Crime against Woman

কৈশোরে বাবা-মায়ের সঙ্গে মানসিক দূরত্ব বাড়ায় পাচার বাড়ছে

সুন্দরবনের মেয়েদের ক্ষেত্রে পাচার পুরনো সমস্যা। কাজের টোপ দিয়ে, প্রেমের ফাঁদে ফেলে হামেশাই ভিন্‌ রাজ্যে বিক্রি করে দেওয়া হয় অল্পবয়সি মেয়েদের। সেখান থেকে কেউ কেউ উদ্ধার পায়, কেউ তলিয়ে যায় অন্ধকার জগতে। ফিরে আসে যারা, সমাজের মূল স্রোতে ফিরতে তাদেরও লেগে যায় বহু বছর। পাচার বিরোধী দিবসে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখল আনন্দবাজার।

Advertisement

নবেন্দু ঘোষ 

হাসনাবাদ শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২৩ ০৯:২৯
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

এলাকায় কাজের অভাব, অভিভাবকদের সঙ্গে মানসিক দূরত্ব-সহ বিভিন্ন কারণে ক্রমশ বেড়ে চলেছে মানব পাচার। সম্প্রতি মানব পাচার নিয়ে দুই ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকা জুড়ে সমীক্ষা চালায় একটি বেসরকারি সংস্থা। বসিরহাট, বনগাঁ, ক্যানিং-সহ বিভিন্ন মহকুমায় করা সেই সেই সমীক্ষাতেই উঠে এসেছে পাচারের নানা কারণ।

Advertisement

সংগঠন সূত্রের খবর, দুই জেলার প্রশাসনের বিভিন্ন পদাধিকারী, পঞ্চায়েতের সদস্য, সমাজের বিভিন্ন পেশার মানুষ, স্কুলের ছাত্রছাত্রী, যুব সমাজের সঙ্গে কথা বলেন সমীক্ষকেরা। সংগঠনের তরফে শম্ভু চন্দ জানান, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, বয়ঃসন্ধির সময়ে পরিবারের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্তির পথ খোঁজে মেয়েরা। অনেক অভিভাবকই এই সময়ে মেয়েদের ঠিক মতো নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। তৈরি হয় মানসিক দূরত্ব। সে সময়ে কোনও যুবকের সঙ্গে পরিচয় হলে তা মেয়েটি গোপন রাখে পরিবারের কাছে। পরিবারের থেকে সেই যুবককে বেশি ভরসা করতে শুরু করে সে। তার জেরে আবেগের বশে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে পাচারের শিকার হয় বহু মেয়ে। পাচার হয়ে যাওয়ার পরে হুঁশ ফেরে। নাবালিকাদের পাশাপাশি অনেক সাবালিকাও এই ভুল করে পাচারের শিকার হয়।

এলাকায় কাজের সুযোগ কম থাকার ফলে কাজের টোপ দিয়ে ভিন্ রাজ্যে বা বিদেশে নিয়ে গিয়ে পাচার করা হয়। কাজের টোপ দিয়ে অনেক সময় ভিন্ রাজ্যে নিয়ে গিয়ে দেহ ব্যবসায় নামানো হয় মেয়েদের। শম্ভু বলেন, “রাজ্যের বাইরে পাচার হলে, থানায় অভিযোগ করে খুব লাভ হয় না। ফলে নানা কারণে পাচার হওয়া মেয়েটিকে উদ্ধার করা যায় না।”

Advertisement

সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, সন্দেশখালি, হিঙ্গলগঞ্জ, বাগদা এলাকায় আদিবাসী সমাজের মানুষদের মধ্যে পাচারের ঘটনা তেমন ঘটে না। সমীক্ষকেরা জানান, এই সমাজের মানুষ অনেক বেশি গোষ্ঠীবদ্ধ ভাবে থাকেন। সামাজিক মেলামেশা অনেক বেশি। বাইরে গেলেও দলবদ্ধ ভাবে যান। ফলে পাচারের ঘটনা তেমন দেখা যায় না।

প্রাকৃতিক বিপর্যয় সুন্দরবন এলাকার মানুষকে আর্থিক ভাবে ক্ষতির মুখে ফেলেছে। কাজের খোঁজে ভিন্‌ রাজ্যে চলে যায় অনেকে। সেই সব মেয়েরা বাইরে গিয়ে কেমন আছেন, তা খোঁজ রাখার কোনও ব্যবস্থা পুলিশ-প্রশাসনের কোনও স্তরে নেই। পাচারকারীরা এর সুবিধা নেয় বলে জানা যাচ্ছে।

পাচার হওয়া মহিলাদের নিয়ে দীর্ঘ দিন কাজ করা এবং এই সমীক্ষার সঙ্গে যুক্ত সাকিলা খাতুন বলেন, “মহিলা ছাড়াও বর্তমানে রূপান্তরকামী বা বৃহন্নলাদের পাচার করে যৌনপল্লিতে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা বেড়েছে। প্রশাসন শুধু অনুষ্ঠান করে পাচার বা নাবালিকার বিয়ে নিয়ে সচেতন করে। কিন্তু শুধু এ ভাবে সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।” পঞ্চায়েতস্তর থেকে রাজ্যস্তর পর্যন্ত কী কী করা উচিত, তা প্রশাসনের কাছে তুলে ধরা হয়েছে বলে জানান তিনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement