পেট্রাপোল দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে ট্রাক। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
স্থলপথে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যের সিংহভাগই হয় পেট্রাপোল- বেনাপোল বন্দর দিয়ে। দু’দেশের ট্রাক চালকেরা পণ্য পরিবহণের কাজ করলেও ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসের আগে পর্যন্ত তাঁদের কোনও নিরাপত্তা ছিল না। ছিল না সচিত্র পরিচয়পত্রটুকু। কোন চালক-খালাসি কোন ট্রাকে পণ্য নিয়ে যাতায়াত করছেন, তার হিসেবও রাখা হত না। ফলে কাজে স্বচ্ছতার অভাব ছিল। দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যের কাজে গতি ছিল কম।
ওই সমস্যা মেটাতে পদক্ষেপ করেছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে দু’দেশের মধ্যে চালু হয় অভিন্ন কারপাস ব্যবস্থা। সীমান্ত বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, পেট্রাপোল-বেনাপোল বন্দরে কারপাস ব্যবস্থা চালু করতে ভারতের তৎকালীন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন। ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে প্রণববাবু নিজে পেট্রাপোল এসে কারপাস ব্যবস্থার সূচনা করেছিলেন। কলকাতা থেকে তিনি হেলিকপ্টারে পেট্রাপোল পৌঁছন। সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশের তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। কাঁটাতারের দু'পাশে দাঁড়িয়ে দু’দেশের মানুষ প্রণববাবুর বক্তব্য শুনেছিলেন। দুই অর্থমন্ত্রী মানুষের এমন আবেগ দেখে অভিভূত হয়ে গিয়েছিলেন সে দিন। প্রণববাবু বলেন, ‘‘আমি প্রায় দু’শো বার বনগাঁয় এসেছি। কিন্তু আগে কখনও পেট্রাপোলে আসা হয়নি। সে দিক থেকে ভালই হল, একটি স্মরণীয় দিনে এখানে আসতে পেরে।’’
দু’দেশের মধ্যে রাজনৈতিক মেলবন্ধন আরও জোরদার করতে এবং বাণিজ্য সম্পর্ক প্রসারিত করার বার্তা দিয়েছিলেন প্রণববাবু। সে কথা আজও এখানকার ব্যবসায়ী মহল মনে রেখেছেন। ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বনগাঁর প্রাক্তন বিধায়ক গোপাল শেঠ। তিনি বলেন, ‘‘ওঁকে জেঠু বলে ডাকতাম। পায়ে হাত দিয়ে নমস্কার করেছিলাম। বনগাঁর কাঁচাগোল্লা দিয়েছিলাম। দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যের সম্পর্ক মজবুত করতে ওঁর ভূমিকা ভোলার নয়।’’
পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ারর সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কারপাস ব্যবস্থায় দিনের দিন পণ্য খালি করার কথা। সব ক্ষেত্রে তা না হলেও দ্রুত পণ্য ট্রাক থেকে খালি করা হচ্ছে। এর ফলে বাণিজ্যে গতি বেড়েছে। কাজে স্বচ্ছতা এসেছে। কারপাস ব্যবস্থা চালু করতে প্রণব মুখোপাধ্যায় অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন। তাঁর কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।’’
পেট্রাপোল এক্সপোর্টার্স অ্যান্ড ইমপোর্টার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পরিতোষ বিশ্বাস বলেন, ‘‘দু’দেশের মধ্যে কারপাস চালু করতে প্রণববাবু ভূমিকা নিয়েছিলেন। এর ফলে ট্রাক চালকদের নিরাপত্তা বেড়েছে। আগে কোন ট্রাকে কোন চালক পণ্য নিয়ে বেনাপোলে যেতেন, তার হিসেব থাকত না। কারপাস চালু হওয়ার পরে এখন ট্রাক এবং চালকদের রেজিস্ট্রার রাখা হয়।’’