তরণীপুরে নদী থেকে তোলা হচ্ছে কচুরিপানা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
দীর্ঘ অপেক্ষার পরে আবার শুরু হল ইছামতী নদী সংস্কারের কাজ। রবিবার সকালে গাইঘাটার বেড়ি গোপালপুর এলাকায় নদী সংস্কারের কাজের সূচনা করেন বনগাঁর সাংসদ তথা কেন্দ্রের বন্দর জাহাজ ও জলপথ দফতরের প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। নদী সংস্কারের কাজ করছে কেন্দ্রের ইনল্যান্ড ওয়াটারওয়েজ় অথরিটি অব ইন্ডিয়া (আইডব্লুআই)। শান্তনু ছাড়াও এ দিন উপস্থিত ছিলেন অথরিটির চেয়ারম্যান সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়।
সংস্কারের অভাবে স্রোত ও নাব্যতা হারিয়ে মৃতপ্রায় ইছামতী। বনগাঁ মহকুমা এলাকায় বছরের বেশিরভাগ সময়ে নদী কচুরিপানা ভরা থাকে। নদীকেন্দ্রিক জীবিকা হারিয়েছেন অনেক মানুষ। কচুরিপানার কারণে স্নান করাও বন্ধ করে দিয়েছেন অনেকে। দীর্ঘ দিন ধরে নদীর পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছেন নদী পাড়ের বাসিন্দারা।
আইডব্লুআই সূত্রে জানানো হয়েছে, এই পর্যায়ে গাইঘাটার কালাঞ্চি থেকে স্বরূপনগরের তেঁতুলিয়া পর্যন্ত ২৩.৮১ কিলোমিটার নদীপথের সংস্কার করা হবে। সেই কাজ রবিবার থেকে শুরু হয়েছে। প্রথমে নদী থেকে কচুরিপানা তোলা হবে। তারপরে নদীর গভীরতা মাপজোক করে যন্ত্রের মাধ্যমে পলি তোলা হবে।
কিন্তু নদীর বাকি অংশের সংস্কারের কী হবে?
শান্তনু বলেন, “কালাঞ্চির পর থেকে নদীর প্রায় ১০ কিলোমিটার অংশ ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী সীমান্তে পড়ে। ওই অংশের সংস্কার করতে হলে বাংলাদেশ সরকারের সবুজ সঙ্কেত প্রয়োজন। বাংলাদেশ সরকারকে জানানো হয়েছে। আশা করছি ছাড়পত্র মিলবে। তখন আমরা নদীর ওই অংশটিকে ‘জাতীয় জলপথ ৪৪’-এর মধ্যে অনুভক্ত করে সংস্কারের কাজ শুরু করতে পারব।” কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর আশা, ইছামতী সংস্কারের কাজ শেষ হলে জলপথে বাংলাদেশের যশোর, বরিশাল, খুলনা-সহ বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্যের সম্ভাবনা রয়েছে। ইছামতীর সংস্কারে রাজ্য সরকারকেও সহযোগিতার হাত বাড়ানোর আবেদন করেন তিনি।
খাতায়-কলমে নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের পাবাখালি এলাকায় চূর্ণী ও মাথাভাঙা নদীর সংযোগস্থলে মাথাভাঙা নদী থেকে ইছামতীর সৃষ্টি। যদিও নদীর এখন কার্যত কোনও উৎসমুখ নেই। যুক্তিবাদী মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ সরকার বলেন, “গাইঘাটায় নদী সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু আমাদের দাবি, নদীর উৎসমুখ সংস্কার করতে হবে। ১৯১০ সাল নাগাদ পাবখালিতে ইছামতীর উপরে রেলসেতু তৈরি হয়েছিল। সে সময়ে সেখানে বড় বড় বোল্ডার ফেলা হয়। যা আর তোলা হয়নি। জলের চাপ সামলাতে দেওয়া হয়েছিল গার্ডওয়াল। এর ফলে ধীরে ধীরে নদীবক্ষে পলি জমতে থাকে।”
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, অতীতে বিক্ষিপ্ত ভাবে কেন্দ্র ও রাজ্যের পক্ষ থেকে কয়েক বার পলি তুলে নদী সংস্কারের কাজ হয়েছিল। কিন্তু ইছামতীর হাল ফেরেনি। বাম আমলে বেড়ি গোপালপুর এলাকায় নদী সংস্কার করা হয়েছিল। অভিযোগ উঠেছিল, নদী থেকে তোলা পলি পাড়েই রাখা হয়। বৃষ্টিতে সেই পলি ফের নদীতে মিশে যায়।
রবিবার সংস্কারে কাজ দেখতে এসেছিলেন গ্রামবাসীরা। তাঁরা জানান, নদী মরে যাওয়ায় চাষাবাদ প্রায় বন্ধ। নদী সংস্কার হলে আবার চাষ শুরু হবে বলে আশা তাঁদের।
এ দিনের সংস্কার কাজের সূচনা অনুষ্ঠানে রাজ্যের কোনও প্রতিনিধি বা তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিদের দেখা যায়নি। তা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে শান্তনু বলেন, “সকলকে চিঠি দিয়ে আমন্ত্রণ করা হয়েছিল। তাঁরা কেন আসেননি, বলতে পারব না।” তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “গত চার বছর শান্তনুকে দেখা যায়নি। এখন মানুষের চোখে ধুলো দিতে নদী সংস্কারের নাটক করছেন। নদী সংস্কারের বিস্তারিত তথ্য জনসমক্ষে আনা হোক।”
ইছামতীর উপরে বেড়ি গোপালপুর ও তরণীপুরের সংযোগকারী একটি সেতু নির্মাণের দাবি দীর্ঘ দিনের। শান্তনু বলেন, “সেতু করতে হলে জমি অধিগ্রহণ প্রয়োজন। আইডব্লুআই-এর চেয়ারম্যান রাজ্য সরকারকে চিঠি দিয়ে আবেদন করেছেন, জমি অধিগ্রহণ করে দিতে। জমি পাওয়া গেলে আমরা টাকা দিয়ে সেতু করে দেব।”