habra

করোনা আক্রান্তদের পাশে দাঁড়াতে রেড ভলান্টিয়ার দল গড়ল সিপিএম

হাবড়া শহর এরিয়া কমিটির পক্ষ থেকে শহরের করোনা আক্রান্তদের সাহায্য করতে বাছাই করা কয়েকজনকে নিতে তৈরি হয়েছে ‘রেড ভলান্টিয়ার’ নামে একটি বাহিনী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

হাবড়া শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০১:৪১
Share:

এলাকা স্যানিটাইজ় করছে সিপিএম। ছবি: সুজিত দুয়ারি

করোনা আক্রান্ত ও তাঁদের পরিবারের উপরে পাড়া-পড়শিরা নানা ভাবে চাপ তৈরি করছেন বলে অভিযোগ উঠছে বিভিন্ন জায়গা থেকেই। আক্রান্ত হয়ে বাড়িতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অনেক ক্ষেত্রেই ওষুধ, পানীয়জল, খাদ্যসামগ্রী পেতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে অনেককে। সামাজিক বয়কটের শিকারও হচ্ছেন কেউ কেউ। আক্রান্তদের হাসপাতালে যেতে গিয়েও দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হচ্ছে। এ বার করোনা আক্রান্ত ও তাঁদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে সব রকমের সহযোগিতা করতে স্বেচ্ছাসেবক দল তৈরি করল সিপিএম। হাবড়া শহর এরিয়া কমিটির পক্ষ থেকে শহরের করোনা আক্রান্তদের সাহায্য করতে বাছাই করা কয়েকজনকে নিতে তৈরি হয়েছে ‘রেড ভলান্টিয়ার’ নামে একটি বাহিনী।
ওই দলের সদস্যেরা ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছেন। সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, দিন কয়েক আগে দলের তরফে হাবড়ায় অ্যান্টিবডি পরীক্ষা হয়েছিল। তাতে ১৭ জনের রক্তে অ্যান্টিবডি পজ়িটিভ বেরোয়। সিপিএমের হাবড়া এরিয়া কমিটির সম্পাদক আশুতোষ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘ওই ১৭ জন-সহ মূলত ছাত্র-যুবদের নিয়ে রেড ভলান্টিয়ার নামে ৫০ জনের স্বেচ্ছাসেবক দল তৈরি করা হয়েছে। হাবড়া শহরে করোনায় আক্রান্ত যে কোনও মানুষকে আমরা ধরনের সাহায্য করছি। স্বেচ্ছাসেবক দলে যুক্ত হতে চেয়ে অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করছেন। ভবিষ্যতে আমরা সদস্য সংখ্যা বাড়াব।’’ যে কোনও আগ্রহী ব্যক্তি দলে আসতে পারেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
শনিবার থেকে রেড ভলান্টিয়ার দলের সদস্যেরা একটি কর্মসূচি পালন শুরু করেছেন। এই কর্মসূচি চলবে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এই কর্মসূচির মধ্যে সদস্যেরা হাবড়া শহরের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ জনবসতিপূর্ণ এলাকা জীবাণুমুক্ত করার কাজ করছেন। শনিবার হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতাল চত্বর, হাবড়া বাজার, হাবড়া স্টেশন চত্বর-সহ কয়েকটি এলাকা জীবাণুমুক্ত করা হয়েছে। শুক্রবার করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত একজনের দেহ প্রায় ১১ ঘণ্টা হাসপাতাল চত্বরে পড়ে ছিল। অভিযোগ, ওই এলাকা জীবাণুমুক্ত করা হয়নি। রেড ভলান্টিয়ারের সদস্যেরা মাস্ক, হেডশিল্ড, গ্লাভস পড়ে এ দিন এলাকা জীবাণুমুক্ত করার কাজ করেছেন। হাবড়া পুরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে এবং করোনা আক্রান্তেরা সুস্থ হয়ে গেলে তাঁদের বাড়ি জীবাণুমুক্ত করবেন সদস্যেরা।
কী ভাবে কাজ করছে টিম রেড ভলান্টিয়ার?
সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ফোন নম্বর দিয়ে প্রচার করা হচ্ছে, দিন হোক বা রাত— যখনই কোনও প্রয়োজন হবে আক্রান্ত বা তাঁদের বাড়ির লোকজন যেন রেড ভলান্টিয়ারদের ফোন করেন। পাশাপাশি শহরে কেউ করোনায় আক্রান্ত হলে সদস্যেরা সেখানে যাবেন যাবতীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে। ভরসা দিয়ে বলা হচ্ছে, যে কোনও প্রয়োজনে রেড ভলান্টিয়াররা তাঁদের পাশে রয়েছেন। পরিবারের লোকজনের কাছে ফোন নম্বর দিয়ে আসা হচ্ছে।
রেড ভলান্টিয়াররা এলাকার মানুষের মধ্যে করোনা এবং ডেঙ্গি নিয়ে সচেতনতার বার্তাও দিচ্ছেন। গত কয়েক বছর ধরে হাবড়ায় ডেঙ্গির প্রকোপ ছড়িয়েছিল। তাই ডেঙ্গি সম্পর্কে মানুষকে বোঝানোর দায়িত্ব নিয়েছেন এঁরা। বোঝানো হচ্ছে, জ্বর, সর্দি-কাশি শ্বাসকষ্ট এমন উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে গিয়ে করোনা পরীক্ষা করাতে। প্রয়োজনে রেড ভলান্টিয়াররা সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার করোনা আক্রান্ত এক ব্যক্তি হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা করাতে যেতে সমস্যায় পড়েছিলেন। আশুতোষ সে কথা জানতে পেরে তাঁকে হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন সঙ্গে করে। র্যা পিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করিয়ে তাঁকে বাড়িতে পৌঁছে দেন। আশুতোষ বলেন, ‘‘করোনা নিয়ে সরকারের চেতনা এবং মানুষের সচেতনতা বাড়াতে আমরা কাজ করছি।’’
এ দিকে, হাবড়া শহরে লাফিয়ে বাড়ছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। পুরপ্রশাসক নীলিমেশ দাস বলেন, ‘‘শুক্রবার পর্যন্ত শহরে আক্রান্তের সংখ্যা ৪৮৩ জন। সুস্থ হয়েছেন ৩৮১ জন। অ্যাক্টিভ রোগী ৯১ জন। মারা গিয়েছেন ১১ জন। পুরসভার তরফে আক্রান্তদের চিকিৎসার সব ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’
সিপিএমের পদক্ষেপের বিষয়ে নীলিশেষ বলেন, ‘‘রাজনৈতিক স্বার্থ না দেখে যদি ওঁরা করোনা আক্রান্তদের জন্য কাজ করেন, তা হলে আমরা সাধুবাদ জানাচ্ছি।’’ এ দিকে, রেড ভলান্টিয়ারদের জন্য শহরবাসী ভরসা পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। অনেকেরই জানালেন, বিপদে পড়ে দ্রুত সাহায্য পাওয়া যাবে জেনে আশ্বস্ত লাগছে।

Advertisement

(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।

• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement