Canning SDO Hospital

অর্ধেক নিরাপত্তারক্ষী নিয়েই চলছে ক্যানিং হাসপাতাল

আর জি কর-কাণ্ডের পর থেকে রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলির পরিকাঠামো, নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। জেলার বহু হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসক, নার্সরা কেমন পরিবেশে কাজ করেন— তা সরেজমিন দেখতে গিয়ে উঠে এল বহু ক্ষোভ, আশঙ্কা, আতঙ্কের চাপা কাহিনী। আজ ক্যানিং ও কাকদ্বীপ মহকুমা হাসপাতাল এবং কাকদ্বীপ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের কথা

Advertisement

প্রসেনজিৎ সাহা

ক্যানিং শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:১৩
Share:

এঁদের ভরসাতেই গেট-পাহারা। নিজস্ব চিত্র

ক্যানিং হাসপাতাল দক্ষিণ ২৪ পরগনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান। রোগীর চাপ যথেষ্ট বেশি। ক্যানিং মহকুমাই শুধু নয়, আশপাশের অন্যান্য ব্লকের মানুষও এই হাসপাতালের উপরে নির্ভর করেন। কিন্তু চিকিৎসক, নার্সের অভাব রয়েছে সব ক্ষেত্রে। নিরাপত্তারক্ষীও অপর্যাপ্ত বলে অভিযোগ।

Advertisement

ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে উন্নীত হয়েছিল এই হাসপাতাল। খাতায়-কলমে হাসপাতালের দায়িত্ব অনেক বাড়লেও পরিকাঠামো সে ভাবে গড়ে তোলা হয়নি। অবশ্য বছর দু’য়েক আগে মা ও শিশুদের জন্য ‘মাতৃমা’ চালু হওয়ায় কিছুটা সুরাহা হয়েছে। কিন্তু হাসপাতালের জরুরি বিভাগ সহ অন্যান্য বিভাগের পরিকাঠামো যথেষ্ট খারাপ। চিকিৎসক, নার্স সহ গ্রুপ-ডি, নিরাপত্তারক্ষী— সব বিভাগেই লোকজন অপর্যাপ্ত। হাসপাতাল সূত্রের খবর, যেখানে অন্তত ৮০ জন চিকিৎসক থাকার কথা, সেখানে বর্তমানে রয়েছেন ৩৯ জন। নার্স থাকার কথা প্রায় ৪৫০ জন, রয়েছেন মাত্র ১৫০ জন। ১০০ জন নিরাপত্তারক্ষী থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন মাত্র ৫০ জন। এ ছাড়া গ্রুপ ডি, স্ক্যাভেনজার প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম সংখ্যায় রয়েছেন।

জানা গেল, এই পরিস্থিতিতে পরিষেবা দেওয়ার জন্য অনেক সময়েই বাড়তি কাজ করতে হয় সকলকে। কিন্তু হাসপাতালে নার্সদের জন্য আলাদা কোনও বিশ্রামকক্ষ নেই। জরুরি বিভাগের চিকিৎসকদের জন্য একটি মাত্র বিশ্রাম কক্ষ। মহিলা ও পুরুষ চিকিৎসকদের আলাদা ঘর না থাকায় সমস্যা হয় বলে জানালেন মহিলাদের অনেকে।

Advertisement

এর উপরে রয়েছে রোগীর চাপ। হাসপাতালে ৪১৭টি শয্যা থাকলেও প্রায় দিনই পাঁচশোর বেশি রোগী ভর্তি থাকেন। ফলে কিছু রোগীকে মেঝেতে রাখতে হয়। অনেক সময়ে শয্যা না মেলায় রোগীর পরিজনেরা চিকিৎসক, নার্সদের উপরে চড়াও হন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নার্স বলেন, ‘‘হাসপাতালে রোগীদের চাপ প্রচুর। প্রায়ই বাড়তি কাজ করতে হয়। আমাদের জন্য কোনও বিশ্রামের ঘর নেই আলাদা করে। এর উপরে আবার রোগী ও তাঁদের পরিবারের চোখরাঙানি সহ্য করতে হয়।’’ এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘আউটডোরের পাশাপাশি জরুরি বিভাগেও প্রতি দিন প্রচুর মানুষ আসেন। পর্যাপ্ত পরিকাঠামো না থাকায় সমস্যা হয়। অনেক সময়ে রোগীর পরিবার চিকিৎসক, নার্সদের উপরে নিজেদের রাগ উগড়ে দেন। নিরাপত্তাহীনতায় আমরা সকলেই ভুগছি।’’

হাসপাতালের নিজস্ব নিরাপত্তা রক্ষী রয়েছেন দু’তিন জন। এ ছাড়া, ক্যানিং থানার দু’জন করে সিভিক ভলান্টিয়ার হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকেন। সকলেই থাকেন জরুরি বিভাগের গেটের সামনে। বাকি হাসপাতাল চত্বর কার্যত নিরাপত্তাহীন অবস্থায় থাকে। কয়েক দিন আগেও সন্ধ্যা নামলে হাসপাতাল চত্বর অন্ধকারে ঢেকে যেত। আর জি কর-কাণ্ডের পরে কিছু আলো লাগানো হয়েছে চারপাশে। এক নার্স বলেন, ‘‘আমাদের প্রতি দিন হাসপাতালের মূল ভবন ও মাতৃমার মধ্যে যাতায়াত করতে হয়। দু’টি ভবনের মধ্যে দূরত্ব প্রায় ৪০০ মিটার। আগে গোটা পথ ছিল অন্ধকার। সম্প্রতি আলো লাগানো হলেও এই পথে কোনও রক্ষী থাকেন না। ফলে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগি।’’ এক মহিলা চিকিৎসকের কথায়, ‘‘অনেক সময়ে গোলমাল বাধলে রোগীর পরিবারের লোকজন অশালীন ভাষায় কথা বলেন। ধাক্কাধাক্কির চেষ্টা হয়। পরে হয় তো পুলিশ আসে। কিন্তু প্রাথমিক ভাবে খুবই চাপে পড়ি। অসহায় লাগে।’’ আর এক মহিলা চিকিৎসক বলেন, ‘‘ওয়ার্ডের ভিতরে তবু ঠিক আছে। কিন্তু কোনও কারণে হাসপাতাল চত্বরের ভিতরে একটু এ দিক ও দিক গেলেই ভয় ভয় করে সন্ধের পরে। কাজের জায়গায় এমন কেন হবে!’’

সূত্রের খবর, সন্ধ্যা নামলেই হাসপাতাল চত্বরে মদ, গাঁজার আসর বসে। পুলিশকে বিষয়টি জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। হাসপাতাল সুপার পার্থসারথি কয়াল বলেন, ‘‘হাসপাতালের পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য ইতিমধ্যেই আবেদন জানানো হয়েছে। হাসপাতাল চত্বরে একটা পুলিশ ক্যাম্প করার বিষয়েও আবেদন করা হয়েছে। একটি ঘরও ওই ক্যাম্পের জন্য বরাদ্দ হয়েছে। দ্রুত তা চালু হবে বলে আশা করছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement