বড়মা বীণাপাণি দেবীর ঘরের সামনে ‘মাতাম’। নির্মাল্য প্রামাণিক।
কামনা সাগরের পাড়ে দাঁড়িয়ে বুধবার রাতে ঘন ঘন নিজের মোবাইলে সময় দেখছিলেন মহারাষ্ট্র থেকে আসা এক বৃদ্ধ। ‘মাহেন্দ্রক্ষণে’ গেঞ্জি-ধুতি ছেড়ে নেমে পড়লেন জলে। ডুব দিয়ে উঠতেই চোখ-মুখে তৃপ্তি। বললেন, ‘‘এই স্নান বড় পুণ্যের। তাই প্রতি বছর দল বেঁধে ঠাকুরবাড়িতে ছুটে আসি।’’ ঝাড়খণ্ড থেকে আসা এক বৃদ্ধের কথায়, ‘‘আমরা বিশ্বাস করি, কামনা সাগরে হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মতিথিতে স্নান করে মনস্কামনা পূরণ হয়।’’
বৃহস্পতিবার সকালে কামনা সাগরে স্নান করেছেন অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কাছে খবর, ইতিমধ্যেই ঠাকুরবাড়িতে আসা মতুয়া ভক্তের সংখ্যা ২৫ লক্ষ ছাড়িয়েছে।’’ অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি তথা রাজ্যসভার সাংসদ মমতা ঠাকুরও বৃহস্পতিবার দুপুরে দাবি করে বলেন, ‘‘গত বারের থেকেও এ বার অনেক বেশি মতুয়া ভক্ত আসছেন। এখনও পর্যন্ত ২৫ লক্ষ ভক্ত এসেছেন। পুণ্যস্নান চলবে বৃহস্পতিবার রাত ৮টা ৫৫ মিনিট পর্যন্ত।’’
এ দিন ঠাকুরবাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, কেবল মতুয়া ভক্তেরাই নন, সাধারণ মানুষও পুণ্যস্নানে এসেছেন। তাঁদেরই এক জন জগদীশ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ঘড়ি দেখে নির্দিষ্ট সময় মেনে বুধবার রাতেই স্নান করেছি। এই পুণ্যস্নান সম্পর্কে অনেক কথা শুনেছিলাম। আগ্রহ হয়েছিল। এ বার সুযোগ হাতছাড়া করিনি।’’
বৃহস্পতিবার সকালে ঠাকুরবাড়িতে দেখা গেল বিশাল জনস্রোত। ডাঙ্কা, কাঁসিঁ, শিঙা, নিশান নিয়ে হরিধ্বনি দিতে দিতে অসংখ্য মানুষ আসছেন। স্নান সেরে হরিচাঁদ গুরুচাঁদ ঠাকুরের মন্দির প্রদক্ষিণ করছেন তাঁরা দল বেঁধে। সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘের প্রধান উপদেষ্টা, প্রয়াত বড়মা বীণাপাণি ঠাকুরের ঘরের সামনে ‘মাতাম’ দিচ্ছেন ভক্তেরা, শূন্যে বাতাসা ছুড়ছেন। সেই প্রসাদ নিতে হুড়োহুড়ি পড়ছে বাকি ভক্তদের মধ্যে। পুরুষেরা একে অপরকে আলিঙ্গন করছেন। ছোটরা বড়দের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করছে।
বীণাপাণি ঠাকুরের ঘরের মধ্যে তাঁর মূ্তি আছে। ভক্তেরা সেখানে প্রণাম করছেন। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত বড়মা এই ঘরের বারান্দায় বসে মহামেলা চলাকালীন ভক্তদের আশীর্বাদ দিতেন।
ঠাকরনগর জুড়ে বসেছে বিশাল মেলা। কেনাকাটা, খাওয়া-দাওয়া, ঘোরাঘুরি চলছে।