বন্ধ হয়েছে এই সেফহোম।
পরিস্থিতি যে রাতারাতি বদলে যেতে পারে, বছরের শুরুতেই কোভিড ফের তার প্রমাণ রাখছে। সংক্রমণ কমলেও ঢিলে দিলেই সংক্রমণ যে বাড়তে পারে তার প্রমাণ মিলছে দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। সংক্রমণ একদিকে বাড়ছে, তেমনই কমেছে সুস্থতার হার। সব মিলিয়ে জেলায় অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
৩ জানুয়ারি জেলায় মোট অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৫১ জন। সে দিন সুস্থ হয়েছিলেন শতাধিক আক্রান্ত। ডিসেম্বরের শেষ তিন সপ্তাহ ধরেই সুস্থতার হার বেশি ছিল। আবার সংক্রমণও কমছিল। ফলে তিন সপ্তাহে অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা দেড় হাজার থেকে কমে ৫১-তে পৌঁছেছিল। আশা করা হয়েছিল কলকাতার পড়শি জেলাটি দ্রুতই করোনা শূন্য হবে।
কিন্তু, তার পর দিন থেকেই বাড়তে শুরু করল অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা। রবিবার জেলায় অ্যাক্টিভ করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬৪। এ দিন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন, ৪৩ জন। সুস্থ হয়েছেন মাত্র ২২ জন। বর্ষবরণের ভিড়েই নতুন করে সংক্রমণ ছড়িয়েছে কিনা, সেই প্রশ্ন উঠছে।
তবে সংক্রমণ আগের থেকে অনেকটা কমায় জেলার সেফ হোমগুলি একে একে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। রোগী ভর্তি না হওয়ায় ইতিমধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বেশ কয়েকটি সেফ হোম। গত জুলাই মাসে স্বাস্থ্য দফতর ঘোষণা করে, উপসর্গহীন রোগীরা বাড়ি থেকেই চিকিৎসা করাতে পারবেন। যাঁদের বাড়িতে আলাদা থাকার ঘর নেই, তাদের জন্য প্রশাসন সেফ হোম তৈরি করেছিল।
গত একমাস ধরে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় করোনা আক্রা ন্ত রোগীর হার অনেকটাই কম। আগের মতো সেফ হোম এবং কোভিড হাসপাতালগুলিতে করোনা আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছে না। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দক্ষিণ ২৪ পরগনা স্বাস্থ্য জেলার অধীনে ৮টি সেফ হোম তৈরি করা হয়েছিল। এর মধ্যে দু’টি কলকাতা পুর এলাকায়। বাকি ছ’টির মধ্যে বারুইপুর মহকুমায় ৩টি, ক্যানিং মহকুমায় একটি, আলিপুর সদরে দু’টি সেফ হোম চালু করা হয়েছিল।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যে ক্যানিং ২ ব্লকের ঝড়োরমোড়, ভাঙড় ২ ব্লকের ভোগালি সেফ হোম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন কেবলমাত্র গীতাঞ্জলি সেফ হোমে ১৭ জন করোনা আক্রান্ত রোগী ভর্তি রয়েছেন। বাকি সেফ হোমগুলিতে কোনও রোগী ভর্তি নেই। কেবলমাত্র গঙ্গাসাগর মেলা উপলক্ষে ওই সেফ হোমগুলি চালু রাখা হয়েছে। গঙ্গাসাগর মেলা মিটে গেলে পরিস্থিতি বিচার করে ওই সেফ হোমগুলিও বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে।
ক্যানিং স্টেডিয়ামে ৫৫ শয্যার কোভিড হাসপাতাল তৈরি করা হয়েছিল। গত এক সপ্তাহ ধরে সেখানে কোনও রোগী ভর্তি হননি। দিন কয়েক আগে এক মহিলা করোনা আক্রান্ত রোগী ভর্তি হন। ক্যানিং মহকুমায় দশজন করোনা আক্রান্ত রোগীর মধ্যে ৯ জন উপসর্গহীন রোগী নিজেদের বাড়িতে নিভৃতবাসে রয়েছেন।
জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, সেফ হোমগুলি চালাতে গিয়ে অতিরিক্ত চিকিৎসক, নার্স সহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের নিযুক্ত করতে হয়েছে। সে জন্য অন্যান্য চিকিৎসা পরিষেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। তা ছাড়া, সেফ হোমগুলি চালাতে গিয়ে অতিরিক্ত ব্যয়ভার বহন করতে হচ্ছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সোমনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, “দুটি সেফ হোম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বাকি সেফ হোমগুলির বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। তবে কোভিড হাসপাতালগুলি বন্ধ করার কোনও পরিকল্পনা নেই।”