পাখিরালয়ে অসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে পল্টন জেটি। ছবি: প্রসেনজিৎ সাহা।
সুন্দরবনের অর্থনীতির অন্যতম ভিত পর্যটন। সারা বছরই পর্যটকদের ভিড় থাকে। কিন্তু বেশ কিছু পর্যটনকেন্দ্রে উপযুক্ত জেটি না থাকায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিপজ্জনক জেটি দিয়ে পারাপার করতে গিয়ে ঘটছে দুর্ঘটনাও।
স্থানীয় সূত্রের খবর, গত কয়েক বছরে সুন্দরবনে পর্যটকের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে লঞ্চ ও ভুটভুটির সংখ্যা। কিন্তু অভিযোগ, এই বিপুল পরিমাণ পর্যটকদের ওঠা-নামার জন্য দর্শনীয় জায়গাগুলিতে পর্যাপ্ত জেটি তৈরি করা হয়নি। সব থেকে বেশি সমস্যা দেখা দিয়েছে পাখিরালয়, সুধন্যখালি ও দোবাঁকিতে। বর্তমানে পাখিরালয়ে হোটেল ও হোম-স্টের সংখ্যা সব থেকে বেশি। কেনাকাটার বাজারও বসে। অথচ, এখানে পর্যটকদের ওঠা-নামার জন্য ঠিকঠাক জেটি নেই বলে অভিযোগ। একটি মাত্র জেটিও ভেঙে পড়েছে। বন দফতরের আর একটি জেটি থাকলেও পর্যটকদের ব্যবহারের অনুমতি নেই। ফলে ঝুঁকি নিয়ে ভাঙা জেটি দিয়েই যাতায়াত চলছে। বাড়ছে দুর্ঘটনার সংখ্যা। চলতি মরসুমে বেশ কয়েক বার জেটি থেকে নদীতে পড়ে গিয়ে জখম হয়েছেন একাধিক পর্যটক। এই পরিস্থিতিতে সমস্যায় পড়েছেন ট্যুর অপারেটররা। তাঁদের দাবি, অনেক সময়ে দীর্ঘক্ষণ নদীতে নোঙর করে রাখতে হচ্ছে জলযান। জেটি পর্যটকদের ওঠা-নামার উপযুক্ত না হলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে ভাটার সময়ে। কেউ আবার কাঠের পাটাতন বানিয়ে নদীর পাড়ে পর্যটকদের ওঠা নামা করাচ্ছেন।
বছর কয়েক আগেও পাখিরালয়ে এই সমস্যা ছিল না। কিন্তু আমপান, ইয়াসের মতো ঝড়ে দু’টি জেটি ভেঙে নদীতে তলিয়ে যাওয়ায় সমস্যা বেড়েছে। বন দফতরের তরফে একটি জেটি তৈরির কাজ শুরু হলেও এখনও শেষ হয়নি।
এলাকার বাসিন্দা, ট্যুর অপারেটর অমর খাটুয়া বলেন, “হাজার হাজার পর্যটক প্রতি দিন সুন্দরবনে আসছেন। কিন্তু বেশিরভাগ পর্যটনস্থলেই পর্যাপ্ত জেটি নেই। পাখিরালয়ে প্রায় প্রতি দিনই ছোটখাট দুর্ঘটনা ঘটছে।’’ আর এক ট্যুর অপারেটর মিলন দাস বলেন, “পর্যটকদের কাছ থেকে ১২০ টাকা কর আদায় করছে বন দফতর। কিন্তু তাঁদের জন্য পর্যাপ্ত জেটি তৈরি করছে না। এই পরিস্থিতিতে সুন্দরবনে পর্যটকেরা কোনও বড় দুর্ঘটনার মধ্যে পড়লে আখেরে পর্যটনেরই ক্ষতি হবে।’’
স্থানীয় সূত্রের খবর, পাখিরালয়ে একটি ভাসমান জেটি তৈরির কাজ শুরু হয়েও চার বছরের বেশি থমকে রয়েছে। জেটির কংক্রিটের অংশ তৈরি হলেও ভাসমান অংশ এখনও তৈরি হয়নি। এ বিষয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সদস্য অনিমেষ মণ্ডল বলেন, “ভাসমান জেটির জন্য পর্যাপ্ত অর্থ পরিবহণ দফতর এখনও বরাদ্দ করেনি। তাই কাজটা সম্পূর্ণ হয়নি। কংক্রিটের অংশ জেলা পরিষদের দায়িত্ব ছিল, সেই কাজটুকু হয়েছে।” পরিবহণ দফতরের মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী জানান, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবেন। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করার আশ্বাস দেন তিনি।