ভোরের ট্রেনের দাবিতে রেল অবরোধে যাত্রীরা। নিজস্ব চিত্র ।
করোনা পরিস্থিতিতে ভোরের ট্রেন বাতিল হওয়ায় নিত্যযাত্রীদের বিক্ষোভের মুখে পড়ল রেল। বুধবার ভোর ৫টা থেকে শিয়ালদহ-বনগাঁ শাখায় ঠাকুরনগর স্টেশনে রেল অবরোধ শুরু করেন ট্রেনের যাত্রীরা। তার পর ১৪ ঘণ্টা কেটে গেলেও ওঠেনি অবরোধ। বিক্ষোভকারীদের দাবি, দিনের প্রথম এবং দ্বিতীয় ট্রেন বাতিল করা যাবে না। তাতে তাঁদের জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। টান পড়বে ব্যবসায়।
রাতভর অবরোধ চালাতে রেললাইনের উপর তাঁবু টানিয়ে খিচুড়ি রান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বিক্ষোভকারীদের একাংশ। জানা গিয়েছে, স্থানীয় মানুষ ও রেল পুলিশ এবং জিআরপি বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে দেয়। রেল পুলিশের তরফে পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, রেললাইনে তাবু খাটানো যাবে না। বিক্ষোভকারীরাও পাল্টা জানিয়ে দিয়েছেন, যত ক্ষণ দাবি না মানা হচ্ছে রেলের তরফে, তত ক্ষণ এই আন্দোলন চলবে। এই নিয়ে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।
রাজ্যে বাড়তে থাকা করোনা সংক্রমণের জেরে রাজ্য সরকারের নির্দেশেই ট্রেন চলাচলের সময় বদলানো হয়েছে। নতুন সূচি অনুযায়ী ভোর ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চালু থাকবে রেল পরিষেবা। রাত ১০টার পর আর কোনও প্রান্তিক স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়বে না। শিয়ালদহ-বনগাঁ শাখায় ভোরের প্রথম দু’টি ট্রেনের সময় ভোর ৫টার আগে। ফলে প্রথম ট্রেনটি বাতিল করা হয়েছিল। দ্বিতীয় ট্রেনটি চালানো হলেও সেটিকে 'স্টাফ স্পেশ্যাল' হিসেবে জানিয়ে বুধবার তাতে সাধারণ যাত্রীদের উঠতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। এমনকি ট্রেনে উঠলে জরিমানা হবে বলে ভয় দেখানোও হয়। এর পরই ক্ষুব্ধ নিত্যযাত্রীরা বিক্ষোভ দেখান। রেল অবরোধ করেন।
অবরোধকারীদের অধিকাংশ ফুল ব্যবসায়ী। তাঁদের বক্তব্য, ফুলের ব্যবসাই তাঁদের একমাত্র রুজি-রোজগার। ফুল নিয়ে তাঁরা কলকাতায় যান ভোরের প্রথম দু’টি ট্রেনেই। প্রথম ট্রেনটি ছাড়ে ভোর ৩টে ১৫ মিনিটে। দ্বিতীয়টি ৪টে ৪০ মিনিটে। ফুল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ওই দু’টি ট্রেন না চললে তাঁরা সময়ে কলকাতায় পৌঁছতে পারবেন না। তাঁদের বিক্রিবাটাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অবিলম্বে ট্রেন দু’টি চালু করার দাবিতে বুধবার ঠাকুরনগর স্টেশনে রেল লাইনের উপর ফুলের বোঝা ফেলেই রেল অবরোধ করেন ফুল ব্যবসায়ীরা। জানিয়ে দেন, ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত না হওয়া অবধি তাঁরা অবরোধ তুলবেন না
বেলা পর্যন্ত অবরোধ চলতে থাকে। ফলে শিয়ালদহ বনগাঁ শাখায় ভোগান্তির শিকার হন যাত্রীরা। পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছন জিআরপি-র আধিকারিক। তবে তাঁর অনুরোধেও অবরোধ তুলে নিতে রাজি হননি অবরোধকারীরা। তাঁরা জানিয়ে দেন, ট্রেন চলার আশ্বাস না পেলে তাঁরা অবরোধ প্রত্যাহার করবেন না। পরে রেল প্রশাসনের আশ্বাস না পেয়ে গাইঘাটা রামন্দ্রপুর রোডে রেলগেটের উপরেও অবরোধ করা হয়। পথচারীরা সেই অবরোধ তুলতে গেলে দু’পক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কিও হয় বলে অভিযোগ।