ভোট মিটতেই উত্তেজনা

ভোটের ফল প্রকাশের পরে দুই ২৪ পরগনায় শাসক দলের বিরুদ্ধে আক্রমণের অভিযোগ তুলতে শুরু করল বিরোধী দলগুলি। কোথাও সিপিএমের পার্টি অফিসে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। কোথাও প্রহৃত হয়েছেন বিভিন্ন দলের কর্মী-সমর্থকেরা। কিছু ক্ষেত্রে আবার আক্রান্ত হয়েছে তৃণমূলের লোকজন, অভিযোগ এমনটাও।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৬ ০৩:৩৩
Share:

ভাঙচুরের পরে শাঁকচুড়া বাজারে কংগ্রেসের পার্টি অফিসের দশা। ছবি: নির্মল বসু।

ভোটের ফল প্রকাশের পরে দুই ২৪ পরগনায় শাসক দলের বিরুদ্ধে আক্রমণের অভিযোগ তুলতে শুরু করল বিরোধী দলগুলি। কোথাও সিপিএমের পার্টি অফিসে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। কোথাও প্রহৃত হয়েছেন বিভিন্ন দলের কর্মী-সমর্থকেরা। কিছু ক্ষেত্রে আবার আক্রান্ত হয়েছে তৃণমূলের লোকজন, অভিযোগ এমনটাও।

Advertisement

উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটায় বৃহস্পতিবার দুপুরে সিপিএমের দলীয় কার্যালয়ে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সিপিএমের শহিদ বেদিতে সবুজ রঙ লেপে দেওয়া হয়েছে। দলের বনগাঁ-গাইঘাটা জোনাল কমিটির সম্পাদক রমেন আঢ্য এই ঘটনায় তৃণমূলের বিরুদ্ধেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন। যা অস্বীকার করে গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি তৃণমূলের ধ্যানেশনারায়ণ গুহ বলেন, ‘‘দলের পক্ষ থেকে ওই ঘটনায় কেউ যুক্ত নয়। আমরাও এই ঘটনা সমর্থন করি না। কেউ এমন কিছু ঘটিয়ে থাকলে পুলিশকে বলেছি, উপযুক্ত পদক্ষেপ করতে।’’ পুলিশের উদ্যোগে শুক্রবারই অবশ্য খুলেছে পার্টি অফিসটি।

বৃহস্পতিবার রাতে বসিরহাটের শাঁকচুড়ো বাজারে কংগ্রেসের কার্যালয়ে ঢুকে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। বলে অভিযোগ। টেবিল, চেয়ার আলমারি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। আগুন দিয়ে নষ্ট করা হয় জরুরি নথি, দলীয় পতাকা-ফেস্টুন। কংগ্রেস নেতা সুশান্ত ঘোষ বলেন, ‘‘ভোটের ফল প্রকাশের পরে রাত ১২টা নাগাদ ওরা হামলা করে। হাতুড়ি দিয়ে গেটের তালা ভেঙে ঢুকে তাণ্ডব চালায়।’’ রাতেই ঘটনাস্থলে আসেন বসিরহাটের দক্ষিণের কংগ্রেস প্রার্থী অমিত মজুমদার। অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবি করে স্থানীয় পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তথা তৃণমূল নেতা সাহানুর মণ্ডল জানান, কংগ্রেসের পার্টি অফিসের মাথায় সিপিএমের পতাকা লাগানো ছিল। জোট হারার পরে বামেদের দায়ী করে কংগ্রেসের পক্ষে কয়েকজন ওই পতাকা খুলে দেয়। এরপরেই নিজেদের মধ্যে গণ্ডগোল বাধে। এর সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই। এ বিষয়ে সিপিআই নেতা খগেন অধিকারী বলেন, ‘‘তৃণমূলের অভিযোগ মিথ্যা। ওরা আমাদের অফিসের সামনে কালো কাপড় টাঙিয়ে দিয়েছে।’’

Advertisement

শুক্রবার সকালে হাড়োয়ার গোপালপুর ২ পঞ্চায়েত এলাকায় শাসক দলের লোকজন সিপিএমের পার্টি অফিসে ভাঙচুর চালানোর পর সেখানে সবুজ রং করে দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। বাধা দিতে গেলে ৬-৭টি বাড়িতে ভাঙচুরও চালায়। হিঙ্গলগঞ্জের যোগেশগঞ্জ বাজারে ৫-৭টি দোকান ভাঙচুর এবং একটি দোকানে তালা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। উত্তর পারঘুমটি গ্রামের বিনয় মণ্ডলের ছেলে এবং স্ত্রীকে মারধরের পাশাপাশি বাড়িও ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ। সিপিএমের পার্টি অফিস ভাঙচুরেরও অভিযোগ উঠেছে। পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য তথা সিপিএম নেতা পঙ্কজ হাউলির দোকানে ভাঙচুর চলে। কয়েকটি বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। একজনের গোয়াল ভেঙে দেওয়া হয়েছে। হিঙ্গলগঞ্জে তৃণমূলের সদস্য জয়ী প্রার্থী দেবেশ মণ্ডল অবশ্য সমস্ত অভিযোগ উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও মিথ্যা বলে দাবি করেন।

বসিরহাটের ধান্যকুড়িয়ায় আবার তৃণমূলের দুই কর্মীকে সিপিএমের লোকজন মারধর করে বলে অভিযোগ। তাঁরা কলকাতার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পুলিশ সিপিএম কর্মী ফিরোজ শেখকে গ্রেফতার করেছে। যদিও মারধরের ঘটনার সঙ্গে ফিরোজের কোনও সম্পর্ক নেই বলে দাবি স্থানীয় সিপিএম নেতৃত্বের। অভিযোগ, তৃণমূলের লোকজনও কিছু বাড়িতে পাল্টা হামলা করে ভাঙচুর চালিয়েছে।

হাড়োয়ার সিপিএম প্রার্থী দীনবন্ধু মণ্ডলের দাবি, গত রাতে একদল দুষ্কৃতী তাঁর বাড়িতে এসে হামলা চালানোর চেষ্টা করে। বাড়ির বাইরে বোমাবাজি করে। পুলিশ এলে দুষ্কৃতীরা পালায়।

বসিরহাটের গোপমহল এলাকার বাসিন্দা তথা তৃণমূলের যুব নেতা আব্দুল হান্নানের অভিযোগ, কংগ্রেস আশ্রিত দুষ্কৃতীরা তাঁদের বাড়ি লক্ষ করে বোমাবাজি করেছে। গ্যারেজ ভাঙচুর করেছে। প্রতিবাদ করলে তাঁর মা ও স্ত্রীর শ্লীলতাহানি করা হয়। তাঁকে খুনের হুমকি দেওয়া হয়েছে।

শুক্রবার সকালে হান্নানের বাড়িতে বাপি পাল এবং আলমগীর ওরফে মুকুল এলে তাঁদের উপরেও চড়াও হয় দুষ্কৃতীরা। দু’জনকে বসিরহাট জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এই ঘটনায় ৬ জনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন হান্নান।

মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন সদ্য জয়ী হওয়া স্থানীয় সিপিএম বিধায়ক রফিকুল ইসলাম মণ্ডল। তাঁর দাবি, সকলকে শান্তি বজায় রাখতে বলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে দেগঙ্গার চাকলায় তৃণমূল-সিপিএমের সংঘর্ষের জেরে আহত হয় এক কিশোরী-সহ ১১ জন। এক সিপিএম সমর্থককে ধরে পুলিশ।

কাকদ্বীপের প্রত্যাপাদিত্য পঞ্চায়েত এলাকার দক্ষিণ গোবিন্দপুরে সিপিএম দম্পতির বাড়িতে আক্রমণের অভিযোগ উঠেছে সবুজ আবীর মাখা একদল দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে। কাকদ্বীপের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক হৃষিকেশ মাইতির ভাইপো স্নেহাশিস পার্টিকর্মী। তাঁর স্ত্রী মোনালিসাও এবিটিএ-র জেলা কমিটির সদস্য। তাঁরা অভিযোগ করেছেন, দুষ্কৃতীরা ঘরে ঢুকে তাণ্ডব চালায়। স্নেহাশিসবাবুকে মারধর করে। মোনালিসাদেবীর পোশাক ছিঁড়ে দেয়। পুলিশকে জানানো হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সন্ধে থেকে শুক্রবার সন্ধে পর্যন্ত কাকদ্বীপ মহকুমায় গোলমালের আরও ঘটনা ঘটেছে। পাথরপ্রতিমা কেন্দ্রের রামগঙ্গায় এবং জি প্লটে কংগ্রেসের পার্টি অফিস, সাগর ব্লকে সিপিএমের ছ’টি অফিসে তাণ্ডব চালিয়ে তৃণমূল দখল করে নেয় বলে অভিযোগ। মৌসুনী দ্বীপে কংগ্রেস পরিবারের বছর সতেরোর এক কিশোরকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে শাসকদলের বিরুদ্ধে।

কাকদ্বীপের ৫ নম্বর ঘেরির রামরতনপুর এলাকায় শুধাংশু ঘোড়ুইয়ের দোকান বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনায় নাম জড়িয়েছে শাসক দলের উঠতি কিছু নেতার। সূর্যনগর এলাকায় ইমরান সর্দার ও সায়ফের সর্দাদদের মারধর করে আশেপাশের কিছু বুথের তৃণমূল সমর্থকেরা। পাথরপ্রতিমার শ্রীনারায়ণপুর-পূর্ণচন্দ্রপুর এলাকায় মাধবনগরের সিপিএম লোকাল সম্পাদক সুবল জানার বাড়িতে ভাঙচুর হয় বলেও অভিযোগ।

যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেন শাসকদলের নেতারা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement