Crowds in Trians

গাদাগাদি ভিড় থেকে মুক্তি চান দক্ষিণের রেলযাত্রীরা  

মন্দিরবাজার ব্লকের বাসিন্দারাও কলকাতায় নিত্য যাতায়াতের ক্ষেত্রে ট্রেনের উপরে নির্ভরশীল।

Advertisement

দিলীপ নস্কর

ডায়মন্ড হারবার শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০২৪ ০৮:৫৪
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

ভিড়ে ঠাসা ট্রেন থেকে পড়ে গিয়ে এক তরুণের মৃত্যুর ঘটনা আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, শহরতলির রেল যাত্রার চিত্রটা। প্রতি দিনই প্রবল ভিড়ে চূড়ান্ত ভোগান্তির মুখে পড়তে হয় পূর্ব রেলের উত্তর ও দক্ষিণ শাখার নিত্যযাত্রীদের। ভিড় ট্রেনে বাদুড়ঝোলা অবস্থায় পড়ে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনা প্রতি বছরই বাড়ছে। রেলের যাত্রী পরিষেবা নিয়ে অভিযোগের ঝুলিও বড় হয়, জনস্বার্থ মামলা হয়।

Advertisement

রেল পুলিশের খতিয়ান অনুযায়ী, গত এক বছরে শিয়ালদহ-নামখানা শাখায় ভিড় ট্রেনে ঝুলন্ত অবস্থায় পড়ে ৫-৬ জন মারা গিয়েছে। জখমের সংখ্যা প্রায় ১০ জন। নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, দিন দিন ভিড় বাড়লেও ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে না। ফলে দুর্ঘটনা ঘটেছে। ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো নিয়ে অবরোধ, আন্দোলনও কম হয়নি। রেলের তরফে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

পূর্ব রেল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মথুরাপুর লোকসভা কেন্দ্রের অধিকাংশ বিধানসভা এলাকার বাসিন্দাদের কলকাতায় যাতায়াতের ক্ষেত্রে ট্রেনের উপরে নির্ভরশীল। সরাসরি বাস যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় নেই বললেই চলে। বিশেষত, মন্দিরবাজার, রায়দিঘির মথুরাপুর ১ ও ২ ব্লক, কুলপি, মগরাহাট ২, মথুরাপুর লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে এই ব্লকগুলি। প্রতিটি ব্লকে গড়ে চার-সাড়ে চার লক্ষ মানুষের বসবাস। কলকাতায় নিয়মিত যাতায়াত করেন অনেকেই। ভোর থেকে প্রায় সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত গাদাগাদি ভিড় থাকে ট্রেনে। যাত্রীদের মধ্যে বিভিন্ন পেশার মানুষ আছেন। শ্রমিক, কারিগর, সরকারি-বেসরকারি অফিসের কর্মী, স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীরা আছেন।

Advertisement

একে বাস কম, তার উপরে বহু বছর ধরে ট্রেনের সংখ্যাও বাড়েনি। অথচ, যাত্রীসংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। রায়দিঘি, মথুরাপুর ১ ও ২ ব্লকের বাসিন্দাদের কলকাতায় যেতে ছোট গাড়িতে করে মথুরাপুর স্টেশনে আসতে হয়। সেখান থেকেই শিয়ালদহ পৌঁছতে প্রায় দেড় ঘণ্টা লেগে যায়। প্রায় এক ঘণ্টা অন্তর ট্রেন। ফলে ওই এলাকার বাসিন্দারা কোনও ভাবে একটা ট্রেন না পেলে প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় পরের ট্রেনের জন্য। ফলে যতই ভিড় হোক, জীবিকার তাগিদে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাদুড়ঝোলা হয়ে যেতে হয়।

মন্দিরবাজার ব্লকের বাসিন্দারাও কলকাতায় নিত্য যাতায়াতের ক্ষেত্রে ট্রেনের উপরে নির্ভরশীল। ওই এলাকার বাসিন্দারা মূলত শিয়ালদহ-লক্ষ্মীকান্তপুর শাখায় লক্ষ্মীকান্তপুর, মথুরাপুর ও মাধবপুর স্টেশন থেকে ট্রেনে করে শিয়ালদহে পৌঁছন বা ডায়মন্ড হারবার-শিয়ালদহ শাখায় সংগ্রামপুর স্টেশন থেকে কলকাতা যাতায়াত করেন। মগরাহাট ১ ও ২ ব্লকের বাসিন্দাদের সমস্যা হয় সব থেকে বেশি। সকালের দিকে প্রচণ্ড ভিড় হয়। শিয়ালদহ–নামখানা শাখায় ও শিয়ালদহ–ডায়মন্ড হারবার শাখায় জয়নগর, মথুরাপুর, গোচারণ মগরাহাট, সংগ্রামপুর, মথুরাপুর এই স্টেশনগুলি থেকে ট্রেনে ওঠা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষত মহিলা, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, শিশুদের ক্ষেত্রে সমস্যা বাড়ে। তিতিবিরক্ত যাত্রীরা। তার উপরে এই প্রবল গরম।

সংগ্রামপুর এলাকার বাসিন্দা শেখ জামাল, ফকির মোল্লাদের অভিযোগ, ‘‘মাঝপথে ট্রেনে ওঠা খুবই কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। ট্রেনে এত ভিড়ে ভ্যাপসা গরমের মধ্যে চিঁড়েচ্যাপ্টা হয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। চার জনের আসনে ছ’জনকে বসতে হয়। যে স্টেশনে নামার তার কয়েকটি স্টেশন আগে আসন ছেড়ে গেটের দিকে এগিয়ে যেতে হয়। সব শাখায় ট্রেন বাড়ানো দরকার।’’

এ বিষয়ে পূর্ব রেলের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘যাত্রীদের যাতে অসুবিধা না হয়, সে দিকে খেয়াল রাখার চেষ্টা করি আমরা। রেল পরিষেবা উন্নত করার লক্ষ্যে সম্প্রতি কিছু সমস্যা হচ্ছে। খুব দ্রুত তা ঠিক হবে আশা করছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement