ঝুঁকি: ইয়াসের পরে এমনই দশা সীতারামপুর জেটিঘাটের। ছবি: দিলীপ নস্কর।
বুলবুল, আমপান, ইয়াসের মতো পর পর ঘটে চলা প্রাকৃতিক দুর্যোগে বেহাল হয়ে পড়েছে নদী ঘেরা পাথরপ্রতিমা ব্লকের বহু জেটিঘাট। দুর্ভোগে পড়ছেন যাত্রীরা।
পাথরপ্রতিমা ব্লকের ১৫টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ৭টি পঞ্চায়েতের বাসিন্দাদের নিত্য প্রয়োজনে নদীপথ ব্যবহার করতে হয়। জি প্লট, ব্রজবল্লভপুর, শ্রীধরনগর, বনশ্যামনগর, অচিন্ত্যনগর, লক্ষ্মীজনার্দনপুর, হেড়ম্বগোপালপুরের মতো নদী ঘেরা পঞ্চায়েতগুলিতে নৌকোয় ওঠানামার জন্য একাধিক ঘাট রয়েছে। অধিকাংশ ঘাটই দীর্ঘদিন সংস্কার হয় না বলে অভিযোগ। তার উপরে আমপান ও সম্প্রতি ইয়াসের ধাক্কায় ঘাটগুলি আরও বেহাল
হয়ে পড়েছে।
সম্প্রতি জি প্লট পঞ্চায়েতের গুরুত্বপূর্ণ সীতারামপুর ঘাটে গিয়ে দেখা গেল, ঘাট বলে আর প্রায় কিছুই অবশিষ্ট নেই। জলের তোড়ে তছনছ হয়ে মাটির সঙ্গে মিশে গিয়েছে। অথচ ওই ঘাটে এলাকার সব থেকে বেশি মানুষ ওঠা-নামা করেন। সমুদ্রে যাওয়া কয়েকশো ট্রলারের মৎস্যজীবীরা ওই ঘাট ব্যবহার করেন। বেহাল ঘাটের জন্য সমস্যায় পড়েছেন এলাকার বাসিন্দারা। বাধ্য হয়ে ঘুরপথে চাঁদমারি ঘাট ব্যবহার করতে হচ্ছে।
পঞ্চায়েত এলাকার অন্য ঘাটগুলিও বেহাল। বাসিন্দারা জানান, কোথাও আলো আছে, পানীয় জল নেই। কোথাও পানীয় জল থাকলেও, শৌচালয় বা যাত্রী শেড নেই। ঘাটের বেহাল পরিকাঠামোর জেরে নিত্য ভোগান্তিতে পড়তে হয় যাত্রীদের। বয়স্ক বা কচিকাঁচাদের নৌকোয় তুলতে সমস্যায় পড়তে হয়। একটু অসাবধান হলেই বিপদ ঘটে যায়। প্রশাসন থেকে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না বলে অভিযোগ।
জি প্লট পঞ্চায়েতের উপপ্রধান আশিসকুমার বর্মন বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে ঘাটগুলি সংস্কার হয়নি। বেশ কয়েকটি ঘাট জলের তোড়ে একেবারে ভেঙে গিয়েছে। ঘাটগুলির পরিকাঠামোর সমস্যা রয়েছে। প্রশাসনকে একাধিকবার জানানো হয়েছে।”
জি প্লটের পাশেই ব্রজবল্লভপুর পঞ্চায়েতে গোবিন্দপুর আবাদ ঘাট, শিটের ঘাট, গঙ্গামেলা ঘাট, জানার ঘাট, ত্রিপাটির ঘাট, সামন্তর ঘাট, পলটের ঘাট-সহ ছোট বড় ঘাট রয়েছে। এর মধ্যে কিছু ঘাট জলের তোড়ে সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। বাকি ঘাটগুলিরও বেহাল অবস্থা। কোথাও পাটাতনের উপর দিয়ে হেঁটে নৌকোয় উঠতে হয়। কোথাও হাঁটুসমান কাদার উপর দিয়ে হেঁটে ওঠানামা করতে হয়। ঘাটগুলির সামনে চর পড়ে যাওয়ায় ভাটার সময়ে ঘাটে নৌকো ভিড়তে পারে না। ফলে দীর্ঘক্ষণ নৌকা চলাচল বন্ধ থাকে। ব্রজবল্লভপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান পরিমল বারিক বলেন, “আমপান ও ইয়াসের জেরে প্রায় সমস্ত ঘাট ভেঙে পড়েছে। নতুন করে সংস্কারের জন্য প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।”
সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা বলেন, ‘‘ইয়াসের জেরে যে সমস্ত জেটিঘাট ভেঙে পড়েছে সেগুলির বিষয়ে বিভাগীয় অধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। ওই জেটিঘাটগুলি সারানোর জন্য আলোচনাও হয়েছে। পাশাপাশি কিছু জেটিঘাট সেচ দফতর এবং পঞ্চায়েত সমিতির অধীনে রয়েছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, পাথরপ্রতিমা ব্লকে প্রায় ৭২টি ঘাট রয়েছে। এর মধ্যে সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদের অধীনে ৩৭টি ঘাট। বাকি ঘাটগুলি পঞ্চায়েত সমিতির অধীন। পাথরপ্রতিমা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শেখ রাজ্জাক বলেন, “জি প্লট পঞ্চায়েতের সীতারামপুর ও জয়শ্রী কলোনির দু’টি ঘাট সংস্কারের জন্য অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। বাকি ঘাটগুলির জন্য অনুমোদন এলে কাজ শুরু হবে।”