তৃণমূলের কর্মী সম্মেলনে উপচে পড়া ভিড়। নেই শারীরিক দূরত্বের বালাই। বেশির ভাগ মানুষ মাস্কও পরেননি। রবিবার হিঙ্গলগঞ্জে। ছবি: নবেন্দু ঘোষ
ক্যানিং থেকে কাকদ্বীপ— ছবিটা প্রায় সর্বত্রই এক। আবার ভাঙড় থেকে জয়নগরের পুজোর বাজারের ভিড়ে কোনও ফারাক নেই। শুধু ভিড়ের ছবিই বা কেন, করোনা-আক্রান্তের ছবিটাও প্রায় গায়ে গায়ে একই রকম। একটা সময় স্বস্তি দেওয়া দক্ষিণ ২৪ পরগনার দৈনিক সংক্রমণ রোজই দু’ শো ছাড়াচ্ছে।
এখনই অবস্থা এমন হলে পুজোর পরে সংক্রমণ-চিত্র কোথায় যাবে, তা নিয়ে চিন্তায় চিকিৎসকেরা। হাসপাতালগুলিতে ইতিমধ্যেই শয্যা-সঙ্কট শুরু হয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সতর্কতা ছাড়া আর কোনও রাস্তা নেই বলে মনে করছেন ডাক্তারবাবুরা।
শুরু থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় সংক্রমণ কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বিশেষ করে প্রতিবেশী কলকাতা বা উত্তর ২৪ পরগনার তুলনায় দক্ষিণে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা অনেকটাই কম। সুস্থতার হারও বেশি। তবে গত কুড়ি দিনের পরিসংখ্যান বলছে, কিছুটা হলেও আক্রান্তের হার বেড়েছে। সেপ্টেম্বরের গোড়ার দিকে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১২ হাজারের কাছাকাছি। ২০ তারিখ নাগাদ আক্রান্তের সংখ্যা পনেরো হাজার পেরোয়।
অর্থাৎ ২০ দিনে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় তিন হাজার জন। রবিবার জেলা স্বাস্থ্য দফতরের তরফে প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী এই মুহূর্তে জেলার মোট আক্রান্তের সংখ্যা কুড়ি হাজার ছুঁই ছুঁই। অর্থাৎ শেষ কুড়ি দিনে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় হাজার পাঁচেক রোগী। পরিসংখ্যান বলছে, সেপ্টেম্বর মাসের ২০ তারিখ অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা ছিল হাজার দেড়েক। এই মুহূর্তে অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা প্রায় দু’হাজার ছুঁই ছুঁই। পাশাপাশি গত আট দিন ধরে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা দু’শোর উপরে থাকছে।
জেলা জুড়ে ব্লক ভিত্তিক বহু সেফ হোম তৈরি করেছে স্বাস্থ্য দফতর। আক্রান্তদের সেখানে রেখে চিকিৎসা চলছে। পাশাপাশি ক্যানিংয়ে কোভিড হাসপাতাল তৈরি হয়েছে। বাঙুর হাসপাতালকেও কোভিড হাসপাতালে বদলে ফেলা হয়েছে। স্বাস্থ্য কর্তাদের দাবি, ব্লক স্তরে প্রচুর পরীক্ষা এবং আক্রান্ত হলে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা, এই দুইয়ে মিলেই জেলার করোনা পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা গিয়েছে। তবে এই মুহূর্তে জেলার করোনা পরিস্থিতি নিয়ে যে স্বস্তির জায়গা নেই, তা বলে দিচ্ছে পরিসংখ্যানই। অনেকেই বলছেন, পুজোর পর পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। আর সেই জায়গাতেই বারবার সতর্ক হতে বলছেন চিকিৎসকরা।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, পুজোর পরে সংক্রমণ বাড়লে, সেই মতো ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। একাধিক ব্লকে নতুন সেফ হোম খোলার পরিকল্পনা রয়েছে স্বাস্থ্য দফতরের। পাশাপাশি হাসপাতালগুলিতে শয্যা সংখ্যা বাড়ানো হতে পারে। সেফ হোমগুলিতে অক্সিজেন সিলিণ্ডারের পরিমাণও বাড়ানো হবে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা স্বাস্থ্য জেলার সিএমওএইচ সোমনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, “করোনা মোকাবিলায় আমরা সব রকম ভাবেই কাজ করে চলেছি। সংক্রমণ বাড়লে সেই মতো ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। তবে মানুষও সতর্ক না হলে পরিস্থিতি খারাপ হবে।”