এই খেতেই গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। নিজস্ব চিত্র
বার বার একই অভিযোগে বিদ্ধ বিএসএফ। উত্তর ২৪ পরগনায় সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের অনেকেরই অভিযোগ, মহিলাদের প্রতি কোনও কোনও জওয়ানের আচরণ আপত্তিজনক। এর আগেও ধর্ষণ, শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে জওয়ানদের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশি মেয়েদের ধর্ষণের অভিযোগও উঠেছে সীমান্তরক্ষীদের বিরুদ্ধে।
পুলিশ জানিয়েছে, গত বছর জুলাই মাসে বিএসএফ ফাঁড়িতে আটক বাংলাদেশি তরুণীকে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। আটক আরও এক বাংলাদেশি তরুণীকে ওই জওয়ান যৌন নিগ্রহ করেন বলে অভিযোগ।
বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনার পরে উত্তর ২৪ পরগনার সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, দালাল ধরে চোরাপথে দু’দেশের মধ্যে যাতায়াতের সময়ে মাঝে মধ্যেই মহিলারা যৌন নির্যাতনের শিকার হন। কখনও বিএসএফ জওয়ান, কখনও দালাল, কখনও নৌকোর মাঝিদের হাতে নির্যাতিতা হতে হয় অনেককে। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনায় ভারতীয় মহিলা নির্যাতিত হয়েছেন বলে তিনি পুলিশের দ্বারস্থ হতে সাহস পেয়েছেন। বাংলাদেশি মহিলা হলে অনেক সময়ে ভয়ে মুখ খোলেন না।
সীমান্ত এলাকায় বসবাস করা মানুষের বক্তব্য, চোরাপথে যাতায়াত করার সময়ে যদি কোনও মহিলা ধরা পড়েন, তা হলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করুক বিএসএফ। কিন্তু নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কেউ যদি অত্যাচারী হয়ে ওঠেন, তা হলে বিপদ আরও বেশি! বাসিন্দারা কেউ কেউ জানালেন, অনেক সময়ে রাতে মেয়েদের আর্তনাদ শুনতে পান তাঁরা। বাংলাদেশের অভাবী পরিবারের বহু মেয়েকে কাজের টোপ দিয়ে এ দেশে আনা হয়। অনেক সময়েই নির্যাতনের শিকার হন তাঁরা। অনেককে পরে যৌনপল্লিতে বিক্রি করে দেওয়া হয়।
বছর তিনেক আগে কাজের খোঁজে এ দেশে আসা এক বাংলাদেশি তরুণীকে সীমান্তে গণধর্ষণ করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। দুই যুবক তাঁকে ও দেশে পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্ষণ করে। সীমান্ত পেরোতে রাত হয়ে গেলে দালালেরা অনেক সময়ে মেয়েদের কাছেপিঠে কোথাও রাখার ব্যবস্থা করে। সেখানেও নির্যাতনের শিকার হন অনেকে। বহু ঘটনাই সামনে আসে না বলে দাবি সীমান্তের গ্রামের মানুষের। কয়েক বছর আগে গ্রামবাসীরা এক তরুণীকে অচৈতন্য অবস্থায় উদ্ধার করেছিলেন। তরুণী পরে জানান, নৌকোয় এ দেশে আসার সময়ে মাঝি তাঁকে ধর্ষণ করে।
পুলিশ জানিয়েছে, নারী নির্যাতনের অভিযোগ পেলেই পদক্ষেপ করা হয়। উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশি মেয়েদের গ্রেফতার না করে তাঁদের ‘নির্যাতিতা’ হিসাবে গণ্য করা হয়। হোমে পাঠিয়ে কাউন্সেলিং করা হয়।
বৃহস্পতিবারের ঘটনার পরে শনিবার এলাকায় গিয়েছিল তৃণমূলের একটি প্রতিনিধি দল। দলের সদস্য, বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘‘বিএসএফের ক্ষমতা ৫০ কিলোমিটার বাড়ালে সুরক্ষা আরও লঙ্ঘিত হবে। সীমান্তে নারীসুরক্ষা নিয়ে কেন্দ্রের কোনও মাথাব্যথা নেই। বৃহস্পতিবারের ঘটনা মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হবে।’’ রবিবার এলাকায় প্রতিবাদ সভা করা হবে বলেও জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে বিজেপি নেতা রামপদ দাস বলেন, ‘‘বিএসএফের এলাকা বাড়লে বরং চোরাচালান, দুর্নীতি কমবে। এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। তৃণমূল তাকে সামনে রেখে গোটা বাহিনীকে ধর্ষক বানাতে চাইছে। এটা বাহিনীর প্রতি অমর্যাদা। শাসকদল রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে এ সব বলছে।’’