এই অবস্থা বাড়িগুলির। ছবি: নবেন্দু ঘোষ।
আগুনে ভস্মীভূত হয়ে গেল ছ’টি মাটির বাড়ি। মঙ্গলবার রাতে হিঙ্গলগঞ্জ থানার সাহেবখালি পঞ্চায়েতের পুকুরিয়া গ্রামের মহাজন পাড়ার ওই ঘটনায় কার্যত পথে বসেছে পরিবারগুলি। বিডিও হিঙ্গলগঞ্জ দেবদাস গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওঁদের শাড়ি, পোশাক, শুকনো খাবার ও ত্রিপল দিয়েছি। থাকার জন্য কী করা যায় দেখছি।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পুকুরিয়া গ্রামে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান ছিল। গ্রামের অনেকে সেখানে যান। রাত ৯টা নাগাদ আগুন লাগে রবীন্দ্রনাথ গায়েন নামে এক ব্যক্তির খড়ের ছাউনি দেওয়া মাটির বাড়িতে। সেই আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে পাশাপাশি আরও পাঁচটি বাড়িতে। খবর পেয়ে সকলে ছুটে আসেন। পৌঁছয় পুলিশ। সকলে মিলে আগুন নেভানোর চেষ্টা করলেও শেষরক্ষা হয়নি। ঘরের মধ্যে থেকে কার্যত কিছুই অক্ষত উদ্ধার করতে পারেননি কেউ।
বুধবার চোখে জল নিয়ে পোড়া বাড়ি থেকে কিছু জিনিস পাওয়া যায় কি না, খোঁজ করছিলেন অমিত গায়েন, দীনদয়াল গায়েন, রবীন্দ্রনাথ গায়েন, বাচ্চু গায়েন, সঞ্জয় গায়েন, সুকুমার গায়েনরা। রাস্তার পাশে বসেছিলেন পুড়ে যাওয়া বাড়ির এক সদস্য অনিন্দিতা মৃধা গায়েন। তিনি বলেন, ‘‘ঘরের ভিতর ছ’বছরের ছেলেকে নিয়ে ঘুমোচ্ছিলাম। হঠাৎ বাড়ির পিছন দিক থেকে আগুন দেখতে পেয়ে বাচ্চা ও বয়স্ক শ্বশুর-শাশুড়িকে নিয়ে বেরিয়ে আসি। আগুনের তীব্রতা এত বেশি ছিল, বাড়ি থেকে কিছুই বের করে আনতে পারিনি। প্রশাসনের তরফে শুকনো খাবার, ত্রিপল পেয়েছি। কিন্তু এই গরমে ত্রিপলে থাকতে খুবই কষ্ট হচ্ছ।’’ তিনি আরও জানান, সম্প্রতি ঋণ নিয়েছিলেন। সেই টাকা শোধের জন্য বাড়িতে প্রায় ৫০ হাজার টাকা ছিল। কিছু সোনার গয়নাও ছিল। সব পুড়ে ছাই!
প্রায় একই অবস্থা বাকি পরিবারগুলিরও। সঞ্জয় গায়েন ভিন্ রাজ্যে কাজ করেন। বাড়িতে বয়স্ক বাবা-মা থাকেন। তাঁদের বাড়িও পুড়ে গিয়েছে। ফোনে বললেন, ‘‘বাড়িতে যা ছিল, সব নষ্ট। বাবা-মা সুস্থ আছেন, এটুকুই স্বস্তির।’’ দ্রুত গ্রামে ফিরছেন বলে জানালেন।
বুধবার ওই পরিবারের লোকদের সঙ্গে দেখা করতে আসেন বিজেপির বসিরহাট লোকসভার প্রার্থী রেখা পাত্র ও হিঙ্গলগঞ্জের বিধায়ক তৃণমূলের দেবদাস মণ্ডল। পাশে থাকার আশ্বাস দেন তাঁরা।
গোটা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। ওসি হিঙ্গলগঞ্জ অনিমেষ দাঁ বলেন, ‘‘আগুন লাগা নিয়ে কোনও অভিযোগ হয়নি। প্রাথমিক ভাবে অনুমান, শর্ট সার্কিট থেকেই এই বিপত্তি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’