ভাঙছে সৈকত। এগিয়ে এসেছে সমুদ্র। জি-প্লটের গোবর্ধনপুর ও সীতারামপুর গ্রামে। নিজস্ব চিত্র
সমুদ্রের পাড়ে ও চরের উপরের দিকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকত ঝাউগাছের ঘন জঙ্গল। সমুদ্রের ঢেউ ও ঝাউবনের এই মনোরম পরিবেশে স্বাভাবিক ভাবেই একটি পিকনিক স্পট ধীরে ধীরে গড়ে উঠতে শুরু করেছিল সেখানে। লোকজন যেতেও শুরু করেছিলেন। কিন্তু পাথরপ্রতিমা জি প্লটের এ হেন পর্যটন কেন্দ্রটিকে সমুদ্রের ঢেউই ইদানীং তছনছ করে দিচ্ছে। জল ক্রমশ এগিয়ে আসছে পাড়ের দিকে। ভেঙে পড়ছে শয়ে শয়ে ঝাউগাছ। শৈশব অবস্থাতেই বিপন্ন হয়ে পড়ছে স্থানীয় পর্যটনশিল্প।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর সাতেক আগে গোবর্ধনপুর ও সীতারামপুর গ্রাম জুড়ে সমুদ্র-লাগোয়া পরিবেশে নতুন এই পিকনিক স্পটটি কাগজে-কলমে চালু হয়েছিল। রাতে থাকার ব্যবস্থা বলতে এখানে রয়েছে একটি ক্লাব। খাওয়ার ব্যবস্থাও সেখানেই। তবে অধিকাংশ পর্যটকই সাধারণত সারা দিন কাটিয়ে রাতে ফিরে যেতেন। এই ধরনের পর্যটকদের জন্য তৈরি করা হয়েছিল শৌচালয়। ছিল বসার জায়গা। পানীয় জলের ব্যবস্থাও হয়ে গিয়েছিল। পূর্ব মেদিনীপুরের অন্যতম জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট স্পট দিঘার পরিবেশের সঙ্গে জায়গাটির মিল থাকায় নতুন পর্যটন কেন্দ্রটি লোকমুখে ‘নিউ দিঘা’ নামেই পরিচিত হয়ে উঠছিল। সম্প্রতি হোয়াটসঅ্যাপ ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকায় স্পটটির পরিচিতিও ক্রমশ বাড়ছিল। ইদানীং কালে তো প্রায় সারা বছর ধরেই পর্যটকেরা নিউ দিঘায় যাচ্ছিলেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেল।
কিন্তু বিপদটা শুরু হল তিন বছর আগে। সমুদ্রের গতিপথ পাল্টে যাওয়ায় বছর তিনেক ধরে সমুদ্রের ঢেউয়ের তোড়ে পর্যটন এলাকার বাঁধ ক্রমশ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছিল। নষ্ট হচ্ছিল ঝাউগাছ। পঞ্চায়েত থেকে ভাঙন রোধের জন্য ইটের দেওয়াল তুলে দেওয়া হয়েছিল। সেটিও ঢেউয়ের তোড়ে ভেঙে গিয়েছে। এখন সমুদ্র ক্রমশ জনবসতির দিকে ধেয়ে আসছে। অথচ কয়েক মাস আগে পর্যটনকেন্দ্রটিকে সরকারি স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য জেলাশাসক এবং পর্যটন দফতরের আধিকারিকেরা ওই এলাকায় গিয়েছিলেন। জায়গাটিকে পুরোদস্তুর পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে— এই মর্মেই স্থানীয় বাসিন্দাদের তাঁরা আশ্বস্ত করে এসেছিলেন। এমনকী, পর্যটকদের থাকার জন্য বড় আবাসন তৈরি পরিকল্পনা কথাও জানিয়ে এসেছিলেন তাঁদের। সেটা আর এই পরিস্থিতিতে আদৌ করা যাবে কিনা, তা নিয়ে অবশ্য সংশয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে এখন তাঁদের অভিযোগটা অন্য। তাঁদের প্রশ্ন, পরিবেশ বাঁচাতে এখন যেখানে দিকে দিকে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে সেখানে সমুদ্রবাঁধ মেরামতির নামে এখানে শ’য়ে শ’য়ে ঝাউগাছ ধংস করা হচ্ছে কেন? সবুজ ধ্বংস হওয়ার ফলে তো পরিবেশও দূষিত হচ্ছে।
জি প্লটের বাসিন্দা পাথরপ্রতিমা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য স্বর্ণজিৎ বাগ জানান, ঢেউয়ের হাত থেকে পর্যটনস্থল ও ঝাউয়ের জঙ্গলকে বাঁচাতে সেচ দফতর এবং রাজ্য স্তরের সংশ্লিষ্ট সমস্ত দফতরে জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনও তরফেই কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে এর মধ্যে প্রায় ১০০ ফুট সৈকত ভেঙে এগিয়ে এসেছে সমুদ্র। জি প্লট পঞ্চায়েতের প্রধান অরুমিতা জানা বলেন, ‘‘আমরা পঞ্চায়েত তহবিলের টাকায় ঢেউ ঠেকাতে ইটের দেওয়াল তুলে দিয়েছিলাম। তাতেও সামলানো যাচ্ছে না। বাঁধ মেরামতির জন্য স্থানীয় বিধায়ককে এবং সেচ দফতরেও একাধিকবার জানানো হয়েছে।’’
পাথরপ্রতিমা ডিভিশনের সেচ দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, এলাকায় সমুদ্রবাঁধের সংস্কারের কাজ হচ্ছে। বর্ষার পুরোপুরি শেষ হলে পাকাপাকি ভাবে কাজ শুরু হবে।