ভোট চলে যায়, হয় না অপারেশন

ভোটের সময়ে অতি অবশ্য মেলে রাজনৈতিক নেতানেত্রীদের প্রতিশ্রুতি। কিন্তু ভোট মিটলে পরিস্থিতি যে কে সেই। বছরের পর বছর এমনটাই দেখতে অভ্যস্ত মানুষ। খোঁজ নিল আনন্দবাজার।ভোটের সময়ে অতি অবশ্য মেলে রাজনৈতিক নেতানেত্রীদের প্রতিশ্রুতি। কিন্তু ভোট মিটলে পরিস্থিতি যে কে সেই। বছরের পর বছর এমনটাই দেখতে অভ্যস্ত মানুষ। খোঁজ নিল আনন্দবাজার।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

অশোকনগর শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:০৯
Share:

প্রবল শ্বাসকষ্ট নিয়ে অশোকনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে গিয়েছিলেন কল্যাণগড় এলাকার এক বৃদ্ধ। ভেবেছিলেন, বাড়ির কাছের হাসপাতালে চিকিৎসা মিলবে। কিন্তু কোথায় কী? চিকিৎসকেরা তাঁর বাড়ির লোকেদের জানিয়ে দিলেন, রোগীর অবস্থা ভালো নয়। অশোকনগরের হাসপাতালে ওঁনার চিকিৎসার প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোও নেই। তাই ওই বৃদ্ধকে পাঠিয়ে দেওয়া হল বারাসত জেলা হাসপাতালে। কোনওক্রমে গাড়ি এবং অক্সিজেন ভাড়া প্রায় ২৫ কিলোমিটার উজিয়ে জেলা হাসপাতাল যেতে খরচ হল প্রায় এক হাজার টাকা।

Advertisement

এটা অবশ্য কোনও ব্যতিক্রমী ঘটনা নয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, অশোকনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায় না। অথচ এই হাসপাতালটির উপরেই প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ এলাকাবাসী নির্ভর করেন। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, অশোকনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে রোগী নিয়ে গেলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বারাসত জেলা হাসপাতালে পাঠাতে বলে। তাই তাঁরা সরাসরি বারাসতে রোগী নিয়ে চলে যান। দুর্ঘটনায় কেউ আহত হলে কিংবা প্রসূতির অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হলেও গন্তব্য সেই জেলা হাসপাতাল অথবা আর্থিক অবস্থা ভালো হলে স্থানীয় কোনও নাসিংহোম। অশোকনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতাল থেকে বারাসত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময়ে পথে সন্তান প্রসবের ঘটনাও ঘটেছে।

অশোকনগরের এই হাসপাতালে গিয়ে দেখা গিয়েছে, নামে ‘স্টেট জেনারেল হাসপাতাল’ হলেও এখানে নেই এর তালিকা বেশ দীর্ঘ। নেই কোনও অপারেশন থিয়েটার। আলট্রাসোনোগ্রাফি হয় না। অপারেশন থিয়েটারের আধুনিক যন্ত্রপাতি রয়েছে তবে সেগুলি সবই ঘরবন্দী। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক বছর আগে সেগুলি আনা হয়েছিল। কিন্তু ব্যবহার না করে করে সেগুলির অধিকাংশই এখন অকেজো। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) টাকায় ওই সব যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছিল। বর্তমানে হাসপাতালে ৭ জন চিকিৎসক থাকলেও তাঁদের মধ্যে একজনও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নন। হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ৫০টি। প্রয়োজনের তুলনায় যা খুবই কম। এর উপর রয়েছে হাসপাতালের অন্দরে দালাল চক্র চালানোর অভিযোগ।

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, একের পর এক ভোট আসে আর ওই হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবার উন্নয়ন নিয়ে ভুরি ভুরি প্রতিশ্রুতি দেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। বাম এবং তৃণমূল দুই সরকারের আমলেই একই অবস্থা। প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও চালু হয়নি অপারেশন থিয়েটার। মাস কয়েক আগে হাসপাতালে বার বার বিদ্যুৎ সংযোগ বিছিন্ন হয়ে যাচ্ছিল। তখন সম্পূর্ণ অন্ধকারে ডুবে ছিল এই হাসপাতাল। জেনারেটরও বিকল হয়ে গিয়েছিল। তখন রোগীর আত্মীয়েরা মোমবাতি কিনে এনে ওয়ার্ডে জ্বালিয়েছিলেন।

অশোকনগরের প্রাক্তন বিধায়ক তথা এবারের সিপিএম প্রার্থী সত্যসেবী করের অভিযোগ, ‘‘ওই হাসপাতালের পরিকাঠামোগত গত সব উন্নয়ন হয়েছে বাম আমলে। বিদায়ী বিধায়কের পাঁচ বছরে এই হাসপাতাল নিয়ে কোনও উদ্যোগ চোখে পড়েনি। পরিস্থিতি দিনে দিনে আরও খারাপ হয়েছে।’’ বিরোধীদের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বিদায়ী বিধায়ক তথা এবারের তৃণমূল প্রার্থী ধীমান রায়ের অবশ্য দাবি, হাসপাতালে নায্যমূল্যের ওষুধের দোকান, আলো, যাত্রী প্রতীক্ষালয়ের ব্যবস্থা হয়েছে। চিকিৎসকের সংখ্যা বেড়েছে। হাসপাতালে রয়েছে ছেলেদের নার্সিং ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা। তাঁর দাবি, ‘‘রাজ্যে মাত্র দু’টি ছেলেদের নার্সিং ট্রেনিং কেন্দ্র রয়েছে। তার মধ্যে একটি অশোকনগরের হাসপাতালে।’’ সাধারণ মানুষের দাবি, পরিকাঠামো উন্নতির আগে চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি প্রয়োজন। যাতে কথায় কথায় চিকিৎসার প্রয়োজনে বারাসত বা কলকাতার হাসপাতালে আর দৌড়াতে না হয়।

স্টেট জেনারেল হাসপাতালে তবু কিছু সাধারণ পরিষেবা পাওয়া যায়। কিন্তু অশোকনগরের বাকি সরকারি হাসপাতালগুলির অবস্থা খুবই শোচনীয়। বাম আমলে অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভা পরিচালিত সরস্বতী প্রজ্ঞানন্দ সেবা সনদ নামে একটি হাসপাতাল তৈরি হয়েছিল। অভিযোগ, সেখানে এখন কার্যত কোনও পরিষেবাই পাওয়া যায় না। এলাকায় দু’টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। সেগুলি অবস্থাও তথৈবচ।

পুরসভার বিরোধী দলনেতা সিপিএমের চিত্তরঞ্জন বিশ্বাসের ক্ষোভ, ‘‘সম্প্রতি এক রাতে অসুস্থ বাবাকে নিয়ে সেবা সনদে গিয়েছিলাম। সেখানে কোনও চিকিৎসকই ছিলেন না।’’ যদিও পুরপ্রধান প্রবোধ সরকারের দাবি, ‘‘ওই সেবা সদনে নিয়মিত চিকিৎসক থাকেন। প্যাথলজির নতুন বিভাগ চালু করা হয়েছে। ন্যাশনাল আরবান মিশন প্রকল্প থেকেও দু’জন চিকিৎসক পাওয়া গিয়েছে। তাঁরা বর্হিবিভাগে রোগী দেখেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement