বেহাল: হাবড়া শহরের প্রধান নিকাশি নালা আবর্জনায় রুদ্ধ, জল উপচে পড়ছে রাস্তায় । নিজস্ব চিত্র।
কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতেই শনিবার জলমগ্ন হয়ে পড়ে হাবড়ার শ্রীনগর রেলগেট থেকে জয়গাছি রেলগেট যাওয়ার রাস্তা। নিকাশি নালাগুলি উপচে রাস্তায় উঠে আসে জল। রবিবার রাস্তার জল সরলেও নিকাশি নালাগুলি জলে ভরে আছে। অভিযোগ, বেহাল নিকাশির জন্য জল বেরোতে পারছে না। আবার বৃষ্টি হলে জলমগ্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। হাবড়া শহরের বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরেই চলছে এই জল-যন্ত্রণা।
অতীতে হাবড়া শহরের নিকাশির প্রধান মাধ্যম ছিল পদ্মা খাল। শহরের জমা জল খাল হয়ে বেরিয়ে যেত। অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে খালের জমি জবরদখল করে বেআইনি নির্মাণের ফলে জমা জল বেরোয় না। সংস্কারের অভাবে পদ্মা খাল এখন নালায় পরিণত হয়েছে। শহরে আগে অনেক জলাশয়ও ছিল। সে সবও ভরাট হয়ে গিয়েছে। গুমা খাল, নাংলাবিলে জমা জল গিয়ে পড়ত। সে সবও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রতি বছরই বর্ষায় শহরের একাংশ জলমগ্ন হয় পড়ছে। কোথাও কোমরসামান, কোথাও হাঁটুসমান জল দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। জল ঢুকে পড়ছে ঘরের মধ্যেও। টানা বৃষ্টিতে প্রায়ই দু’তিনদিন জলমগ্ন হয়ে থাকছে এলাকা। জমা জল পেরিয়েই যাতায়াত করতে হচ্ছে। গাড়ির টিউবের উপর কাঠের পাটাতন দিয়ে বা কলাগাছের ভেলা তৈরি করে যাতায়াত করছেন স্থানীয় মানুষ। পরিস্থিতি সামলাতে পুরসভার তরফে অস্থায়ী বাঁশের সাঁকোও তৈরি করে দেওয়া হয়। জমা জলে সাপ ও মশার উপদ্রব শুরু হয়। জলবাহিত রোগও দেখা দেয়। ঘরে জল ঢোকায় অনেককেই বাড়ি-ঘর ছেড়ে ভাড়া বাড়িতে বা স্কুলে আশ্রয় নিতে হয়। গত বছর বৃষ্টির জমা জলে এক শিশুর মৃত্যুও হয়েছিল।
শহরের বাসিন্দা বিজেপি নেতা বিপ্লব হালদার বলেন, “শহরের জমা জল বেরোনোর কোনও পথ নেই। পরিকল্পিত নিকাশি ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিবছর এই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।”
সিপিএম নেতা ঋষিনন্দন বিশ্বাস বলেন, “মাস্টার প্ল্যান তৈরি না করলে শহরের নিকাশির হাল ফিরবে না। কয়েকবার সমীক্ষা করা হলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি।” পুরসসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, শহরের নিকাশি নালা নিয়মিত পরিস্কার করা হয়। ভারী বৃষ্টি হওয়ায় শনিবার জল জমে গেলেও কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তা নেমেও গিয়েছে। পুরপ্রশাসক নীলিমেশ দাস বলেন, “নিকাশির পরিকাঠামো উন্নতি করা হচ্ছে।”
হাবড়ার বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানিয়েছেন, শহরের নিকাশি ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। তিনি বলেন, “নিকাশি ব্যবস্থার উন্নতি করতে ২৮ কোটির টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া
হয়েছে। কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভলপমেন্ট অথরিটির বাস্তুকারেরা ইতিমধ্যেই সমীক্ষার কাজ শেষ করেছেন। প্রকল্পের দরপত্র ডাকার কাজও হয়ে গিয়েছে। শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।”