প্রতীকী ছবি
আমপানের পরে দুর্যোগ-বিধ্বস্ত ব্যারাকপুর কমিশনারেট এলাকায় বিভিন্ন দিনে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছিল। সেই ঘটনাকে মাথায় রেখে এ বার ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের আছড়ে পড়ার কয়েক দিন আগেই বিদ্যুৎসংস্থাগুলিকে আগাম সতর্ক করল ব্যারাকপুর কমিশনারেটের পুলিশ। পুলিশের তরফে অনুরোধ করা হয়েছে, দুর্যোগ কেটে গেলে তাদের সঙ্গে কথা না বলে কোথাও বিদ্যুতের সংযোগ চালু না করতে।
ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ১৭টি থানার মধ্যে ১৫টির অধীনেই রয়েছে লোকালয়। কমিশনারেট সূত্রের খবর, অভিজ্ঞতার অভাবে আমপানের সময়ে দুর্যোগের পরে জনজীবন স্বাভাবিক করার কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছিল। দুর্যোগের মোকাবিলায় সব থেকে অসুবিধার সৃষ্টি হয়েছিল যোগাযোগ মাধ্যম বিপর্যস্ত হয়ে পড়ায়।
পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা বলেন, ‘‘গত বছর আমপানের সময়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ায় দুর্যোগ মোকাবিলার কাজে সমস্যা হয়েছিল। তাই এ বার যাতে না হয়, সে জন্য আগে থেকেই পরিকল্পনা করা হয়েছে। বিদ্যুৎসংস্থাগুলিকেও বলা হয়েছে মানুষের সুরক্ষার কারণেই পুলিশের সঙ্গে কথা না বলে কোথাও বিদ্যুতের সংযোগ চালু না করতে।``
কমিশনারেট সূত্রের খবর, বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় আমপানের সময়ে অনেক জায়গাতেই পুলিশের সঙ্গে দীর্ঘ সময় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। এ বার ইয়াসের আগে সেই সব দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। দুর্যোগের সময়ে এবং দুর্যোগের পরে পুলিশের সঙ্গে অন্য প্রশাসনিক দফতরগুলির যোগাযোগ বজায় রাখতে ওয়্যারলেস ব্যবস্থাকে যথাসম্ভব ব্যবহারের কথা ভাবা হয়েছে। সে জন্য ম্যানপ্যাক এবং আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম পুরসভা-সহ অন্যান্য প্রশাসনিক দফতরকেও সরবরাহ করার কথা ভাবা হচ্ছে। দুর্যোগে মোবাইল ফোনের টাওয়ার বিকল হয়ে যাবে ধরে নিয়েই পরিষেবা সংস্থাগুলিকে পুলিশ জানিয়েছে, প্রতিস্থাপনযোগ্য টাওয়ার এবং জেনারেটরের ব্যবস্থা রাখতে। যাতে জরুরি সময়ে যোগাযোগের কোনও সমস্যা না থাকে। একই সঙ্গে মোবাইল জেনারেটরের উপরেও জোর দেওয়া হচ্ছে। যাতে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকাকালীন সময়ে পেট্রল পাম্প থেকে জেনারেটরের জন্য জ্বালানি সংগ্রহের কাজ কিংবা পুরসভাগুলির পাম্পে জল তোলার কাজ অব্যাহত রাখা যায়।
ব্যারাকপুর, হালিশহর, জগদ্দল, নৈহাটি, ভাটপাড়া, বীজপুরের মতো পুর এলাকার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের একটি বড় এলাকা রয়েছে গঙ্গার একেবারে গা ঘেঁষে। তাই ঝড়ের সময়ে গঙ্গার লাগোয়া এলাকাগুলিতে হাওয়ার দাপট যথেষ্ট পরিমাণে থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছে। হাওয়ার দাপটে ছোটখাটো গাছ পড়লে যাতে দ্রুত তা কেটে রাস্তা পরিষ্কার করা যায়, সে জন্য স্থানীয় ক্লাবগুলির সঙ্গেও কথা বলেছে পুলিশ।
কমিশনারেটের এক পদস্থ পুলিশকর্তা বলেন, ``গত বছর দুর্যোগের পরে বহু স্থানীয় মানুষ রাস্তা পরিষ্কারের কাজে হাত লাগিয়েছিলেন। এ বার ক্লাবগুলিকে বলা হয়েছে আগে থেকেই সেই সব স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে। যাতে রাস্তা পরিষ্কার রাখার জন্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর পথ চেয়ে থাকতে না হয়।’’
আমপানের সময়ে ঝড়ের ধাক্কায় গঙ্গার ধারের অনেক পাকাবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। কিন্তু সেই ক্ষতির প্রমাণ না থাকায় অনেকেই কোনও ক্ষতিপূরণ পাননি। এ বার পুলিশ এলাকায় প্রচার করে জানিয়েছে, কারও বাড়ির ক্ষতি হলে, তার ছবি তুলে প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। যাতে ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায়।
আমপানের সময়ে করোনার প্রভাব থাকলেও সে বার অক্সিজেনের জন্য হাহাকার ছিল না। দুর্যোগের জেরে রাস্তা আটকে কিংবা অন্য কারণে হাসপাতাল কিংবা সেফহোমগুলিকে অক্সিজেনের অভাব যাতে না পড়তে হয়, সে জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পর্যাপ্ত অক্সিজেন মজুত রাখতে বলা হয়েছে পুলিশের তরফ থেকে।