প্রতীকী ছবি
ঝড় বিধ্বস্ত পরিবারগুলির জন্য রান্না করা খাবারের ব্যবস্থা করেছিল একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। কয়েক দিন ধরে কার্যত আধপেটা খেয়ে কাটানো গরিব মানুষগুলো পেট ভরে খাবার পেয়েছিলেন শিবিরে। হঠাৎই বিপত্তি। অভিযোগ, খাবার খাওয়ার ঘণ্টা কয়েকের মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েন শতাধিক মানুষ। শুক্রবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে কুলতলির গুড়গুড়িয়া-ভুবনেশ্বরী পঞ্চায়েতের উত্তর দেবীপুর গ্রামে।
আমপানে বিধ্বস্ত হয়েছে কুলতলি ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা। বাঁধ ভেঙে ভেসে গিয়েছে কয়েকশো ঘর। হাজার হাজার বিঘে কৃষিজমিও জলের তলায়। দিন দশেক কেটে যাওয়ার পরেও জল নামেনি অনেক এলাকা থেকে। চাল উড়ে, দেওয়াল ভেঙেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বহু বাড়ি। ব্লকের বড় অংশের জনজীবন কার্যত বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ঝড়ের দাপটে। প্রশাসনের তরফে কিছু ত্রিপল বিলি করা ছাড়া এখনও তেমন কোনও সাহায্য মেলেনি বলে অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। বেহালার একটি সংগঠনের তরফে শুক্রবার এলাকার মানুষকে রান্না করা খাবার পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। দেবীপুর করুণাময়ী বালিকা বিদ্যালয়ে শিবির করে সংস্থাটি। সেখানেই রান্না-বান্না হয়। দুপুরে প্রায় পাঁচশো মানুষকে খাওয়ানো হয়। রাতেও বিভিন্ন এলাকার পাঁচশো মানুষের খাওয়ার বন্দোবস্ত ছিল। তার মধ্যে উত্তর দেবীপুরের প্রায় ১২০ জনের খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ রান্না করা ডিমের ঝোল-ভাত পৌঁছে যায় উত্তর দেবীপুরে। স্থানীয় একটি মাঠ থেকে গ্রামের মানুষকে খাবার বিলি করা হয়। তা বাড়িতে নিয়ে গিয়ে খান স্থানীয় বাসিন্দারা। গ্রামবাসীরা জানান, খাবার খাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর থেকেই বমি-পায়খানা শুরু হয়। শিশু-বৃদ্ধ মিলিয়ে একে একে অসুস্থ হয়ে পড়েন একশোর বেশি মানুষ। স্থানীয় একটি চিকিৎসাকেন্দ্রে সকলের প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা হয়। শনিবার ভোরে মেডিক্যাল টিম নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন কুলতলি ব্লক হাসপাতালের বিএমওএইচ সুরজিৎ সেন। প্রাথমিক চিকিৎসায় কয়েকজন সুস্থ হন। প্রায় সত্তর জনকে সকালে কুলতলি ব্লক হাসপাতালে এনে চিকিৎসা শুরু হয়। হাসপাতাল সূত্রে খবর, বিকেল অধিকাংশকেই বাড়ি পাঠানো হয়েছে। বিএমওএইচ বলেন, “প্রাথমিক ভাবে খাদ্যে বিষক্রিয়াই মনে হচ্ছে। আমরা খাবারের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে দেখছি। রিপোর্ট এলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে।” অসুস্থ হয়ে পড়া শম্পা মুদি বলেন, “রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ ভ্যানে করে পাড়ায় খাবার আসে। সকলেই বাড়িতে খাবার আনি।” শম্পার ছেলে ননীগোপালও অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এ দিন হাতে স্যালাইনের চ্যানেল নিয়ে মায়ের পাশেই নেতিয়ে পড়েছিল বছর এগারোর শিশুটি। শম্পার কথায়, “ডিম-ভাত পেয়ে ছেলেটা খুবই খুশি হয়েছিল। কিন্তু এই অবস্থা হবে ভাবিনি।” স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটির পক্ষে পুলক মণ্ডল বলেন, “ওই একই খাবার আরও অনেক জায়গায় পাঠানো হয়েছে। আমরা নিজেরাও খেয়েছি। কোথাও সমস্যা হয়নি। ওই এলাকায় কী ভাবে এমন ঘটল, বুঝতে পারছি না। যাই হোক, আমরা সব রকম ভাবে ওই এলাকার মানুষের পাশে আছি। ওঁদের জন্য ওষুধপত্রের ব্যবস্থা করেছি।” গুড়গুড়িয়া ভুবনেশ্বরী পঞ্চায়েতের প্রধান ধনঞ্জয় ভুঁইঞা বলেন, “রাস্তায় নিয়ে যাওয়ার পথে কোনও ভাবে ওই খাবার সংক্রমিত হয়ে থাকতে পারে। স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই ওঁরা কাজ করছিলেন। আপাতত ওঁদের খাবার বিতরণ করতে বারণ করা হয়েছে।”