প্রতীকী ছবি
আমপানের তাণ্ডবে তাঁদের বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। অথচ সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য তৈরি হওয়া নামের তালিকায় তাঁদের নাম ছিল বলে অভিযোগ। সে জন্য অনেকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে সরকারি ক্ষতিপূরণের টাকা। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই ওই টাকা ফিরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিলেন বিডিও।
বাগদা ব্লকের হেলেঞ্চা এবং কোনিয়াড়া ২ পঞ্চায়েত এলাকার ঘটনা। অভিযোগ, ওই দু’টি পঞ্চায়েতের অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়েও টাকা পেয়েছেন। অথচ যাঁরা টাকা পেয়েছেন, তাঁদের এমনকী পাকা বাড়িও আছে।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আমপানের দাপটে বাগদা ব্লকে কয়েক হাজার বাড়ি ভেঙেছিল। ঘূর্ণিঝড়ের পর পরই ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরি করতে শুরু করে পঞ্চায়েতগুলি।
ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্তদের নামের তালিকা তৈরি করেছে ৪ জনের কমিটি। কমিটিতে আছেন পঞ্চায়েত প্রধান, পঞ্চায়েতের বিরোধী দলনেতা, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি এবং পঞ্চায়েতের এগজ়িকিউটিভ অ্যাসিস্ট্যান্ট। ক্ষতিগ্রস্তদের নামের তালিকা তৈরিও হয়। জেলা প্রশাসনের কাছে হেলেঞ্চা ও কোনিয়াড়া ২ পঞ্চায়েতের তালিকা জমা পড়ে যায়।
এরপরেই ওই তালিকা নিয়ে ব্লকের বিভিন্ন এলাকার গ্রামবাসীরা আপত্তি তোলেন। তাঁদের দাবি, প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত অনেকের নাম ওই তালিকায় নেই। আবার ক্ষতিগ্রস্ত নন, এমন মানুষের নামও তালিকায় রয়েছে।
ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, বিডিও অফিসে এসেও অনেক মানুষ ক্ষতিপূরণ চেয়ে আবেদন করেন। তাঁরা দাবি করেন, তাঁদের বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হলেও নাম পঞ্চায়েতের তালিকায় নেই।
তালিকা তৈরি নিয়ে দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের অভিযোগ তোলেন বাসিন্দারা। বিডিও প্রথম তালিকা বাতিল করে নতুন করে তালিকা তৈরির নির্দেশ দেন। নতুন করে তালিকা তৈরি হয়। জেলাপ্রশাসনের কাছে জমা পড়েছে।
এরই মধ্যে প্রথম তালিকা অনুযায়ী, হেলেঞ্চা ও কোনিয়াড়া ২ পঞ্চায়েতের অনেকেই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ক্ষতিপূরণের ২০ হাজার টাকা ঢুকে যায়। চুড়ান্ত তালিকায় তাঁদের অনেকেরই নাম নেই। ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ৯ জুন বাগদার বিডিও জ্যোতিপ্রকাশ হালদার হেলেঞ্চা এবং কোনিয়াড়া-২ পঞ্চায়েতের প্রধান এবং চার সদস্যে কমিটির সকলকে (যাঁরা ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করেছিলেন) লিখিত নির্দেশ দেন। তাতে বলা হয়েছে, বাড়িঘর সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া চুড়ান্ত তালিকায় যাঁদের নাম নেই, অথচ যাঁরা টাকা পেয়েছেন— তাঁদের টাকা ফিরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে। ওই টাকা ট্রেজারি অফিসারের কাছে জমা করতে হবে বলেও বিডিও নির্দেশ দিয়েছেন।
বাগদা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি গোপা রায় বলেন, ‘‘বিডিও নির্দেশ দিয়েছেন। সেই মতো টাকা ফিরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করা হয়েছে।’’ হেলেঞ্চা পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের চায়না বিশ্বাস বলেন, ‘‘বিডিওর নির্দেশ পেয়েছি। ক্ষতিগ্রস্ত না হয়েও যাঁরা টাকা পেয়েছেন, তাঁদের টাকা ফিরিয়ে দিতে বলেছি। পঞ্চায়েত সদস্যদের বলেছি, সকলকে জানিয়ে দিতে।’’
পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম তালিকায় নাম ছিল ১৯৯ জনের। পরবর্তী সময়ে তৈরি হওয়া চুড়ান্ত তালিকায় নাম রয়েছে মাত্র ৬৩ জনের। কেন তালিকায় এমন পার্থক্য। প্রধান বলেন, ‘‘অল্প সময়ের মধ্যে তড়িঘড়ি তালিকা তৈরি করতে গিয়ে প্রথম তালিকায় কিছু ভুলভ্রান্তি হয়ে গিয়েছিল।’’ কোনিয়াড়া ২ পঞ্চায়েতের প্রধান বিজেপির অনামিকা বিশ্বাস বলেন, ‘‘বিডিওর নির্দেশ মতো ক্ষতিগ্রস্ত না হয়েও যাঁরা টাকা পেয়েছেন, তাঁদের টাকা ফিরিয়ে দিতে বলেছি। প্রথমে পঞ্চায়েত সদসেরা ক্ষতিগ্রস্তদের নামের যে তালিকা দিয়েছিলেন, সেটাই জমা করা হয়েছিল।’’
স্থানীয় সূত্রের খবর, এখন অবশ্য কেউ টাকা ফিরিয়ে দিতে শুরু করেননি। ওই টাকা ফিরিয়ে আনতে যথেষ্ট কাঠখড় পোড়াতে হবে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল। বিডিও বলেন, ‘‘যাঁরা তালিকা তৈরি করেছেন, তাঁদেরই দায়িত্ব, টাকা ফিরিয়ে নেওয়ার।’’
বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলার সম্পাদক তথা বাগদা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য অমৃতলাল বিশ্বাস বলেন, ‘‘হেলেঞ্চা ও কোনিয়াড়া ২ পঞ্চায়েতের ৪২৮ জন মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ক্ষতিপূরণের টাকা ঢুকেছে। এঁদের বেশিরভাগই ক্ষতিগ্রস্ত নন। তাঁদের দোতলা, তিনতলা পাকা বাড়িও রয়েছে। ওই টাকা এখনও ফেরত হয়নি।’’ তাঁর হুঁশিয়ারি, এক সপ্তাহের মধ্যে টাকা ফিরিয়ে না নেওয়া হলে বিডিও অফিস ঘেরাও করে স্মারকলিপি জমা দেওয়া হবে।
তৃণমূলের বাগদা বিধানসভা কমিটির চেয়ারম্যান তরুণ ঘোষ বলেন, ‘‘প্রথম তালিকা তৈরির সময়ে স্বচ্ছতা ও আন্তরিকতার অভাব ছিল। ক্ষতিগ্রস্ত না হয়েও যাঁরা টাকা পেয়েছেন, সেই টাকা ফিরিয়ে নিতে পদক্ষেপ করা হয়েছে। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তেরা যাতে টাকা পান, সেটাও নিশ্চিত করা হচ্ছে।’’