বাধা: এই জমিতে কাজের সময়েই শুরু হয়েছে সমস্যা। নিজস্ব চিত্র
চাষিদের আপত্তিতে বন্ধ হয়ে গেল পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশনের হাইটেনশন লাইনের বিদ্যুতের টাওয়ারের কাজ। যে কারণে নতুন করে সমস্যা তৈরি হয়েছে প্রকল্পের কাজে। কৃষক আন্দোলনের জেরে পাওয়ার গ্রিড কর্তৃপক্ষ তাদের টাওয়ার বসানোর কাজ ফেলে রেখে এলাকা ছেড়ে চলে গিয়েছে। বালি, সিমেন্ট, পাথর খোলা মাঠে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে।
সম্প্রতি সোনারপুরের সুভাষগ্রামে পাওয়ার গ্রিডের সাবস্টেশন থেকে জিরাট পর্যন্ত ১০৮ কিলোমিটার দূরত্বে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য ৪৪০ কেভি বিদ্যুতের হাইটেনশন লাইনের জন্য টাওয়ার বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। লাইনটি সুভাষগ্রাম থেকে সোনারপুর হয়ে ভাঙড় ১ ব্লকের চন্দনেশ্বর, নারায়ণপুর, মরিচা শেরপুর, ভাঙড় ২ ব্লকের চালতাবেড়িয়া, শানপুকুর ও পোলেরহাট ১ পঞ্চায়েতের উপর দিয়ে উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গা ব্লক হয়ে জিরাট পর্যন্ত যাওয়ার কথা। কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। কিন্তু ভাঙড় ১ ব্লকের শেরপুর ও মরিচা চাষিপাড়ায় অনেকের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। তাদের বাধায় আপাতত ওই এলাকায় হাইটেনশন লাইনের টাওয়ার বসানোর কাজ বন্ধ।
এর আগে ভাঙড় ২ ব্লকের পোলেরহাট ২ পঞ্চায়েতের নতুনহাটে পাওয়ার গ্রিডের সাব স্টেশন তৈরি নিয়ে উত্তাল হয়ে উঠেছিল ভাঙড়। পাওয়ার গ্রিড বিরোধী আন্দোলনের জেরে ২০১৭ সালের ১৭ জানুয়ারি অশান্তি ছড়ায় পোলেরহাট ২ পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকায়। আন্দোলনের সময়ে গুলিতে প্রাণ হারিয়েছিলেন দু’জন। পরে আবারও পাওয়ার গ্রিড সাবস্টেশনের বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য হাইটেনশন লাইন নিয়ে যাওয়ার জন্য টাওয়ার বসাতে গিয়ে সমস্যা তৈরি হওয়ায় চিন্তার ভাঁজ পড়েছে প্রশাসনের কপালে।
এ বিষয়ে পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার প্রিতম চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমরা চাষিদের অনুমতি নিয়ে এবং উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিয়েই তাঁদের জমিতে টাওয়ার বসানোর কাজ করছিলাম। ভাঙড়ের দু’টি এলাকায় কিছু মানুষ সমস্যা তৈরি করায় কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে।’’
সুভাষগ্রামে পাওয়ার গ্রিড সাবস্টেশন তৈরির কাজ শেষ হয়ে গেলে সোনারপুর, গড়িয়া, বারুইপুর, ভাঙড় এবং উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গা ব্লক-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় বিদ্যুৎ পরিষেবার আরও উন্নতি হবে বলে দফতরের আশা।
সমস্যা সমাধানের জন্য ইতিমধ্যে ভাঙড় ১, ২ ব্লক প্রশাসন পাওয়ার গ্রিড কর্তৃপক্ষ ও এলাকার জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। তবে সমাধান সূত্র বেরোয়নি।
এ বিষয়ে ভাঙড় ১ বিডিও সৌগত পাত্র বলেন, ‘‘আমরা সকলের সঙ্গে বৈঠক করছি। কী ভাবে সমস্যা সমাধান করা যায়, তা দেখা হচ্ছে। দু’একজন চাষি হয় তো ভুল বুঝে সমস্যা তৈরি করছেন। আমরা কথা বলে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করব।’’
শুক্রবার প্রাণগঞ্জের মরিচা চাষিপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, চাষের জমিতে মাটির খোঁড়া। বিদ্যুতের টাওয়ার বসানোর জন্য ঢালাই করে একটি খুঁটির কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু সে সব এখন বন্ধ।
স্থানীয় চাষি সইদুল মোল্লা, আজিজার মোল্লারা বলেন, ‘‘টাওয়ার বসানোর কাজ করতে গিয়ে আমাদের প্রায় ২ বিঘা জমির টমেটো, ফুলকপি, লঙ্কা, বিভিন্ন আনাজ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আমাদের জমিতে টাওয়ার বসাবে বলে যে ক্ষতিপূরণের টাকা দেবে বলেছিল, সেই টাকা এখনও পাইনি। এলাকার সমস্ত জমি তিন ফসলি। আমাদের এই সামান্য জমি চলে গেলে খাবো কী?’’ তাঁদের কথায়, ‘‘শুনছি বিদ্যুতের তার গেলে আর এই জমিতে চাষ হবে না। তখন আমরা কী করব?’’ কাজ করতে এলে যে কোনও উপায়ে তা ঠেকানো হবে বলে হুমকিও দেন ওই চাষিরা।
এ বিষয়ে ভাঙড় ২ পঞ্চায়েত সমিতির ভূমি কর্মাধ্যক্ষ তথা এলাকার তৃণমূল নেতা কাইজার আহমেদ বলেন, ‘‘কিছু মানুষ ভুল বুঝে কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। একটা সমস্যা তৈরি হয়েছে। আমরা সকলের সঙ্গে কথা বলে বোঝানোর চেষ্টা করছি। আশা করছি, দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে।’’