খুনের অভিযোগে ধৃত তারাবানু। —নিজস্ব চিত্র।
কয়েক মাস ধরে নিখোঁজ ছিলেন এক যুবতী। এক পরিচিতের বাড়ির রান্নাঘরের মাটি খুঁড়ে তাঁর দেহাবশেষ উদ্ধার করল পুলিশ।
বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে বাদুড়িয়া থানার ঈশ্বরীগাছা এলাকায়। অভিযোগ, ওই মহিলাকে ঘুমের মধ্যে শ্বাসরোধ করে খুন করে দেহ পুঁতে দেওয়া হয়েছিল। দেহাবশেষ ময়না তদন্তের জন্য বসিরহাট জেলা হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের নাম রহিমা মণ্ডল (৩২)। গোপালনগর থানার নতিডাঙা এলাকায় তাঁর বাড়ি। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক বছর আগে গোপালনগরের সাতবেড়িয়া এলাকায় এক যুবকের সঙ্গে রহিমার বিয়ে হয়। তাঁর এক মেয়ে। বিয়ের কয়েক বছর পরে রহিমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয় নতিডাঙা এলাকার বাসিন্দা বাকিবিল্লা মণ্ডলের। বাকিবিল্লাও বিবাহিত।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বাকিবিল্লার সঙ্গে রহিমা মুম্বইয়ে থাকতেন। বাকিবিল্লার দিদি তারাবানু মণ্ডল ও তাঁর স্বামীও থাকত সেখানে। অভিযোগ, রহিমার সঙ্গে তারাবানুর স্বামীর সম্পর্ক তৈরি হয়। তদন্তকারীদের অনুমান, সম্পর্কের এই টানাপোড়েনের জেরেই রহিমাকে খুনের ছক কষে তারাবানু ও তার ভাই বাকিবিল্লা। তবে এর পিছনে আর কোনও কারণ আছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
রহিমাকে তারাবানুর শ্বশুরবাড়ি বাদুড়িয়ায় নিয়ে যাওয়া হয় কয়েক মাস আগে। অভিযোগ, ঘুমন্ত রহিমাকে শ্বাসরোধ করে খুন করে তারাবানু। প্রমাণ লোপাটের জন্য রান্নাঘরের মাটি খুঁড়ে দেহ পুঁতে দেয়।
পুলিশ জানিয়েছে, রহিমা মুম্বইয়ে থাকলেও বাপের বাড়ির লোকজনের সঙ্গে নিয়মিত কথা হত। গত বছর সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ রহিমার সঙ্গে পরিবারের লোকজন যোগাযোগ করতে পারছিলেন না। তাঁরা গোপালনগর থানায় তারাবানু, বাকিবিল্লা সহ চার জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।
তদন্তে নামে পুলিশ। অভিযুক্তেরা গা ঢাকা দেয়। মঙ্গলবার বিশেষ সূত্রে খবর পেয়ে গোপালনগর থানার পুলিশ বাকিবিল্লা ও তারাবানুকে গ্রেফতার করে। বুধবার বনগাঁ আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের পুলিশ হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পুলিশের দাবি, তারাবানু জেরায় স্বীকার করে, সে রহিমাকে খুন করে শ্বশুরবাড়ির রান্নাঘরে পুঁতে রেখেছে। বৃহস্পতিবার সকালে গোপালনগর ও বাদুড়িয়া থানার পুলিশ তারাবানুকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যায়। মাটি খুঁড়ে উদ্ধার হয় রহিমার দেহাবশেষ। বাদুড়িয়ার বিডিও পার্থ হাজরা জানান, বারাসত আদালতের নির্দেশে পুলিশ বাড়ির মেঝে খুঁড়ে দেহ তুলে ময়না তদন্তে পাঠিয়েছে।
রহিমার বাপের বাড়ির লোকজনের আবার দাবি, বাকিবিল্লা ও তারাবানু নারীপাচারে জড়িত। বাকিবিল্লা প্রেমের ফাঁদে ফেলে মেয়েদের নিয়ে গিয়ে পাচার করে দিত। রহিমার সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটেছে। রহিমাকে পাচার করতে পারেনি বলে খুন করা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।
তারাবানুর জা রিজিয়া থাকেন পাশেই। তিনি বলেন, ‘‘পাশাপাশি ঘরে থাকি। ঘুণাক্ষরেও টের পাইনি, খুন করে বাড়ির মেঝেতে কাউকে পুঁতে রেখেছে। সেই বাড়িতেই আমার ওরা দিব্যি বসবাসও করছিল। ভাবতেই গা শিউরে উঠছে।’’