Bangaon Politics

দুই সভাপতির দ্বৈরথ ঘিরে উত্তপ্ত বনগাঁর রাজনীতি

বিশ্বজিৎও পাল্টা সাংবাদিক সম্মেলনে দেবদাসের নাম না করে ‘অন্ধকার জগতের লোক’, ‘দুষ্কৃতী’, ‘অসামাজিক’ বলে কটাক্ষ করেছেন একাধিক বার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বনগাঁ শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০২৩ ০৮:২৮
Share:

বিশ্বজিৎ দাস (বাঁ দিকে), দেবদাস মণ্ডল (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।

২০১১ সালের বিধানসভা ভোটের পর দু'জনের সুসম্পর্কের কথা জানতেন বনগাঁর মানুষ। পরে রাজনীতির পাকচক্রে দু'জন রাজনীতির দুই ভিন্ন মেরুতে। এক জন তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস, অন্য জন বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি দেবদাস মণ্ডল। কয়েক দিন ধরে এই দুই নেতার দ্বৈরথ ঘিরে উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে বনগাঁর রাজনৈতিক পরিবেশ। বড়সড় গোলমালের আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছে না ওয়াকিবহাল মহল।

Advertisement

দিন কয়েক আগে রামপদ দাসকে সরিয়ে বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি করা হয় দেবদাসকে। তারপর থেকে দেবদাস সাংবাদিক বৈঠক হোক বা দলীয় কর্মসূচির মঞ্চ— বিশ্বজিৎকে লাগাতার কড়া ভাষায় আক্রমণ করে চলেছেন। সভাপতি হওয়ার পরে সাংবাদিক বৈঠক করে বিশ্বজিতের নাম না করে অভিযোগ করে বলেন, ‘‘বাগদা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পদ অর্থের বিনিময়ে ওপেন টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিক করা হয়েছে। যে বেশি দর দিতে পেরেছেন তিনি সভাপতি হয়েছেন।’’ অভিযোগের তির ছিল বিশ্বজিতের দিকে।

দিন কয়েক আগে বিজেপি বনগাঁ শহরে মিছিল করে। সেখানে দাঁড়িয়ে বিশ্বজিতকে উদ্দেশ্য করে দেবদাস বলেন, ‘‘বিশ্বজিৎ স্কুলের এক জন অশিক্ষিত কর্মী। তিনি কি করে বাড়িতে ২ কোটি টাকার বেশি খরচ করে মন্দির করলেন? কী ভাবে বাড়ি করলেন?’’ সিন্দ্রাণী এলাকায় গিয়ে দেবদাস বলেন, ‘‘তৃণমূল নেতারা দলটাকে ব্যবসায়ীক দলে পরিণত করেছেন। বিশ্বজিৎ নিজে বিধায়ক। বৌমাকে পঞ্চায়েত সমিতির আসনে এবং ছেলেকে জেলা পরিষদের আসনে দাঁড় করিয়েছেন ব্যবসা করার জন্য।’’

Advertisement

বিশ্বজিৎও পাল্টা সাংবাদিক সম্মেলনে দেবদাসের নাম না করে ‘অন্ধকার জগতের লোক’, ‘দুষ্কৃতী’, ‘অসামাজিক’ বলে কটাক্ষ করেছেন একাধিক বার। বুধবার বনগাঁ শহরে বিজেপির পাল্টা মিছিল ও সভা করে তৃণমূল। ত্রিকোণ পার্ক এলাকা থেকে মিছিল শুরু হয়ে যশোর রোড হয়ে মতিগঞ্জ ঘড়ির মোড়ে মিছিল শেষ হয়। মতিগঞ্জে সভা হয়। তৃণমূলের বক্তারা দেবদাসকে কড়া আক্রমণ করেন। সভাস্থলের কাছেই দেবদাসের বাড়ি। দেবদাসের নাম না করে বিশ্বজিৎ ওই দিন বলেন, ‘‘২০১১ সালের পর থেকে বনগাঁ শহর সন্ত্রাস ও দুষ্কৃতীমুক্ত করা হয়েছে। এখন এক জন আবার সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে চাইছেন বনগাঁয়।’’ দেবদাসে নাম না করে ‘সমাজবিরোধী’ আখ্যা দিয়ে বিশ্বজিৎ বলেন, ‘‘এই সমাজবিরোধী অসামাজিক কার্যকলাপ শুরু করতে চাইলে আপনার বাড়ি-গাড়ি জনগণ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেবেন। তার দায় আমাদের থাকবে না। কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তা পেতে আপনারা দেখবেন ওই সমাজবিরোধী নিজের বাড়ি গাড়ি নিজে ভাঙচুর করবে। নিজের বাড়িতে গাড়িতে নিজে বোমা মারবে।’’

বনগাঁ পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলর পাপাই রাহা বলেন, ‘‘বিজেপির এক সমাজবিরোধী মানুষের ঘরবাড়ি লুট করেছে। জমি-সম্পত্তি কেড়ে নিয়েছিল। এখন আবার দুষ্কৃতী কার্যকলাপ শুরু করার চেষ্টা করছে। আমরা বলে দিতে চাই, বনগাঁ শহরে দুষ্কৃতীদের জায়গা নেই। তা হলে ওর অবস্থা সিপিএম নেতা অনুজ পান্ডের মতো হবে।’’ বিশ্বজিৎ বলেন, ‘‘এক ব্যক্তি ওই সমাজবিরোধীকে জমি বিক্রি করে দিতে বলেছিল। সে জমি বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ করে দিল্লিতে ফ্ল্যাট কিনেছে।’’

গাড়ি-বাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া নিয়ে বিশ্বজিতের বক্তব্যের ভিডিয়ো দেবদাস সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন (তার সত্যতা খতিয়ে দেখেনি আনন্দবাজার)। দেবদাস বলেন, ‘‘বিশ্বজিৎ দাস বলেছেন, নিরাপত্তা রক্ষী নেওয়ার জন্য আমি নিজের বাড়িতে-গাড়িতে বোমা মারব। আমি বলতে চাই, আমার বাড়িতে-গাড়িতে বোমা মারার নিশ্চয়ই কোনও পরিকল্পনা করেছেন বিশ্বজিৎ। হামলা হলে, আমার পরিবারের কেউ আক্রান্ত হলে বা গাড়িতে হামলা হলে সে জন্য দায়ী থাকবেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস।’’

বিশ্বজিতের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘আমাকে রাজনৈতিক ভাবে আক্রমণ করতে পারেন, কিন্তু আমার ছেলে সবে ভোটে দাঁড়িয়েছে। তাকে নিয়ে কেন অশালীন কথা বলা হবে? এ সব বরদাস্ত করা হবে না।’’ দেবদাসের দাবি, ‘‘কোনও ব্যক্তি আক্রমণ করিনি। পরিবারের তিন জন ভোটে দাঁড়িয়েছেন। সেটাই বলেছি। তৃণমূল ব্যবসায়ীক দল, ব্যবসা করার জন্য ভোটে দাঁড়ায়।’’

দুই নেতার এই দ্বৈরথ কোথায় গিয়ে শেষ হয়— সে কথা
ভেবে আপাতত উদ্বিগ্ন বনগাঁর
সাধারণ মানুষ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement