পরিদর্শন: উপরে, মজুত পেঁয়াজ ভাঙড়ে। নীচে, বাজারে ঘুরছেন ক্যানিংয়ের মহকুমাশাসক। নিজস্ব চিত্র
মঙ্গলবার সকালে পেঁয়াজের দাম নিয়ে এক দোকানির সঙ্গে বচসা বাধে ক্রেতার। দোকানি চড়া গলায় জানিয়ে দেন, এই দামে কিনতে হলে কিনুন, না হলে সরে পড়ুন। ঠিক সে সময়েই ভাঙড় ২ বিডিও কৌশিককুমার মাইতি অন্য আধিকারিকদের নিয়ে পৌঁছন সেই দোকানে।
ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর প্রিয়রঞ্জন দাস, কৃষি দফতরের আধিকারিক ও পুলিশের কর্তারা ভাঙড়ের বামনঘাটা বাজারে ভোলানাথ মণ্ডল নামে ওই দোকানদারের কাছে পেঁয়াজ কেনার চালান দেখতে চান। কিন্তু তিনি কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। ভোলানাথ বলেন, ‘‘স্যার আমরা শিয়ালদহের কোলে মার্কেট থেকে ধার বাকিতে মাল নিয়ে এসে বিক্রি করি। তাই কোনও চালান দেয়নি।’’ উত্তরে খুব একটা সন্তুষ্ট হননি কর্তারা। তবে সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন।
পরেই বাজারের একটি ঘরে দেখা যায়, পেঁয়াজের অনেকগুলি বস্তা সাজানো। প্রশাসনের কর্তারা গুদাম মালিকের খোঁজ করতেই জানা যায়, গুদামের মালিক ভোলানাথ!
সরকারি আধিকারিকেরা জানতে চান, চালান ছাড়া এত মাল কী ভাবে তুললেন। পুলিশের কর্তারা তাঁকে ধমক দিয়ে বলেন, ‘‘সমস্ত মাল বাজেয়াপ্ত করে দিলে ভাল হবে?’’ ভোলানাথের কাছে জানতে চাওয়া হয়, তিনি কত টাকা দরে পেঁয়াজ কিনেছেন। তারও কোনও সঠিক উত্তর দিতে পারেননি ভোলা।
অভিযোগ, অনেকেই পেঁয়াজ গুদামজাত করে রেখে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করতে চাইছেন। সেই সুযোগ নিয়ে অনেকেই পেঁয়াজ নিয়ে ফাটকা ব্যবসা করছেন। বিডিও বলেন, ‘‘আমরা সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বাজারে হানা দেব। অনেকেই পেঁয়াজের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে নিজেদের খেয়ালখুশি মতো দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। আমরা সমস্ত বাজারের উপরে নজর রাখছি। প্রথমে সমস্ত দোকানদারদের সাবধান করা হচ্ছে, যাতে তাঁরা অযথা দাম না নেন।’’
এ দিকে প্রশাসনের লোকজন বাজারে হানা দিতে তা চারিদিকে চাউর হয়ে যায়। হঠাৎ ১৩০ টাকা কেজি দরের পেঁয়াজের দাম কমে দাঁড়ায় ১১০ টাকায়!
ভাঙড়ের ভোজেরহাট, আঠারোতলা বাজারেও হানা দেন সরকারি কর্তারা। সেখানে দেখা যায় কোথাও পেঁয়াজের দাম ১১০, কোথাও ১২০, কোথাও ১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রশাসনের কর্তারা বিক্রেতাদের কাছে দেখতে চান, তাঁরা কত টাকা দামে মাল কিনেছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই জানা যায়, কলকাতার পাইকারি বাজার থেকে গড়ে তাঁরা ৯৮ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ কিনেছেন সকলে। খুচরো বাজারে তাঁরা সেই পেঁয়াজ ২০-৩০ টাকা লাভ রেখে বিক্রি করছেন। কৌশিক বলেন, ‘‘একই বাজারে পেঁয়াজের দাম ভিন্ন হতে পারে না। সকলেকে ১১০ টাকা কেজি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হবে এবং সকলকে দৈনন্দিন আলু, পেঁয়াজ-সহ আনাজের বোর্ডে লিখে টাঙিয়ে রাখতে হবে।’’ যাঁরা এই নির্দেশ মানবেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে পরবর্তী ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিবু মণ্ডল নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘‘আমরা সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষ। যে ভাবে দিনের পর দিন নিত্য প্রয়োজনীয় আলু, পেঁয়াজ-সহ আনাজের দাম বাড়ছে, তাতে খুবই চাপ পড়ছে।’’ ভাঙড় ১ বিডিও সৌগত পাত্রও এ দিন ঘটকপুকুর, প্রাণগঞ্জ-সহ বিভিন্ন বাজার পরিদর্শন করেন। তিনিও লক্ষ্য করেন, ওই সব বাজারের ব্যবসায়ীরা নিজেদের খেয়ালখুশি মতো দাম হাঁকছেন। তাঁদেরকেও বিডিও সাবধান করে দেন।
মঙ্গলবার ক্যানিংয়ের মহকুমাশাসক বন্দনা পোখরিয়াল ক্যানিং বাজারে পেঁয়াজের দাম খতিয়ে দেখতে ক্যানিং ১ বিডিও নীলাদ্রিশেখর দে ও টাস্ক ফোর্সের আধিকারিকদের নিয়ে হানা দেন। বাজারে গিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। বিক্রেতা ও মজুতদারদের সঙ্গেও কথা হয়। বুধবার থেকে ক্যানিং শহরে সরকারি মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি করা হবে বলে জানিয়েছেন মহকুমাশাসক। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ক্যানিংয়েও সরকারি মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি করা হবে। বুধবার সকাল থেকেই মানুষ ৫৯ টাকা কিলো দরে পেঁয়াজ কিনতে পারবেন। মাথা-পিছু ৫০০ গ্রাম করে পেঁয়াজ মিলবে।’’ সরকারি মূল্যে এই পেঁয়াজ বিক্রির কাজে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের কাজে লাগানো হবে বলে জানান ক্যানিং ১ বিডিও। তিনি বলেন, “প্রাথমিক ভাবে মাতলা ১ পঞ্চায়েতের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্ঘের মাধ্যমে ক্যানিং বাজারে সরকারি মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি করা হবে। বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে মাঝে মধ্যেই টাস্ক ফোর্সের হানাদারি চলবে।’’ এ দিন যে পেঁয়াজ ১২০ টাকা কিলো দরে বিক্রি হচ্ছিল সকালে, আধিকারিকেরা ঘুরে যাওয়ার পরে দাম এক ধাক্কায় কুড়ি টাকা কমেছে। ক্রেতারা অনেকে মনে করছেন, সরকারি মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু হলে বাজারে পেঁয়াজের দাম আরও কমবে।