প্রতীকী ছবি।
সরকারি ভাবে আবাস যোজনার তালিকা চূড়ান্ত করার কাজ শেষ হয়েছে ৩১ ডিসেম্বর। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, জেলায় ২২টি ব্লকে আবাস যোজনার পুরনো তালিকায় নাম ছিল প্রায় ২ লক্ষ ৮৮ হাজার মানুষের। সমীক্ষা ও ঝাড়াই-বাছাইয়ের পরে চূড়ান্ত তালিকায় নাম বাদ গিয়েছে, প্রায় ৯৮ হাজার মানুষের।
প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, তালিকা যাচাইয়ের প্রাথমিক কাজ করেছিলেন আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা। পরে পুলিশ ও সরকারি কর্তারাও গ্রামে গ্রামে গিয়েছেন। বিডিও, মহকুমাশাসক, জেলাশাসক এবং ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটরা জেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে সরেজমিনে তদন্ত করেছেন। পঞ্চায়েতগুলিতে গ্রামসভার বৈঠক করেও তালিকা খতিয়ে দেখা হয়েছে।
তবে জেলা জুড়ে আবাস যোজনার তালিকা নিয়ে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। বহু গ্রামবাসীর অভিযোগ, আবাস যোজনার তালিকায় প্রচুর প্রকৃত গরিব মানুষের নাম না থাকলেও পাকাবাড়ি, গাড়ি-বাইক-সম্পত্তি থাকা মানুষের নাম এখনও থেকে গিয়েছে। চূড়ান্ত তালিকায় কাদের নাম থেকে গেল তা অবশ্য এখনও প্রকাশ্যে আসেনি। মঙ্গলবারই সিপিএমের পক্ষ থেকে হাবড়া ১ বিডিওর কাছে স্মারকলিপি দিয়ে দাবি করা হয়েছে, আবাস যোজনার চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ্যে টাঙিয়ে দেওয়া হোক। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘তালিকা চূড়ান্ত হলেও রাজ্য থেকে নির্দেশ না আসায় প্রকাশ্যে টাঙানো যাচ্ছে না।’’
প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, বনগাঁ মহকুমার বনগাঁ, গাইঘাটা ও বাগদা ব্লকে আবাস যোজনার পুরনো তালিকায় প্রায় ৪৫ হাজার মানুষের নাম ছিল। সমীক্ষা ও ঝাড়াই-বাছাইয়ের পরে তালিকা থেকে বাদ গিয়েছে ১৮-২০ শতাংশ মানুষের নাম।
প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, আবাস যোজনার তালিকায় সব থেকে বেশি বেনিয়ম হয়েছে বাগদা ব্লকে। ওই ব্লকের বাগদা ও মালিপোতা পঞ্চায়েত অফিসে মানুষ বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। বিক্ষোভ হয়েছে বনগাঁ ব্লকের আকাইপুর ও পাল্লা পঞ্চায়েতে। তৃণমূলের এক পঞ্চায়েত প্রধান ও এক পঞ্চায়েত সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, পাকাবাড়ি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে গ্রামবাসীর কাছ থেকে টাকা নেওয়ার। আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।
আবাস যোজনার দুর্নীতি নিয়ে সরব হয়েছে বিজেপি। দলের পক্ষ থেকে বনগাঁ, বাগদা, গাইঘাটা ব্লক অফিসে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। দুর্নীতি, স্বজনপোষণের অভিযোগ তুলে বিজেপি পক্ষ থেকে ব্লক অফিসগুলির সামনে প্রতিবাদ সভা করা হয়েছে।
জেলা বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, পুরো তালিকা এখনও জনসমক্ষে আনা হয়নি। ফলে বোঝা যাচ্ছে না, তালিকা থেকে কাদের নাম কাটা গিয়েছে। পঞ্চায়েতগুলিতে গ্রামসভার বৈঠকগুলি সঠিক ভাবে করা হয়নি। বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি রামপদ দাস বলেন, ‘‘আবাস যোজনার তালিকা প্রকাশ্যে এলে বোঝা যাবে, পাকাবাড়ি পাওয়ার যোগ্য নন এমন মানুষের নাম কাটা গেল, না কি গোঁজামিল দিয়ে পাকাবাড়ির মালিকদের নাম রাখা হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, শুধুমাত্র প্রকৃত গরিব মানুষের নাম তালিকায় থাকলে কারও নাম কেটে বাদই দিতে হত না। এখনও বহু গরিব মানুষের নাম তালিকায় ওঠেনি বলে তাঁর অভিযোগ।
সিপিএম নেতৃত্বের দাবি, আবাস যোজনার তালিকা থেকে প্রায় ২০ শতাংশ নাম বাদ যাওয়ার মাধ্যমে এটা প্রমাণিত, তালিকায় প্রচুর অযোগ্য মানুষের নাম ছিল। এখনও অনেক নাম থেকে গিয়েছে, যাঁরা সরকারি ঘর পাওয়ার যোগ্য নন। তাঁরা তৃণমূল নেতা-কর্মী বা তাঁদের আত্মীয়-পরিজন। সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃণাল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘তৃণমূলের রাজত্বে কোনও কিছুই স্বচ্ছ ভাবে হয় না। এই তালিকা জোড়াতালি দেওয়া তালিকা। প্রকৃত তদন্ত হলে এই নামের সিকিভাগও থাকবে না।’’
এ বিষয়ে তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘‘প্রকৃত গরিব মানুষ যাতে পাকাবাড়ি পান, সে জন্য প্রশাসন স্বচ্ছতার সঙ্গে আবাস যোজনার তালিকা তৈরি করছে।’’ তৃণমূলের জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য তথা বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় বলেন, ‘‘আবাস যোজনার তালিকা সমীক্ষা করার কাজ আশাকর্মী ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের দিয়ে বিডিওরা করেছেন। আমাদের ধারণা, জেলায় তালিকা তৈরি হয়েছে স্বচ্ছতা ও পরিচ্ছন্নতার সঙ্গে। আমরা কোনও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করিনি। এসডিও-ডিএম দেখভাল করেছেন। অন্য রাজ্যের তুলনায় এখানে অনেক বেশি স্বচ্ছতা বজায় ছিল।’’
জেলাশাসক শরদকুমার দ্বিবেদী বলেন, ‘‘একশো শতাংশ স্বচ্ছতার সঙ্গে তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এখনও কোনও অভিযোগ পেলে তা খতিয়ে দেখে নাম বাদ দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশে আছে।’’