গোলাপের পসরা কামারপুকুর চটিতে। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ
কোভিডহীন সময়ে প্রেম দিবসের আগে চনমনে গোলাপ ফুলের ব্যবসা। খোলা বাজারেরব্যবসায়ীরা গত সাত-আট দিন ধরেই ফুল সংগ্রহ করে ফেলেছেন। সবার লক্ষ্য আজ, মঙ্গলবার ভালবাসার দিনটি। যদিও চাষিদের দাবি, তাঁরা লাভের মুখ সে ভাবে দেখতে পাচ্ছেন না।
গত দু’বছর লকডাউন-সহ অতিমারির ফাঁসে ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রেম দিবসে গোলাপের চাহিদা তেমন ভাবে তৈরি হতে পারেনি। সেই সময়ে যে সব জিনিস ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল, তার মধ্যে ছিল ফুলও। ফলে মন্দিরেওকমেছিল ফুলের ব্যবহার। চাষিরা জানাচ্ছেন, গত বছর থেকে ভালবাসার দিনে গোলাপের চাহিদা ফেরতৈরি হয়েছে। এ বছর কোভিডমুক্ত হওয়ায় সেই চাহিদাই শীর্ষে উঠেছে। তার জেরে খোলা বাজারে এরাজ্যের লাল, হলুদ, সাদা গোলাপের দাম ঊর্ধ্বমুখী। যদিও ফুলচাষিরা লাভের মুখ দেখছেন না বলে দাবি। তাঁরা জানান, কোভিড আসার আগে পর্যন্ত ১৪ ফেব্রুয়ারি রাজ্যে এক কোটি গোলাপের চাহিদা তৈরি হয়। গত দু’বছর সেই চাহিদা অনেক কম ছিল।
‘সারা বাংলা ফুলচাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক নারায়ণচন্দ্র নায়েক জানান, সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত চাহিদার পঞ্চাশ শতাংশের কাছাকাছি গোলাপ পাইকারি ও খোলা বাজার পৌঁছে গিয়েছে। আজ, সেই চাহিদা আরও বাড়বে বলেই জানান নারায়ণবাবু। তিনি বলেন, ‘‘দু’বছর গোলাপ ব্যবসা মার খাওয়ার পরে এ বার চাষিরা গোলাপ চাষে মরিয়া ছিলেন। অফুরন্ত চাহিদা মেটাতে সরবরাহের হারও যথেষ্ট। মুশকিল হল প্রেম দিবসের আগে অনেক কম টাকায় পাইকারি এবং খোলা বাজারের ব্যবসায়ীরা চাষির থেকে ফুল কিনে হিমঘরে রেখে দিয়েছেন। প্রেম দিবস তো বটেই, তার আগে থেকেই সেই সব ফুল চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু চাষির অবস্থা সেই তিমিরেই রয়েছে।’’
এ রাজ্যে ফুলচাষিদের জন্য হিমঘর না থাকার অভাব দীর্ঘদিনের। চাষিরা জানান, সাত-আট দিন আগে থেকেই কলকাতা-সহ শহরতলি এবং বিভিন্ন জেলায় গোলাপের চাহিদা তৈরি হয়েছে। কিন্তু হিমঘরের সুবিধা না থাকায় প্রতিটি গোলাপ ১ টাকাতেও বিক্রি করেছেন তাঁরা। কলকাতার মল্লিকঘাট বাজারের ফুলচাষি গৌরীশঙ্কর ঘাঁটার কথায়, ‘‘১৪ ফেব্রুয়ারির ৪৮ ঘণ্টা আগেই গোলাপের প্রতি দাম ১০ টাকায় উঠেছে। আজ, মঙ্গলবার তা ১৫ টাকায় পৌঁছবে। অর্থাৎ, ১ টাকায় ফুল কিনে ১৪ টাকা অবধি লাভ করার সুযোগ রয়েছে ব্যবসায়ীদের। কিন্তু হিমঘরের মতো পরিকাঠামোর অভাবে চাষিদের অতিরিক্ত লাভের সুযোগ নেই।’’
চাষিরা জানাচ্ছেন, তবু তাঁদের কাছে স্বস্তির এটাই যে প্রেম দিবসে বাজারে ফুলের চাহিদা বেড়েছে। গত দু’বছর যে ভাবে ব্যবসা মার খেয়েছিল, এ বছর তার চেয়ে পরিস্থিতি অনেকটাই ফিরেছে।