রবিবার বিক্রমকে তোলা হল বারাসত আদালতে। নিজস্ব চিত্র
কথা কাটাকাটির সময়ে বাবা-মাকে নিয়ে কটূক্তি করার ফলেই মাথা গরম হয়েছিল বলে পুলিশের কাছে দাবি করেছে বিক্রম সরকার। তার জেরেই রুমমেট, নার্সিং পড়ুয়া উদ্ভব সরকারকে সে মাথায় হাতুড়ি মেরে খুন করে বলে দাবি তদন্তকারীদের।
নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পুলিশের কাছে বিক্রম শুরুতে দাবি করে, ভাড়া বাড়ির মালিক ও তার বন্ধুরা খুন করেছে উদ্ভবকে। তাকেও ফাঁসিয়ে দেওয়া হতে পারে, এই ভয়ে সে উত্তরবঙ্গের গঙ্গারামপুরে পালিয়েছিল। তবে পুলিশি জেরায় এক সময়ে ভেঙে পড়ে বিক্রম। পুলিশের দাবি, রাগের মাথায় রুমমেটকে খুনের কথা স্বীকার করেছে সে।
২৭ নভেম্বর অশোকনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতাল-লাগোয়া একটি ভাড়া বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় প্রথম বর্ষের নার্সিং পড়ুয়া, দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর থানার বাসিন্দা উদ্ভব সরকারের রক্তাক্ত দেহ।
১ ডিসেম্বর গঙ্গারামপুর থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় বিক্রমকে। ২ ডিসেম্বর তাকে বারাসত জেলা আদালতে তোলা হয়েছিল। বিচারক তাকে ১০ দিনের পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
বিক্রম নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করলেও পুলিশের সে কথা ভরসা ছিল না। ভাড়া বাড়ির কর্তা ও গৃহকর্মীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সমস্ত সূত্রই বিক্রমের বিরুদ্ধে যাচ্ছিল।
এক সময়ে বিক্রম জানায়, উদ্ভব তার বাবা-মাকে নিয়ে খারাপ মন্তব্য করেছিলেন। তাতেই মাথা গরম হয়ে যায় বিক্রমের। মাথা ঠান্ডা করতে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় বিক্রম। বাইরে পায়চারি করে, সিগারেট খায়।
কিন্তু মাথা ঠান্ডা করতে পারছিল না। ঘরে ফিরে সে দেখে, উদ্ভব মোবাইলে কিছু দেখছে। ঘরে থাকা হাতুড়ি দিয়ে পিছন দিক থেকে বিক্রম ঘা মারে বলে অভিযোগ। রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ভব লুটিয়ে পড়লে ফ্রিজ থেকে ফলকাটা ছুরি বের করে বেশ কয়েকবার কোপায়। রক্তাক্ত দেহ খাটের নীচে লুকিয়ে ফেলে।
পুলিশের অনুমান, রাতেই পালিয়ে গেলে সরাসরি তার উপরে দোষ গিয়ে পড়বে বলে মনে হয়েছিল বিক্রমের। নিজের রক্তমাখা জামা-কাপড় তার আগে ফেলে আসে পাশের একটি জঙ্গলে। ভাড়ার ঘরের সামনের শৌচালয়ে গিয়ে হাত-পা ধুয়ে নেয়। প্রমাণ লোপাটের জন্য খুনে ব্যবহৃত হাতুড়ি ও ছুরিও ফেলে দেয় জঙ্গলে। এরপরে মৃতদেহ যে ঘরে ছিল, সেখানেই অন্য একটি খাটে কম্বলমুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে সে।
পরদিন ২৭ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে পড়ে। বাড়ির মালিকের সঙ্গে দেখা হলে জানিয়েছিল, দাদার বিয়ের জন্য দেশের বাড়ি যাচ্ছে।
বিক্রমের বয়ান অনুযায়ী ঘটনাস্থল থেকে কিছুটা দূরে জঙ্গলে তল্লাশি চালিয়ে খুনে ব্যবহৃত রক্তমাখা হাতুড়ি, ছুরি ও বিক্রমের রক্তমাখা জামা উদ্ধার করেছে পুলিশ।
রবিবার, ১০ দিনের পুলিশ হেফাজত শেষে বিক্রমকে তোলা হয়েছিল বারাসত আদালতে। বিচারক তাকে জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।