ফাইল চিত্র।
পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে রাতের অন্ধকারে পোস্টার পড়ল। পোস্টারে সিবিআই-ইডির তদন্ত দাবি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভায়। এ দিন সকালে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা দেখতে পান, পুরভবনের পিছনের দিকে গেটে এবং এসবিআই ব্যাঙ্কের সামনে ছাপানো অক্ষরে লেখা পোস্টারগুলি। তৃণমূল কর্মীরা সে সব ছিঁড়ে ফেলেন।
এ বিষয়ে তৃণমূলের অশোকনগর বিধানসভার এসসি-ওবিসি সেলের সভাপতি গুপি মজুমদার অশোকনগর থানায় অভিযোগ করেছেন। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। গুপি বলেন, ‘‘পুরপ্রধান একজন সৎ এবং দায়িত্ববান মানুষ। তাঁর রাজনৈতিক জীবন কালিমালিপ্ত করতে এই নোংরা কুরুচিপূর্ণ পোস্টারগুলি মারা হয়েছে।’’
এর আগে, গত ১২ জুন একই ভাবে পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে পোস্টার পড়েছিল। স্থানীয় রাজনৈতিক মহল মনে করছেন, এই ঘটনায় অশোকনগরে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল প্রকাশ্যে চলে এল। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির মতে, তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দলের জেরেই এই পোস্টার।
সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সত্যসেবী কর বলেন, ‘‘বার কয়েক পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে পোস্টার পড়ল। সিসি ক্যামেরার ছবি দেখে পুলিশকে দিয়ে কেন তদন্ত করানো হচ্ছে না? তা হলে বোঝা যাবে, তৃণমূলের কোন গোষ্ঠী পোস্টার মারল। অশোকনগরের সংস্কৃতিকে তৃণমূল নষ্ট করছে।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পোস্টারের নীচে লেখা, ‘অশোকনগরের জনগণ।’ কোনওটায় লেখা, ‘অশোকনগরের যুবক-যুবতী।’ পোস্টারে অভিযোগ করে লেখা হয়েছে, ‘গঙ্গাজল প্রকল্পে তিনটি কোম্পানি থেকে প্রবোধ সরকার কোটি কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছে। সিবিআই-ইডি চাই।’ অন্য একটি পোস্টারে অভিযোগ তোলা হয়েছে, ‘অশোকনগরের বেকার যুবক-যুবতীদের বঞ্চিত করে লক্ষ লক্ষ টাকায় পুরসভার চাকরি বিক্রি করেছেন।’ পোস্টারের উপরে লেখা, অশোকনগরের পার্থ (প্রবোধ সরকার)।
অভিযোগের বিষয়ে পুরপ্রধান প্রবোধ সরকার বলেন, ‘‘কে বা কারা পোস্টার মারল জানি না। তবে কিছু দুষ্কৃতী থাকে, যাদের অন্যায় কাজে আমি বাধা দিয়েছি। তাদের চুরি বা একের পর এক অন্যায় কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। তারাই এই পোস্টার মেরেছে।’’ তাঁর দাবি, তিনি অশোকনগরে চুরি-ছিনতাই-খুনের ঘটনা বন্ধ করে দিয়েছেন। মানুষ শান্তিতে বসবাস করছেন। এটা অনেকের সহ্য হচ্ছে না।
গঙ্গাজল প্রকল্প নিয়ে প্রবোধ বলেন, ‘‘যারা পোস্টার মেরেছে, তারা জানে না, জল প্রকল্পের টাকা আমাদের কাছে আসে না। গঙ্গাজল প্রকল্প আমরুত প্রকল্পের টাকায় হচ্ছে। টেন্ডার হওয়ার পরে এমইডি বিল করে। চেকে আমরা সই করি না। রাজ্যের সেরা দু’টি ঠিকাদার সংস্থা কাজ করছে। তারা দুর্নীতির সঙ্গে আপোষ করে নিজেদের সুনাম নষ্ট করতে চায় না। এখানে টাকা তছরুপের কোনও সুযোগই নেই।’’ পুরসভার কর্মী নিয়োগে টাকা নেওয়ার অভিযোগও তিনি উড়িয়ে দিয়েছেন।
তৃণমূলের একাংশের দাবি, তাদের দলের লোকজনই এ সবের পিছনে দায়ী। অশোকনগরের প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক ধীমান রায় বলেন, ‘‘পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে পোস্টার পড়ার বিষয়টি শুনেছি। ঘটনাগুলি যে সময়ের, তখন আমি বিধায়ক ছিলাম ঠিকই— তবে পুরসভার কাজে হস্তক্ষেপ করতাম না। ফলে অভিযোগের বিষয়ে আমি কিছুজানি না।’’