প্রতীকী ছবি
ডান্ডা উঁচিয়ে কাজ হয়নি। কান ধরে ওঠবসেও ফল মেলেনি। সচেতনতা বাড়েনি লাগাতার প্রচারে। এ বার এলাকায় করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ায় টনক নড়ল মানুষের। নিমেষে বন্ধ হল দোকানপাট। ফাঁকা হয়ে গেল বাজার।
সোমবার সকাল থেকে রাস্তাঘাট ছুল সুনসান। দেখা নেই বাইক আরোহীদের। নেই সাইকেল, ভ্যান টোটোর দাপাদাপি। থলে হাতে লোকজনের আনাগোনা ছিল না সড়কে জুড়ে। কেবল মাত্র হাতেগোনা কয়েকটি ওষুধের দোকান খোলা ছিল অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভা এলাকায়।
সোমবার সকালে এটিই ছিল অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভা এলাকার চেহারা।
যদিও রবিবার দুপুর পর্যন্ত শহরের পরিবেশ ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত। অকারণে মানুষকে পথেঘাটে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গিয়েছে। বাইক, সাইকেল, টোটো, ভ্যানে চেপে মানুষ বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছিলেন। এক বাইকে তিনজনকেও দেখা গিয়েছে। প্রবীণ নাগরিকদের হেঁটে থলে হাটে বাজারে ভিড় করতে দেখা গিয়েছে। সচেতন শহরবাসীর মনে প্রশ্ন জাগছিল, অশোকনগর থেকে কি লকডাউন উঠে গিয়েছে!
চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে সব কিছুর পরিবর্তনের কারণ, করোনা আতঙ্ক। অশোকনগরের বাসিন্দা এক ব্যক্তির রবিবার করোনাভাইরাসে সংক্রামিত হওয়ার প্রমাণ মিলেছে। সেই খবর জানাজানি হতেই শহরের পরিবেশের আমূল পরিবর্তন ঘটে গিয়েছে। আতঙ্কিত মানুষ স্বেচ্ছায় নিজেদের ঘরবন্দি করে রাখছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, লকডাউনের শুরু থেকে পুলিশ-প্রশাসন, পুরসভার তরফে বারবার প্রচার কর্মসূচির মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করা হচ্ছিল। মানুষের কাছে অনুরোধ করে বলা হয়েছে, খুব প্রয়োজন ছাড়া তাঁরা যেন বাড়ির বাইরে না বের হন। শহরবাসীর একাংশকে অকারণে পথে বেরনো বন্ধ করতে পুলিশ ধরপাকড় শুরু করেছিল। তারপরেও মানুষের অকারণ পথে বেরোনো বন্ধ করা যায়নি। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রোজ সকালে বাজারে এসে লোকজন গল্পগুজব করে সময় কাটিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। স্বামী স্ত্রী এক সঙ্গে, বা পরিবারের ছোটদের নিয়ে লোকজন বাজারে বের হচ্ছিলেন। গ্রামীণ এলাকা থেকেও মানুষ শহরে ভিড় করছিলেন। এক পুলিশ কর্তার কথায়, ‘‘এমনও দেখা গিয়েছে, লোকজন একটিমাত্র এঁচোড় কিনে বাড়ি ফিরছেন! সোমবার থেকে আমাদের আর মানুষকে বোঝাতে হচ্ছে না। করোনা আতঙ্কে নিজেরাই বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না।’’ রবিবার সন্ধ্যার পরে করোনা আক্রান্তের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই শহরবাসী গোটা এলাকায় পাড়ার মোড়ে মোড়ে বাঁশের ব্যারিকেড তৈরি করেছেন, বহিরাগতদের প্রবেশ বন্ধ করা হয়েছে। পুরসভা এবং ব্যবসায়ী সমন্বয় সমিতি যৌথ ভাবে পুরসভা এলাকার সমস্ত বাজার তিনদিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে দিয়েছেন। যে ব্যক্তি করোনায় আতঙ্কিত হয়েছেন, তাঁর বাড়ি থেকে ৬০ মিটার অংশে পুলিশ-প্রশাসনের তরফে বাঁশের ব্যারিকেড করা হয়েছে। আশপাশের লোকজন আতঙ্কে দরজা-জানলা বন্ধ করে দিয়েছেন। ওই পরিবারটির আট সদস্যকে পুলিশ-প্রশাসন বারাসতে কোয়রান্টিন কেন্দ্রে পাঠিয়েছে রবিবার রাতে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পরিবারের একস সদস্য স্থানীয় তৃণমূল নেতা। তিনি কোয়রান্টিন কেন্দ্রে যেতে রাজি ছিলেন না। ঘন্টা তিনেক সময় ধরে দীর্ঘ চাপানউতোরের পরে তিনি রাজি হন। ফোনে ওই নেতা বলেন, ‘‘রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর থেকে আমাদের হোম কোয়রান্টিনে থাকতে বলা হয়েছিল। সে কারণেই প্রথমে আমরা বাড়িতেই থাকতে চেয়েছিলাম।’’
বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ওই নেতা এলাকায় ঘোরাঘুরি করেছেন। পুরপ্রধান প্রবোধ সরকার বলেন, ‘‘আক্রান্তের ওই আত্মীয় এলাকায় কাদের সঙ্গে মেলামেশা করেছেন, আমরা তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।’’অশোকনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে কর্মরত আয়াদের বাসিন্দারা ১৪ দিন বাড়িতে থাকতে অনুরোধ করেছেন। আক্রান্তের বাড়ি এলাকার লোকজন হাবড়ার পাটপট্টি কালীবাড়ি বাজার এলাকায় বাজার করতে আসেন। মঙ্গলবার থেকে বাজারটি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাজার সমিতি ও প্রশাসন।
তবে হাবড়া শহরের মানুষের মধ্যে এ দিনও করোনা আতঙ্কের কোনও প্রভাব ছিল না। সকাল থেকেই মানুষ বাজারে ভিড় করেছেন। হতাশ এক পুলিশ কর্তার বক্তব্য, ‘‘মানুষ আর কবে নিজেদের ভাল বুঝবেন!’’