প্রতীকী ছবি।
আর মাত্র কয়েকমাস হাতে সময়। তারপরেই রাজ্য জুড়ে বিধানসভা ভোটের দামামা বেজে যাবে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে সে ভাবে মিটিং, মিছিল, কর্মী সম্মেলন করতে পারছেন না কোনও রাজনৈতিক দলই। সরকারি স্বাস্থ্যবিধি ভেঙে অনেক সময় মিটিং, মিছিল করলেও বিরোধীরা তা নিয়ে সমালোচনা করতে ছাড়ছে না। আর সেই কারণে মানুষের কাছে পৌঁছতে ডান, বাম, পদ্ম—সব শিবিরই সোশ্যাল মিডিয়ার উপর বিশেষ ভরসা করছে। আর তাই সব রাজনৈতিক দলই প্রতিটি বিধানসভায় নিজেদের আইটি সেলকে ঢেলে সাজিয়েছে। দ্রুত অনেক মানুষের কাছে পৌঁছনোর লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ নিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলি।
রাজ্যের বিধানসভাগুলির মধ্যে অন্যতম ক্যানিং পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্র। এই কেন্দ্রে পর পর দু’বার বাম, কংগ্রেসকে হারিয়ে ক্ষমতা দখল করেছে তৃণমূল। এ বার নিজেদের সংগঠন বাড়িয়ে এই কেন্দ্রে বিজেপি যেমন অনেক বেশি শক্তিশালী হয়েছে, তেমনি বামপন্থীরা কর্মী সমর্থক হারিয়ে অনেক বেশি দুর্বল হয়েছে। কংগ্রেস ও সিপিএম জোট হলেও এই কেন্দ্রে সে ভাবে ভোট বাক্সে প্রভাব ফেলতে পারবে না বলেই দাবি রাজনৈতিক মহলের। তবুও সামনের বিধানসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে সব রাজনৈতিক দলই নিজেদের কর্মকাণ্ড শুরু করেছে। এক্ষেত্রে এ বার সব রাজনৈতিক দলের কাছে বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে তাদের আইটি সেল। যাঁদের আইটি সেল যত বেশি মজবুত, সেই দল বিভিন্ন ধরনের সোশ্যাল মিডিয়াকে তত বেশি করে ব্যবহার করে মানুষের কাছে পৌঁছতে চাইছে।
ক্যানিং পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রে অন্য রাজনৈতিক দলকে অনেক পিছনে ফেলে দিয়েছে বিজেপির আইটি সেল। এই বিধানসভার চারটি মণ্ডলে বিজেপির চারজন আইটি ইনচার্জ রয়েছেন। পাশাপাশি তাঁদেরকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য আরও চারজন কো-আইটি ইনচার্জ নিযুক্ত করেছে বিজেপি। এই সমস্ত কর্মীরা দলের ফেসবুক পেজ, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম-সহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া যেমন দেখাশোনা করেন, তেমনি কেন্দ্রের বিভিন্ন প্রকল্প, প্রধানমন্ত্রীর বার্তা, রাজ্য সভাপতির বার্তা এই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয় মানুষের মধ্যে। জেলার সব বিধানসভার অন্তর্গত যতগুলি আইটি টিম আছে তাঁদেরকে জেলা আইটি ইনচার্জ দেখাশোনা করেন। বিজেপির দক্ষিণ ২৪ পরগনা পূর্ব সাংগঠনিক জেলার আইটি ইনচার্জ রাহুল মৃধা বলেন, “আমরা প্রথম থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আর এই করোনা পরিস্থিতিতে এটির উপর আরও বেশি করে জোর দিচ্ছি। যাতে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা যায়। এই মুহূর্তে মিটিং, মিছিল বেশি করা সম্ভব নয়, তাই আগামী নির্বাচনে বিজেপি কী ভাবছে, তা মানুষকে জানাতে এই মাধ্যমকে বেশি করে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।”
অন্য দিকে, বিজেপির মতো আইটি সেল শক্তিশালী না হলেও তৃণমূল এই বিধানসভায় নিজেদের মতো করে সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে। ক্যানিং পশ্চিম বিধানসভার বিধায়কের ফেসবুক পেজ তৈরি হয়েছে। তেমনি এই ক্যানিং ১ ব্লক তৃণমূলের ফেসবুক পেজ তৈরি করে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছে। রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প, মুখ্যমন্ত্রীর জনমোহিনী কার্যকলাপ, এলাকার উন্নয়নে বিধায়কের ভূমিকা— এই সমস্ত বিষয়ই মূলত তুলে ধরা হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে। এই বিধানসভার তৃণমূলের আইটি সেলের দায়িত্বে থাকা সৌরভ ভুঁইয়া বলেন, “আমাদের নেতৃত্ব সব সময় মানুষের পাশে আছেন। করোনা পরিস্থিতিকে উপেক্ষা করেই তাঁরা উন্নয়ন, এলাকার উন্নয়নের কাজ করছেন। তাঁদের সেই কর্মকাণ্ড, রাজ্য সরকারের উন্নয়নের ক্ষতিয়ান আমরা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে এলাকার মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি। কর্মীদের নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন গ্রুপ তৈরি করে দলের সংগঠনকে আরও মজবুত করা হচ্ছে।” তবে বিজেপি বা তৃণমূলের থেকে এই বিধানসভায় বেশ খানিকটা পিছিয়ে রয়েছে সিপিএম। এই বিধানসভায় সিপিএমের তরফ থেকে একটি ফেসবুক পেজ চালানো হয়। বাকি সিপিএম কর্মীরা ব্যক্তিগত ভাবে নিজেদের অ্যাকাউন্ট থেকেই সিপিএমের ভাবনা, রাজ্য বা রাষ্ট্রের বিভিন্ন নীতির বিরোধিতা করে বিভিন্ন ধরনের পোস্ট করে থাকেন। এই বিধানসভার সিপিএমের সোশ্যাল মিডিয়ার দায়িত্বে থাকা সৌরভ ঘোষ বলেন, “আমরা আমাদের মতো করেই সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করছি। দলের একটি ফেসবুক পেজ চললেও আমরা কর্মীরাই নিজেদের ব্যক্তিগত পেজ থেকে দলের সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য এলাকার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।”