ফাইল চিত্র।
আমপানের ঝোড়ো হাওয়ায় এখনও টালমাটাল হিঙ্গলগঞ্জে ভোটের আবহ।
প্রবল প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরে অনেকে এখনও ক্ষতিপূরণ পাননি বলে অভিযোগ। ক্ষতিপূরণের টাকা-পয়সা নয়ছয় হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে এক সময়ে বিরোধীরা নিয়মিত মিটিং-মিছিল-আন্দোলন করেছে এলাকায়। সেই পরিস্থিতি সামলে ঘর গুছিয়ে নেওয়াটাই এখন এই কেন্দ্রে চ্যালেঞ্জ বিধায়ক দেবেশ মণ্ডলের সামনে।
নেবুখালি থেকে দুলদুলি যাওয়ার সেতু তৈরির দাবি পূরণ না হওয়া, হেমনগরে গোমতী নদীর উপরে সেতু তৈরি হলেও সংযোগকারী রাস্তা জমির সমস্যায় তৈরি না হওয়া, পানীয় জলের সমস্যাগুলি আছে এলাকায়। গত কয়েক বছরে অনেক জায়গায় পানীয় জলের প্রকল্প হয়েছে। কিন্তু এখনও জলের সমস্যা আছে সামসেরনগর, চাঁড়ালখালি, ঘুমটির মতো এলাকাগুলিতে। অনেকে পুকুরের জল ফুটিয়ে খেতে বাধ্য হন। বহু দূর থেকে পানীয় জল আনতে হয়। পানীয় জল কিনেও খান অনেকে। পাটলি খাঁপুর পঞ্চায়েত এলাকা জুড়ে ও পানীয় জলের সমস্যা বহু দিনের। তবে কিছু দিন হল হিঙ্গলগঞ্জ এলাকায় বাড়ি বাড়ি পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার কাজ চলছে।
রাস্তাঘাটের অবস্থাও বিশেষ ভাল নয়। হাসনাবাদ থেকে নেবুখালি রাস্তা ভাঙাচোরা। ঘুনি থেকে শিথলিয়া পর্যন্ত রাস্তার বিভিন্ন অংশের অবস্থাও খারাপ। তবে কিছু জায়গায় কিছু দিন হল রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে।
শিথলিয়া থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত দিনে একটি সরকারি বাস চালানোর উদ্যোগ করা হয়েছিল। কিছু দিন চলেওছিল। কিন্তু আমপানের আগে থেকেই তা বন্ধ। বিধানসভার একাধিক খেয়াঘাটের অবস্থা বিপজ্জনক।
লকডাউনে প্রচুর শ্রমিক ফিরেছিলেন ভিন্ রাজ্য থেকে। অভিযোগ, তাঁরা এলাকায় তেমন কাজ না পেয়ে কয়েক মাস পরে ফের ভিন্ রাজ্যমুখী হয়েছেন। সিপিএম নেতা শ্রীদীপ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য কোনও কাজের ব্যবস্থা করতে পারেনি প্রশাসন। অথচ এই বিধানসভা এলাকায় পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা বহু। এঁদের প্রতি নজর নেই কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের।
বিভিন্ন রাস্তা, নদীবাঁধের অবস্থা খারাপ। সন্ধ্যার পরে চলাচল কঠিন হয়ে যায়। সুন্দরবনের বিভিন্ন গ্রাম থেকে কোনও প্রয়োজনে হাসনাবাদ পর্যন্ত আসাটা খুবই কঠিন হয়ে যায়। গাড়ি মেলে না। রাত ৮টা-৯টা বেজে গেলে ট্রেন থেকে নেমে মানুষ বাড়ি ফেরার যানবাহন পাবেন কিনা, তা নিয়ে আশঙ্কায় থাকেন।’’
দেবেশ অবশ্য বলেন, ‘‘আমার বিধানসভা এলাকায় রাস্তার খুবই ভাল অবস্থা। গলি গলিতে ঢালাই রাস্তা। জঙ্গলের পাশ দিয়ে শহরে বাস যাবে, যা কেউ কোনও দিন ভাবেনি। আমরা করে দেখিয়েছি। চেষ্টা করব, নেবুখালি সেতু করতে। হাসনাবাদ থেকে নেবুখালি পর্যন্ত রাস্তা অনেক চওড়া করতে। নদী বাঁধের অবস্থা ভাল ছিল, তাই আমপানে তেমন খারাপ অবস্থা হয়নি। আমরা প্রায় ২৮ কিলোমিটার নদী বাঁধ কংক্রিটের করেছি। আরও হবে।’’’ বাড়ি বাড়ি পানীয় জলের সমস্যা যেখানে আছে, তারও সমাধান করা হবে বলে জানিয়েছে্ন তিনি। খেয়াঘাটের সমস্যার সমাধানেরও আশ্বাস দিয়েছেন।
আমপানে ক্ষতিপূরণ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘যাঁরা প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েও কোনও সাহায্য পাননি, তাঁদের জন্য আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করব। দুর্নীতির অভিযোগ যা সামনে এসেছে তার প্রতিকারে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ করেছি।’’
কয়েক দিন আগে হেমনগরে এক যুবতীর অর্ধনগ্ন দেহ উদ্ধার হয়। পরিবারের অভিযোগ, তাঁকে ধর্ষণ করে খুন করে মুখে কিছু ঢেলে বিকৃত করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এই ঘটনাকে ঘিরে সরগরম হয়ে ওঠে এলাকা। কয়েক মাস আগেই হেমনগরের এক বিজেপি কর্মীর মৃত্যু হয়।
তাঁকে খুনের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়ায় ওই ঘটনাতেও। ভবানীপুর এলাকায় প্রায়ই ঝামেলা বাধে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বার বার প্রশ্নের মুখে হিঙ্গলগঞ্জ।
দীর্ঘ দিন ধরে বামেদের দখলে ছিল এই কেন্দ্র। ২০১৬ সালে প্রথম কেন্দ্রটি হাতে আসে তৃণমূলের। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের নিরিখে এলাকায় বাড়বাড়ন্ত হয়েছে বিজেপির। নানা ঘটনায় রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের আনাগোনা বেড়েছে। তৃণমূলের প্রভাবশালী নেতা ফিরোজ কামাল গাজি ওরফে বাবু মাস্টার এখন বিজেপিতে।
বিজেপি নেতা তারকনাথ ঘোষ বলেন, ‘‘হিঙ্গলগঞ্জে যে সব বাঁধ আমপানে ভেঙেছে, তার জন্য দায়ী তৃণমূল। তাদের নেতাদের ইটভাটা, মাছের ভেড়ির স্বার্থে বাঁধ ব্যবহার করায় বাঁধ দুর্বল হয়ে যায়। এরপরে সেই সব জায়গায় বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়। তৃণমূল আমপান ক্ষতিপূরণ নিয়ে দুর্নীতি করেছে। বিভিন্ন বিষয়ে কাটমানি খেয়েছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য কোনও কাজের ব্যবস্থা হয়নি আজও।’’
তবে সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে ভোটের আগে আত্মবিশ্বাসী শোনায় দেবেশকে। বলেন, ‘‘কোন নেতা কোন দিকে গেলেন, তাতে আমাদের কিছু যায়-আসে না।’’