অবরোধ: ভাঙড়ের শ্যামনগরে জমি কমিটির কর্মসূচি। অবরুদ্ধ লাউহাটি-হাড়োয়া রোড। ছবি: সামসুল হুদা
কেন্দ্রীয় সরকারের শ্রম ও কৃষি আইন-সহ নানা জনবিরোধী নীতির প্রতিবাদে ডাকা বৃহস্পতিবারের সাধারণ ধর্মঘটের মিশ্র প্রভাব পড়ল দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। এ দিন সকাল থেকেই বন্ধের সমর্থনে বিভিন্ন এলাকায় মিছিল বের হয়। অনেক জায়গায় পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান বন্ধ সমর্থনকারীরা। স্টেশনে স্টেশনে অবরোধের জেরে দফায় দফায় ব্যাহত হয় রেল পরিষেবা। তবে রাস্তায় যথেষ্ট সরকারি বাস ছিল। দোকান-পাট অন্য দিনের তুলনায় কম খোলে।
এ দিন সকাল থেকে ডায়মন্ড হারবার শহরে ওষুধের দোকান ছাড়া অন্য প্রায় সব দোকানই বন্ধ ছিল। রাস্তায় সকালের দিকে কিছু বেসরকারি বাস বেরোয়। তবে বেলা গড়াতে তাদের আর দেখা পাওয়া যায়নি। সরকারি বাস চলাচল করেছে। ডায়মন্ড হারবার স্টেশন থেকে কয়েকটি ট্রেন ছাড়লেও মাঝপথে আটকে পড়ে অবরোধের জেরে। ডায়মন্ড হারবার স্টেশন বাজারের কিছু আনাজ দোকান খোলা থাকলেও অধিকাংশ বন্ধ ছিল। এ দিন সকালে বামকর্মীরা মিছিল বের করে শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘোরেন। ধর্মঘটের বিরোধিতা করে তৃণমুলের একটি মিছিলও শহরে ঘোরে। তৃণমূল নেতারা জানান, লকডাউনের জেরে দীর্ঘদিন মানুষ কর্মহীন ছিলেন। আবার বন্ধের জেরে সঙ্কটে পড়ছেন তাঁরা। বন্ধ না ডেকে প্রতিবাদ, আন্দোলন করেও জনবিরোধী নীতির প্রতিবাদ করা যায় বলে মনে করেন তাঁরা।
সকাল থেকেই ক্যানিংয়ের বিভিন্ন এলাকায় বন্ধের সমর্থনে বাম ও কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকেরা মিছিল করেন। সকাল ৬টা নাগাদ ক্যানিং হাসপাতাল মোড়ে রাস্তা অবরোধ হয়। রাস্তায় বেঞ্চ পেতে দলীয় পতাকা লাগিয়ে বসে থাকেন বন্ধ সমর্থকেরা। ঘটনার জেরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে ক্যানিং বারুইপুর ও ক্যানিং-হেড়োভাঙা রোড। কিছুক্ষণের মধ্যেই ক্যানিং থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। বন্ধ সমর্থকদের বুঝিয়ে অবরোধে তুলে নিতে বলে পুলিশ রাজি না হওয়ায় সকাল ৮টা নাগাদ সাতজন বন্ধ সমর্থককে আটক করা হয়। হটিয়ে দেওয়া হয় অবরোধকারীদের। সকাল থেকেই শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার ক্যানিং লাইনের বেতবেড়িয়া স্টেশনে ট্রেন অবরোধ করেন এসইউসি কর্মী-সমর্থকরা। বেলা ১০টা পর্যন্ত অবরোধ চলে। পরে রেল পুলিশ এসে সরিয়ে দেয় অবরোধকারীদের। ধীরে ধীরে এই শাখায় ট্রেন চলাচল শুরু হয়। ট্রেন বন্ধ করার অভিযোগে বেশ কয়েকজন বন্ধ সমর্থককে আটক করে রেল পুলিশ।
দক্ষিণ বারাসত, বহড়ু স্টেশনেও সকালের দিকে রেল অবরোধ করেন সিপিএম, এসইউসি সমর্থকেরা। রেল পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়। দক্ষিণ বারাসত, ঢিবের হাট, বহড়ু, জয়নগর-সহ বিভিন্ন এলাকায় পথ অবরোধও করেন বন্ধ সমর্থকেরা। এলাকার বহু দোকানপাট খোলেনি। রাস্তায় বেসরকারি গাড়ির সংখ্যা ছিল কম।
এ দিন সকাল থেকে দফায় দফায় বাসন্তী হাইওয়ে অবরোধ করেন সিপিএম কর্মী-সমর্থকেরা। তবে ভাঙড়ের বিভিন্ন এলাকার জনজীবন স্বাভাবিক ছিল। বিজয়গঞ্জ বাজার, ভাঙড় বাজার, ঘটকপুকুর বাজার, শোনপুর, ভোজেরহাট, পোলেরহাট সহ বিভিন্ন এলাকার দোকান-বাজার অন্যান্য দিনের মতোই খোলা ছিল। ভাঙড়ের বিভিন্ন সরকারি অফিসগুলিতে কর্মীদের হাজিরা ছিল স্বাভাবিক। বন্ধের সমর্থনে এ দিন সকাল থেকেই ভাঙড়ের শ্যামনগরে জমি রক্ষা কমিটি লাউহাটি-হাড়োয়া রোড দীর্ঘক্ষণ অবরোধ করে রাখে। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে অবরোধ উঠে যায়। ভোজেরহাট ও বামনঘাটাতেও বনধ সমর্থনকারীরা বেশ কিছুক্ষণ বাসন্তী হাইওয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাযন। পুলিশ অবরোধ তুলতে গেলে ধস্তাধস্তি হয়।
সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তুষার ঘোষ বলেন, “তৃণমূল মুখে এই বন্ধের সমর্থন করলেও বন্ধ ব্যর্থ করতে সর্বতোভাবে চেষ্টা করেছে। পুলিশ দিয়ে তারা জোর করে অবরোধকারীদের হটিয়ে দেয়। যা অত্যন্ত নিন্দনীয়।” দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “বন্ধকে ঘিরে কোথাও কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সরকারি অফিসগুলিতে অন্যান্য দিনের মতো স্বাভাবিক কাজ হয়েছে। কর্মীদের হাজিরা ছিল ৯৫ থেকে ৯৮ শতাংশ।”