খাঁড়িতে মাছ, কাঁকড়া ধরতে গিয়ে চারজন মৎস্যজীবীর মৃত্যু হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে নতুন করে ছোট ব্যবসায়ীরা জঙ্গলমুখী হলে বিপদ আরও বাড়বে। ন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের ফিল্ড ডিরেক্টর তাপস দাস বলেন, ‘‘সরকারি নির্দেশিকা পেলেই আমরা সুন্দরবনের পর্যটন কেন্দ্রগুলি খুলে দেব। তবে নির্দেশিকা না পাওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে আমাদের কিছু করার নেই।”