আলোহীন রাস্তায় আনাগোনা নম্বরপ্লেটহীন মোটর বাইকের

অন্ধকার ঘুটঘুটে রাস্তা, সুনসান। দু’দিকে বিশাল বিশাল গাছ। থমথমে পরিবেশ। তারই মধ্যে দিয়ে কেউ চলেছেন সাইকেল নিয়ে। কেউ গুটগুট করে হাঁটছেন। আলো বলতে ধেয়ে আসা গাড়ির হেডলাইটটুকুই।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

বাগদা শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৬ ০২:৩৫
Share:

ভুতুড়ে পথ। নির্মাল্য প্রামাণিকের তোলা ছবি।

অন্ধকার ঘুটঘুটে রাস্তা, সুনসান। দু’দিকে বিশাল বিশাল গাছ। থমথমে পরিবেশ। তারই মধ্যে দিয়ে কেউ চলেছেন সাইকেল নিয়ে। কেউ গুটগুট করে হাঁটছেন। আলো বলতে ধেয়ে আসা গাড়ির হেডলাইটটুকুই।

Advertisement

রাতের বনগাঁ-বাগদা সড়কের পরিস্থিতি এমনই। রাস্তায় আলো না থাকায় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার আশঙ্কা। সীমান্ত এলাকা হওয়ায় রাতে ওই সড়কে দুষ্কৃতীদের আনাগোনাও চলে। পাচারকারীদের ঘোরাফেরাও চোখে পড়ে বলে জানালেন স্থানীয় মানুষজন। পুলিশের দেখা মেলে না বললেই চলে, এমনই অভিজ্ঞতা রাস্তার দু’পাশের বসত এলাকার মানুষের। নম্বরপ্লেটহীন মোটরবাইক, ‘প্রেস’ লেখা উটকো গাড়িও যাতায়াত করে।

বনগাঁ থেকে বয়রা পর্যন্ত ওই সড়কের দূরত্ব প্রায় ৩৩ কিলোমিটার। রাস্তার হাল খতিয়ে দেখতে চিত্র সাংবাদিক নির্মাল্য প্রামাণিককে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম ওই রাস্তা ধরে।

Advertisement

রাত ১টা নাগাদ বাগদা বাজারে দেখা গেল, একটি পুলিশের গাড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে। চালকের পাশে বসে ঢুলছেন এক পুলিশ কর্মী। পাশ দিয়ে নম্বরপ্লেটহীন মোটরবাইকে দুই যুবক হুঁশ করে চলে গেল। কেউ নজর করার নেই। এই চত্বরেই বিডিও অফিস, বাগদা ব্লক গ্রামীণ হাসপাতাল-সহ বিভিন্ন প্রশাসনিক দফতর। সেখানেও নিরাপত্তা বলে কিছু নেই।

বনগাঁর দিকে আসার পথে হেলেঞ্চা বাজারের আইল্যান্ডের উপরে দেখা গেল আলো জ্বলছে। কিছু সিভিক ভলান্টিয়ার একটি বন্ধ দোকানের বারান্দায় বসে। কয়েকজন যাত্রীশেডের তলায় গুলতানি করছেন। বাজারের বেশির ভাগ অংশ অন্ধকারে ডুবে। তিনটি এটিএমের একটিতে রক্ষীকে দেখা গেলেও বাকি দু’টি খালি।

এ বার এলাম আষাঢ়়ু বাজারে। ঘড়ির কাঁটায় রাত প্রায় দেড়টা। চারজন সিভিক ভলান্টিয়ার ঘুরছিলেন রাস্তায়। গাড়ি দেখে তাঁরা এগিয়ে এলেন। পরিচয় দেওয়ার পরে আর কোনও প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হল না। খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে অন্য কোনও গাড়িতে তল্লাশি চালাতে দেখা গেল না।

বোচাখালি, পাটশিমূলিয়া, বাজারেও দেখা গেল কোনও আলো নেই। গা ছমছমে পরিবেশ। দোকানপাট বন্ধ। নৈশ প্রহরী পর্যন্ত চোখে পড়ল না। দু’একটি শিয়াল চকিতে লেজ দেখিয়ে সটকে পড়ল। কলমবাগান বাজারে আগে চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে বলে বাসিন্দারা জানিয়েছেন। কিন্তু তার পরেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে ভাবার কেউ নেই।

গাঁড়াপোতা বাজারের প্রাচীন কালীমন্দিরের সামনে রাস্তায় গার্ডরেল ফেলে রাখা হয়েছে। সিভিক ভলান্টিয়ার ও কনস্টেবল রয়েছে। ওই এলাকায় দুষ্কৃতীদের আনাগোনাও থাকে বলে জানা গেল। অতীতে খুন-অপহরণের মতো ঘটনাও ঘটেছে। তবে নিরাপত্তা জোরদার নয় বলেই এলাকার ব্যবসায়ীদের অভিযোগ। অথচ, গাঁড়াপোতা বাজার ব্যবসায়ীক কেন্দ্র হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ।

গোবরাপুর, চাঁদা, ঘাটবাওর, পাইকপাড়া বাজার পেরিয়ে ঢুকে পড়লাম বনগাঁর মতিগঞ্জ এলাকায়। এখানে কোথাও পুলিশ বা সিভিক ভলান্টিয়ার্স চোখে পড়েনি। পাইকপাড়া থেকে মতিগঞ্জ পর্যন্ত রাস্তার দু’ধারে আলো আছে। আবার রাস্তার দু’ধার দখল করে দাঁড়িয়ে রয়েছে সারি সারি ট্রাক।

বনগাঁ-বাগদা সড়কটি বনগাঁ ও বাগদা দু’টি থানার মধ্যে পড়ে। বিধানসভাও দু’টি। বনগাঁ উত্তর ও বাগদা। বাগদার বিধায়ক কংগ্রেসের দুলালচন্দ্র বর বলেন, ‘‘আমার বিধায়ক তহবিলের টাকায় ওই সড়কের বাজার এলাকাগুলিতে আলোর ব্যবস্থা করব। আর সড়কে সর্বত্র আলো বসানোর জন্য রাজ্য সরকারের কাছে শীঘ্রই আবেদন করছি।’’ দুলালবাবু জানান, বাগদা ব্লকের জনসংখ্যা প্রায় ৩ লক্ষ। সেই তুলনায় স্থানীয় থানায় পুলিশ কর্মীর সংখ্যা খুবই কম। ফলে সিভিক ভলান্টিয়ারদের দিয়ে অনেক কাজ সামলাতে হয়। পরিকাঠামোর অভাবে পুলিশ সড়কে টহল দিতে পারে না। থানায় পুলিশ কর্মী বাড়ানোর জন্য রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করা হবে। বিএসএসফও যাতে রাতের সড়কে টহল দেয়, সে জন্য তিনি বিএসএসএফ কর্তাদের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন।

ওই সড়কের কিছুটা অংশ পড়ে বনগাঁ উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে। ওই কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই স্থানীয় পাইকপাড়া ও চাঁদা বাজারে বিধায়ক তহবিলের টাকায় হাইমাস্ক টাওয়ার (আধুনিক আলো) বসানো হয়েছে। আমার এলাকার মধ্যে সড়কের বাকি অংশেও আলো বসানো হবে।’’

কিন্তু নিরাপত্তা বাড়বে কি রাতের রাস্তায়? বনগাঁর এসডিপিও অনিল রায় বলেন, ‘‘বনগাঁ-বাগদা সড়কের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। রাতে পুলিশি টহল বাড়ানো হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement