প্রতীকী ছবি।
নিয়োগ কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত বাগদার চন্দন মণ্ডলকে (প্রাক্তন মন্ত্রী উপেন বিশ্বাস যাকে ভিডিয়োতে রঞ্জন সৎ নাম দিয়েছিলেন) জিজ্ঞাসাবাদ করছে সিবিআই। এরমধ্যেই সামনে আসে ‘বনগাঁর চন্দন’ নামে সোশ্যাল মিডিয়ায় আরও একটি পোস্ট (আনন্দবাজার যার সত্যতা যাচাই করেনি)। সেই ‘বনগাঁর চন্দন’-এর বিরুদ্ধে পুলিশের তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
এই চন্দন অবশ্য অন্য লোক। অভিযোগ, তাঁর নাম গোপাল মাহাতো। প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে টাকা তোলার অভিযোগে বনগাঁর তৃণমূল নেতা তথা উত্তর ২৪ পরগনা জেলার তফসিলি সেলের সভাপতি গোপাল মাহাতো ওরফে সুকান্তর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছিল গত ৫ জুলাই। দিন কুড়ি পেরিয়ে গেলেও তদন্তে তেমন কোনও অগ্রগতি নেই বলে অভিযোগ। বনগাঁর শিমুলতলার বাসিন্দা প্রশান্ত কুণ্ডু বনগাঁ থানায় লিখিত অভিযোগ করে জানিয়েছেন, সুকান্ত তাঁর মেয়েকে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে ৬ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন। চাকরি পায়নি মেয়ে। সুকান্ত ফেরত দিয়েছেন মাত্র ১০ হাজার। বিরোধীদের অভিযোগ, শাসক দলের মদতেই পুলিশ তদন্তে গড়িমসি করছে। এখনও পর্যন্ত অভিযোগকারী বা অভিযুক্ত কারও বয়ানই নথিভুক্ত হয়নি বলে অভিযোগ। অভিযোগকারীরা জানান, টাকা ফেরতের আশায় অভিযোগ করেছিলেন। পুলিশ পদক্ষেপ করবে বলে তাঁরা আশাবাদী। এই বিষয়ে পুলিশের এক কর্তা বলেন, “সুকান্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
বিজেপি নেতা তথা বনগাঁ পুরসভার কাউন্সিলর দেবদাস মণ্ডল বলেন, “সুকান্ত প্রকাশ্যে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। পুলিশের সদিচ্ছা নেই তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার। পুলিশের সেই ক্ষমতাও নেই। কারণ সুকান্ত তৃণমূল নেতা।” বনগাঁ শহর কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি সাধন ঘোষ বলেন, “কার অঙ্গুলিহেলনে তদন্ত প্রক্রিয়া ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে, তা আমরা জানতে চাই।” সিপিএমের বনগাঁ শহর এরিয়া কমিটির সম্পাদক সুমিত কর বলেন, “অনেক দিন ধরেই ওর বিরুদ্ধে অভিযোগ শুনতে পাচ্ছিলাম। পরে থানায় অভিযোগ হয়েছে। আমাদের দাবি, পুলিশ দ্রুত তদন্ত করে ওকে গ্রেফতার করুক।” সুকান্তর অবশ্য দাবি, তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ভিত্তিহীন। তিনি আদিবাসীদের নিয়ে কাজ করেন। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে। সুকান্ত বলেন, “আমার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক চক্রান্ত করা হয়েছে।” তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি গোপাল শেঠ বলেন, “সুকান্ত দোষ করেছেন না নির্দোষ সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। তবে কেউ যদি চাকরির জন্য কাউকে টাকা দিয়ে থাকে, তাহলে তাদের গ্রেফতার করতে হবে আগে। কারণ যোগ্য প্রার্থীদের বঞ্চিত করে তারা বেআইনি পথে চাকরির চেষ্টা করেছিল।”
বনগাঁ হাইস্কুলে শিক্ষকতা করেন সুকান্ত। স্কুল সূত্রে জানানো হয়েছে, থানায় অভিযোগ হওয়ার পর থেকে তিনি স্কুলে যাচ্ছেন না। এর মধ্যে অবশ্য তিনি একদিন স্কুলে গিয়ে শারীরিক অসুস্থতা সংক্রান্ত মেডিক্যাল শংসাপত্র দিয়ে এক মাসের ছুটি চেয়েছেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক কুণাল দে বলেন, “উনি (সুকান্ত) কাজে ফিরলে, ফিট শংসাপত্র চাওয়া হবে।” বনগাঁর শিক্ষক মহলের একটা বড় অংশ চাইছেন, পুলিশ দ্রুত তদন্ত শেষ করুক। সুকান্ত নির্দোষ হলে সেটাও সকলের জানা উচিত। এক শিক্ষকের কথায়, “কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ হলেই, তিনি দোষী প্রমাণ হন না। একজন শিক্ষকের সমাজে মান সম্মান রয়েছে। সত্যিটা সামনে আসুক।”