Primary School

Primary school: স্কুল যেন পোড়ো বাড়ি

বর্তমানে স্কুলের ছাদে ফাটল ধরে শিক বেরিয়ে পড়েছে। দেওয়ালের প্লাস্টার খসে গিয়েছে।

Advertisement

নির্মল বসু 

শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০২১ ০৭:৪০
Share:

হতশ্রী: বর্তমানে এমনই দশা স্কুল ভবনের। নিজস্ব চিত্র

ঝড়ে ঘর ভেঙেছে। স্কুলের চাল উড়েছে। দেওয়ালের প্লাস্টার খসে পড়েছে জায়গায় জায়গায়। দরজার পাল্লা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। হতশ্রী ভবনটিকে হঠাৎ দেখলে পোড়ো বাড়ি বলে ভুল হয়। এমনই দশা বসিরহাটের হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের যোগেশগঞ্জের চার নম্বর মাধবকাটী আদিবাসী এফ পি স্কুলের।

Advertisement

সুন্দরবন লাগোয়া রায়মঙ্গল নদীর পাড়ের এই স্কুলটির পড়ুয়া সংখ্যা ৮৯। স্থায়ী অস্থায়ী মিলে শিক্ষক আছেন ৩ জন। স্কুল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেল, নদীর পাড়ের এই স্কুলটি এমনিতেই খুব বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। ভারী ঝড় বৃষ্টিতে অনেকসময়ই বাঁধ ছাপিয়ে স্কুল জলমগ্ন হয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন সংস্কার হয়নি ভবনটির। এর উপর সাম্প্রতিক আমপান ও ইয়াসে স্কুলের খুবই ক্ষতি হয়েছে। বর্তমানে স্কুলের ছাদে ফাটল ধরে শিক বেরিয়ে পড়েছে। দেওয়ালের প্লাস্টার খসে গিয়েছে।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামসুন্দর রায় বলেন, ‘‘এখন স্কুল খুললে কী ভাবে ক্লাস শুরু করব জানি না। ক্লাস ঘরের যা হাল, সেখানে ছেলেমেয়েদের বসানো একপ্রকার অসম্ভব। শুধু তাই নয়, স্কুলের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র রাখাও সম্ভব হচ্ছে না।’’ তিনি আরও জানান, আয়লা বাঁধের খুব কাছে হওয়ায় স্কুলটি বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। আমপান, ইয়াসের মতো ঘূর্ণিঝড় আবার হলে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই এখান থেকে সরিয়ে দূরে নতুন স্কুল ভবন তৈরি করাই শ্রেয়। একই কথা জনালেন সহ শিক্ষক ও অভিভাবকেরা।

Advertisement

ওই এলাকার অধিকাংশ বাসিন্দা আদিবাসী সম্প্রদায়ের। স্থানীয় শিশুদের বেশিরভাগই ওই স্কুলেই পড়াশোনা করত। কিন্তু স্কুলের বর্তমান হাল দেখে অনেকেই সন্তানকে স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন। অভিভাবক স্বপন টুডু, কল্পনা সর্দার বলেন, ‘‘ ঝড়-জলে নদী পাড়ের স্কুলটির বর্তমানে ভগ্নদশা। ওই স্কুল ঘরে বিপদের ঝুঁকি নিয়ে ছেলেমেয়েদের ক্লাস করতে পাঠানো একেবারেই নিরাপদ নয়।’’

স্কুলের এক শিক্ষক জানান, শুধু স্কুল ভবন নয়, দুর্যোগের প্রভাব এসে পড়েছে আশপাশের পরিবারগুলির উপরও। একদিকে ঘূর্ণিঝড়, অন্যদিকে কোভিড পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় বহু পড়ুয়ার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বাড়ির ছেলেমেয়েদের বইখাতা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। অনেক পড়ুয়া বাবা-মায়ের সঙ্গে ভিন্ রাজ্যে পাড়ি দিয়েছে কাজের সন্ধানে। কেউ আবার এলাকার মধ্যেই ফসল কাটার কাজে যুক্ত হয়ে পড়েছে।

ঝড়ে বহু পরিবার বাস্তুভিটে হারিয়েছেন। সেরকমই এক পরিবার পেশায় প্রতিমা শিল্পী কৌশিক মণ্ডল ও তাঁর স্ত্রী বর্তমানে স্কুল ভবনেই থাকছেন। তিনি বলেন, ‘‘ঝড়ের পরে ঘর এখনও বাসযোগ্য করে তুলতে পারিনি। তাই স্কুল ঘরে থাকতে বাধ্য হচ্ছি।’’

এই বিষয়ে হিঙ্গলগঞ্জের বিডিও শাশ্বতপ্রকাশ লাহিড়ী বলেন, ‘‘মাধবকাটী আদিবাসী প্রাথমিক স্কুলটির অবস্থা রীতিমতো বিপজ্জনক। অবিলম্বে নদীর ধার থেকে সরিয়ে নতুন করে স্কুল ভবন গড়া দরকার। এ বিষয়ে আগেই জেলাকে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে। ফের স্কুলের অবস্থা জানিয়ে জেলায় রিপোর্ট পাঠানো হবে। তার ভিত্তিতে অর্থ মঞ্জুর হলে মেরামতির কাজ শুরু হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement