মোবাইল-হাতে: ক্যানিংয়ে। নিজস্ব চিত্র
দৃশ্য ১: সকাল ১০টা। ক্যানিং বাস স্ট্যান্ডে এক অফিস যাত্রী দৌড়ে বাস ধরতে যাচ্ছিলেন। পিছন থেকে আরও একটি বাস সামনে চলে এল। জোরে ব্রেক কষলেন চালক। কানে তাঁর মোবাইল। আর একটু হলেই ধাক্কা মারত ওই যুবককে।
দৃশ্য ২: কানে মোবাইল নিয়ে ক্যানিং স্টেশনের দিক থেকে আসতে গিয়ে একটি টোটোর গায়ে ধাক্কা মেরে কোনও রকমে সামলে নেন এক বাইক আরোহী।
দৃশ্য ৩: হেডফোনে কথা বলতে বলতে আনমনে হেলিকপ্টার মোড়ে রাস্তা পার হচ্ছিলেন এক তরুণী। রাস্তা পার হওয়ার সময়ও কোনও হুঁশ নেই। হঠাৎ একটি গাড়ি সামনে এসে ব্রেক কষল। তা না হলে দুর্ঘটনা ঘটতই।
মোবাইল কানে গাড়ি চালানোয় বা হেডফোনে গান শুনতে শুনতে রাস্তা পার হওয়ায় একের পর এক ঘটছে দুর্ঘটনা। কিন্তু রাস্তাঘাটে মোবাইলে অনেকক্ষণ কথা বলার প্রবণতা কমেনি কারও। এমনকী প্রশাসন থেকে কড়া পদক্ষেপও করা হয়েছে এ বিষয়ে। তবু টনক নড়েনি অনেক চালকেরই।
আরও পড়ুন: শৌচালয় হলেই ফিরবেন নববধূ
ক্যানিং মহকুমা তথা বাসন্তী হাইওয়ের উপরে প্রায় দেখা যায় চালকেরা এক হাতে কানে ফোন নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, সাধারণ পথ চলতি সাধারণ মানুষ, সাইকেল, রিকশা আরোহীরাও যত্রতত্র কানে ফোন নিয়ে কথা বলতে বলতে যাতায়াত করছেন।
স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, চালক মোবাইলে কথা বলতে বলতে গাড়ি চালাচ্ছিলেন দেখেই মুর্শিদাবাদের দৌলতাবাদে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। তারপরেও হুঁশ ফেরেনি চালকদের। আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই চলছে কানে মোবাইল নিয়ে গাড়ি চালানো থেকে শুরু করে রাস্তা পারাপার। শুধু তাই নয়, অনেকে আবার মদ্যপান করেও গাড়ি চালান বলে অভিযোগ। রেষারেষি করতে গিয়ে ওভারটেকের সময়ও ঘটে দুর্ঘটনা। সেই সঙ্গে দ্রুত গতিতে বিপজ্জনক ভাবে গাড়ি চালানো তো আছেই। জেলার পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিংহ বলেন, ‘‘বারুইপুর পুলিশ জেলার বিভিন্ন এলাকায় যাঁরা কানে মোবাইল নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন এরকম ৫০ জনের ড্রাইভিং লাইসেন্স ৬ মাসের জন্য বাতিল করেছি। তা ছাড়া দুর্ঘটনা এড়াতে আমরা বিভিন্ন রাস্তায় স্পিড ব্রেকার লাগিয়েছি। মানুষকে সচেতন করতে নানা ভাবে প্রচার করা হচ্ছে।’’ তবে এক্ষেত্রে মানুষকেও সচেতন হতে হবে বলে তিনি মনে করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা তনিমা বিশ্বাস, সুকুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘প্রায় দেখি চালকরা মোবাইল কানে দিয়ে গাড়ি চালান। কিছু বলতেই কটূক্তি করেন তাঁরা। গাড়ি স্ট্যান্ড থেকে ছাড়ার পর যাত্রী তোলার জন্য প্রথম দিকে আস্তে আস্তে চালানো হয়। এরপরেই গন্তব্যে পৌঁছনোর আগে শুরু হয় রেষারেষি। গাড়িতে উঠলেই ভয়ে বুক কাঁপে।’’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক্যানিং-গদখালি রুটের এক বাস চালক বলেন, ‘‘যাত্রী না হলে কী করে তাড়াতাড়ি চালাব। তাই প্রথমে আস্তে চালাই। যাত্রী তোলার জন্য আমাদের এ সব করতে হয়। না হলে লাভ হবে কী করে।’’ মোবাইলে কথা বলতে বলতে গাড়ি চালানো নিয়ে ওই চালক তকোনও মন্তব্য করেননি।
যদিও ক্যানিং মহকুমা পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সব সময় বিভিন্ন রাস্তায় পুলিশ নজরদারি করা হচ্ছে। কোথাও কোনও গাড়ি বিপজ্জনক ভাবে চালানো হলে সেই চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল করা হয়। ফোন কানে নিয়ে কেউ গাড়ি চালালে, নিয়ম না মানলে কেস দেওয়া হয়। জরিমানা করা হয়। গত মাসে বিপজ্জনক ভাবে গাড়ি চালানো-সহ বিভিন্ন অভিযোগে প্রায় ২০টি কেস করা হয়েছে। প্রায় ৬০ হাজার টাকা গত মাসে জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া গাড়ি চালক ও সাধারণ যাত্রীদের নানা ভাবে সচেতন করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
জেলার পরিবহণ দফতরের এক কর্তা জানান, এটা ঠিক যে বিভিন্ন সময় দেখা যাচ্ছে চালকরা মোবাইলে কথা বলতে বলতে গাড়ি চালাচ্ছেন। এ জন্য পুলিশ ও আমাদের দফতর থেকে নানা পদক্ষেপ করা হচ্ছে। এমন হলে লাইসেন্স বাতিল করা পর্যন্ত হচ্ছে।