প্রতীকী ছবি।
ঘর বাঁচাতে লড়াই দু’পক্ষের। আত্মবিশ্বাসের সুর দু’তরফেই। তৃণমূল এবং বিজেপি দুই দলই বলছে, তাঁদের হাতে বোর্ড গড়ার মতো যথেষ্ট সংখ্যক কাউন্সিলর রয়েছেন। তবুও দু’দলই গোপনে বিপক্ষ শিবিরের কাউন্সিলরদের সঙ্গে বৈঠক করছে।
ভাটপাড়া পুরসভায় বিজেপির পুরপ্রধান সৌরভ সিংহের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই অনাস্থা প্রস্তাব এনেছে তৃণমূল। এই পুরসভা টিকিয়ে রাখা বর্তমানে বিজেপির সাংসদ অর্জুন সিংহের কাছে চ্যালেঞ্জ। কারণ, ভাটপাড়া তাঁর ‘খাসতালুক’ বলেই পরিচিত। মাস ছয়েক আগে তাঁর পুরনো দল তৃণমূলের কাউন্সিলর ভাঙিয়ে এনে এই পুরসভা দখল করেছিলেন অর্জুন। অনাস্থা প্রস্তাবের উপরে ভোটাভুটির আগেও কাউন্সিলর ভাঙানোর চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ উঠছে। সব মিলিয়ে ভাটপাড়া পুরবোর্ড দখলের লড়াই জমে উঠেছে। তবে প্রশ্ন একটাই, পুরপ্রধানকে সরানোর বৈঠক কবে ডাকা হবে এবং কে ডাকবেন?
নিয়ম অনুযায়ী, অনাস্থার চিঠি জমা পড়ার ১৫ দিনের মধ্যে বৈঠক ডাকতে হয় পুরপ্রধানকে। তিনি বৈঠক না ডাকলে উপ পুরপ্রধান সাত দিন সময় পান বৈঠক ডাকার জন্য। তিনি বৈঠক না ডাকলে পুরপ্রধান পারিষদদের যে কেউ দু’দিনের মধ্যে বৈঠক ডাকতে পারেন।
তৃণমূল শিবিরের বক্তব্য এমনও হতে পারে, বিজেপি শিবিরে থাকা পুরপ্রধান পারিষদদের কেউ সেই বৈঠক ডাকলেন। আর ভোটাভুটিতে পুরপ্রধান সৌরভকে অপসারিত করা হবে। সে জন্য তৃণমূলের দরকার বিজেপি শিবির থেকে কোনও এক পুরপ্রধান পারিষদকে দল ভাঙিয়ে আনা। বিজেপির পুরপ্রধান সৌরভ জানাচ্ছেন, তাঁদের দল ভাঙানো তৃণমূলের পক্ষে সহজ হবে না। কারণ, তাঁদের কাউন্সিলরেরা একজোট আছেন। বরং তৃণমূলের শিবিরের কয়েক জন তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।
তৃণমূলের একটি সূত্রে আবার দাবি করা হয়েছে, বিজেপি শিবিরের কয়েক জন কাউন্সিলর ইতিমধ্যেই ঘাসফুল শিবিরের নেতৃত্বের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন। বৈঠকের কথা যদিও স্বীকার করেছেন না নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভৌমিক। তবে বিজেপির কাউন্সিলরদের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ যে রয়েছে, সে কথা কথা মানছেন। তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি আমাদের দলের কাউন্সিলরদের কথা না ভেবে নিজেদের কাউন্সিলরদের সামলে রাখুন। কারণ, বেশ কয়েক জন কাউন্সিলর ওই দলে থাকতে স্বস্তি বোধ করছেন না।’’
ভাটপাড়া পুরসভার মোট কাউন্সিলর ৩৫ জন। আগের পুরপ্রধান অর্জুন সিংহ লোকসভা ভোটে প্রার্থী হওয়ায় তিনি কাউন্সিলর পদ ছাড়েন। আর এক কাউন্সিলর জেলে রয়েছেন। ফলে বর্তমানে মোট কাউন্সিলর ৩৩ জন। আস্থা ভোটে জিততে ১৭ জন কাউন্সিলরের সমর্থন দরকার। পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থায় ১৮ জন সই করেছেন। কিন্তু পুরপ্রধান অপসারণের বৈঠক কেউ না ডাকলে সে ক্ষেত্রে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরে চিঠি লিখে পরবর্তী কর্তব্য জানবেন পুরসভার এগজিকিউটিভ অফিসার। সে ক্ষেত্রে অনেকটা সময় নষ্ট হবে। তৃণমূলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, অন্য কোনও ভাবে যদি পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যায়, সে দিকেই তাদের নজর। সে ক্ষেত্রে তাঁদের একমাত্র রাস্তা, উপ পুরপ্রধান বা পুরপ্রধান পারিষদকে দলে টেনে ভোটাভুটির বৈঠক ডাকা।
তৃণমূলের কয়েক জন কাউন্সিলর জানালেন, বিজেপির তরফ থেকে তাঁদের নানা প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। অর্জুন অবশ্য বলছেন, ‘‘ওদের মধ্যেই আমাদের লোকেরা রয়েছেন। ভোটাভুটিতে তাঁরা আমাদের পক্ষেই থাকবেন। কাউকে কোনও প্রস্তাব দেওয়া হয়নি।’’