দিনের বেলায় আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হুমকি আর রাতের অন্ধকারে মুখ-ঢাকা মোটর সাইকেল বাহিনীর দাপিয়ে বেড়ানো। শুরু হয়েছে সন্দেশখালির গ্রামে। মুখ-ঢাকাকে স্থানীয় মানুষ বলেন ‘ডাব’ বাঁধা। হাতে রিভলভার, মুখে ‘ডাব’ দুষ্কৃতীরা হুমকি দিচ্ছে— পঞ্চায়েত ভোটের ক’টা দিন ঘরে থেকো। নয় তো দুঃখ আছে কপালে!
আসলে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া থেকে বিরত করার উদ্দেশ্যেই শাসকদল দুষ্কৃতীদের দিয়ে চমকে–ধমকে, বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর করে, রিভলভার দেখিয়ে হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের। তবে এমন অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি তৃণমূলের।
সম্প্রতি হাড়োয়ার গোপালপুর এবং সন্দেশখালির কোড়াকাটি ও মনিপুর গ্রামে বিজেপি নেতানেত্রীর বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। বোমা মারা এবং মাথায় রিভলভার ধরে ভোটে না দাঁড়ানোর জন্য হুমকি দেয় দুষ্কৃতীরা। অভিযোগ, সোমবার রাত থেকে সন্দেশখালির খুলনা এলাকায় একদল দুষ্কৃতী তাণ্ডব চালাচ্ছে। দিনের বেলায় বিভিন্ন নদীর ফেরিঘাটে পাহারা দিচ্ছে তারা। যাতে এলাকার কেউ মনোনয়নপত্র জমা দিতে নদী পেরিয়ে বিডিওর দফতরে যেতে না পারেন। পুলিশের কাছে করা অভিযোগে খুলনার বিজেপি নেতা স্বপন রায় জানান, ‘‘রাতে ২০-২৫টা মোটর সাইকেলে আসা মুখ বাঁধা দুষ্কৃতীরা বোমা-গুলি ছুড়ে প্রথমে গ্রামের মানুষকে সন্ত্রস্ত করে। পরে বেছে বেছে বিজেপি সমর্থকদের বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর, মারধর চালায়। বিডিওর দফতরের দিকে যেতে দেখলে তার পরিণাম ভয়ঙ্কর হবে বলেও হুমকি দেয়।’’ স্বপনবাবুর কথায়, কেবল তাঁর বাড়িই নয়, এ দিন রাতে দুষ্কৃতীরা শিতলিয়ার গোলাবাড়িতে আরও অনেকের বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর চালায়।
শুধু বিজেপিই নয়। সোমবার রাতে দুষ্কৃতীদের দলটি সিপিএম নেতা-কর্মীদেরও হুমকি দেয় বলে অভিযোগ। খুলনা এলাকার সিপিএমের যুব নেতা বিমান বর্মনকে প্রচণ্ড মারধর করা হয়। তাঁর মাথায় রিভলভার ঠেকিয়ে গ্রাম ছাড়ার ফতোয়া জারি করা হয়। সেই কথা মতো মঙ্গলবার ভোরেই গ্রাম ছাড়ছিলেন বিমানবাবু। তা দেখে ফের তাঁর উপর চড়াও হয় দুষ্কৃতীরা। দ্বিতীয় দফায় মারধর করে তাঁকে বলা হয়, গ্রাম ছাড়তে হবে না, মনোনয়নপত্র জমা না দিতে গেলেই চলবে। সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃণাল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘শাসকদলের আশ্রিত দুষ্কৃতীরা চাইছে বিরোধীরা যেন কোনও ভাবেই মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পারেন। সে জন্য সন্দেশখালি-১ ও ২ ব্লকের বিডিওর দফতরের কাছে পাহারা দিচ্ছে তারা।’’ তিনি আরও বলেন, খুলনার বাসিন্দা বিলাস বর্মনকেও মারধর করা হয়। তাঁর স্ত্রীকে গ্রাম ছাড়ার হুমকিও দেওয়া হয়। নয় তো খুন করা হবে বলে শাসানো হয়। তাঁরা ভয়ে গ্রাম ছাড়তে গেলে ফের আর এক দফা মারধর করা হয় তাঁদেরও। কেড়ে নেওয়া হয় মোবাইল। পুলিশ গিয়ে বিলাসকে উদ্ধার করে। বর্মন-দম্পতি এখন কলকাতায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
এ দিন বসিরহাটের মহকুমা শাসকের দফতরে জেলা পরিষদের ৫টি আসনে প্রার্থীর মনোনয়ন জমা দিয়ে বিজেপির বসিরহাট জেলার সভাপতি হাজারিলাল সরকার বলেন, ‘‘আমাদের দলের নেতা কেশব কয়াল সন্দেশখালির ন্যাজাট বিডিওর দফতরে মনোনয়ন জমা দিতে গেলে শাসক দলের দুষ্কৃতীরা তাঁকে মারতে মারতে তুলে নিয়ে যায়। তাঁর মোবাইল কেড়ে নিয়ে মনোনয়ন ছিঁড়ে দেওয়া হয়।’’ বিজেপি নেতার দাবি, বিরোধীরা যাতে মনোনয়ন জমা দিতে না পারেন সে জন্য সন্দেশখালি-১ ও ২, হাড়োয়া, মিনাখাঁ, হিঙ্গলগঞ্জ এবং হাসনাবাদের ভবানীপুর এলাকায় তাণ্ডব শুরু করেছে শাসকদলের দুষ্কৃতীরা।
সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূলের বসিরহাট লোকসভার কনভেনার বাবু মাস্টার বলেন, ‘‘আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নতির জোয়ারে সকলেই ভেসে গিয়েছে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে দাঁড় করানোর মতো প্রার্থীই তাই জোগাড় করে উঠতে পারছে না বিরোধীরা। প্রার্থী না পেয়ে মিথ্যা প্রচার শুরু করেছে তারা। আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনেই মানুষ এর যথাযথ উত্তর দেবেন।’’