Gobardanga

Gobardanga: যমুনা নদী, বাঁওড় সংস্কারের দাবিতে পথে নামলেন মানুষ

স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, প্রতি বছর বর্ষায় ১ মাসের বেশি সময় ধরে জলমগ্ন থাকে পুরসভার বেশ কিছু এলাকা।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র  

গোবরডাঙা  শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০২২ ০৮:৪৫
Share:

সচেতন: জলাভূমি বাঁচাতে পথে নেমেছেন মানুষ। নিজস্ব চিত্র।

দূর থেকে দেখলে মনে হয় সবুজ মাঠ। আসলে তা কচুরিপানায় ঢাকা যমুনা নদী। সংস্কারের অভাবে বর্তমানে নাব্যতা হারিয়ে মৃতপ্রায়। এ বার যমুনা নদী সংস্কারের দাবিতে পথে নামলেন বিজ্ঞানমনস্ক সচেতন মানুষেরা। তাঁদের সঙ্গে পা মেলালেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

Advertisement

রবিবার সকালে গোবরডাঙায় পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কমিটির উদ্যোগে পালন করা হল জলাভূমি দিবস। মিছিল, মাইকে সচেতনতার প্রচার, সম্মেলনের মাধ্যমে যমুনা নদী এবং কঙ্কনা বাঁওড় সংস্কারের দাবি তোলা হয়। পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের জেলা কমিটির সদস্য তথা চিকিৎসক নারায়ণচন্দ্র কর বলেন, ‘‘ আমাদের শরীরে কিডনির প্রয়োজন। কারণ এটি শরীরের দূষিত পদার্থ ছেঁকে বের করতে সাহায্য করে। বৃহত্তর গোবরডাঙার মানুষের কাছে যমুনা নদী এবং কঙ্কনা বাঁওড় কিডনির মতো। সংস্কারে অভাবে এগুলি মৃতপ্রায়। কিছু সুবিধাবাদী মানুষ নদীর জমি দখল করে নিচ্ছে। ফলে একদিকে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে, অন্যদিকে নিকাশির সমস্যা দেখা দিচ্ছে।’’ তাঁদের দাবি, নদী ও বাঁওড় দখলমুক্ত করে পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের মাধ্যমে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে হবে।

শহরবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে গোবরডাঙায় রাজনৈতিক মদতে অবাধে পুকুর, ডোবা, জলায়শ ভরাট হচ্ছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় এই বেআইনি কাজ চললেও কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। শহরের প্রবীণ বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, অতীতে যমুনা নদী ছিল খরস্রোতা। বড় বড় নৌকা চলত। মানুষ জলপথে যাতায়াত করতেন। ব্যবসা বাণিজ্যের কাজ হত নৌকোয়। কথিত আছে জলপথেই রানি রাসমণি এখানে এসেছিলেন। বর্তমানে নদী বুজে গিয়ে নিকাশির সমস্যাদেখা দিয়েছে।

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, প্রতি বছর বর্ষায় ১ মাসের বেশি সময় ধরে জলমগ্ন থাকে পুরসভার বেশ কিছু এলাকা। অভিযোগ, বৃষ্টির জমা জল বের তো হয়ই না। উল্টে যমুনা নদীর জল লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। আরও অভিযোগ, জমা জল বেরিয়ে যাওয়ার কোনও পথ নেই। মানুষ জল নামার জন্য রোদের অপেক্ষায় বসে থাকেন। রাস্তায় কোথাও হাঁটুজল, কোথাও কোমরসমান জল দাঁড়িয়ে যায়। বাসিন্দারা নৌকায়, কলাগাছের ভেলায়, গাড়ির টিউবে করে যাতায়াত করেন। অনেকে জমা জলের মধ্যে দিয়ে ভিজেই যাতায়াত করতে বাধ্য হন। বৃদ্ধ, অসুস্থ মানুষ ও মহিলাদের পক্ষে যাতায়াত খুবই কষ্টকর হয়ে ওঠে। অনেক জায়গায় বাড়িতে জল ঢুকে পড়ায় তাঁদের গোটা বর্ষাকাল অন্যত্র আশ্রয় নিতে হয়। জমা জলে সাপ, পোকামাকড় ব্যাঙের উপদ্রব বাড়ে। দীর্ঘদিন জমা জল পেরিয়ে যাতায়াতের ফলে ত্বকের সমস্যায় ভোগেন অনেকে। পুরসভার থেকে অবশ্য ত্রিপল ও চাল, শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু বাসিন্দাদের দাবি, সাহায্য নয়, বরং স্থায়ী সমাধানের ব্যবস্থা করুক প্রশাসন।

নদী, খাল ও বাঁওড় সংস্কার না হওয়ায় প্রতি বছর এই পরিস্থিতিতৈরি হচ্ছে বলে দাবি শহরবাসীর। প্রবীণ বাসিন্দারা জানালেন, অতীতে নদীতে জোয়ার ভাটা খেলত। বৃষ্টির জমা জল যমুনা হয়ে বেরিয়ে যেত। বর্তমানে নদীর জলধারণ ক্ষমতা নেই। উল্টে প্রতি বছর বর্ষায় নদীর জল লোকালয়ে ঢুকছে। অভিযোগ, নাব্যতা বাড়াতে অতীতে যমুনা থেকে পলি তোলা হলেও তা নদীর পাড়েই ফেলে রাখা হয়। ফলে বৃষ্টিতে সেইপলি ধুয়ে ফের নদীতে মিশে গিয়ে সমস্যা বেড়েছে।

এলাকায় নিকাশি সমস্যার বিষয়টি মানছেন পুরপ্রধান শঙ্কর দত্ত। তিনি বলেন, ‘‘যমুনা নদী এবং কঙ্কনা বাঁওড় সংস্কারের আবেদন জানিয়ে সেচ দফতরকে চিঠি দেওয়া হচ্ছে। নতুন করে আর গোবরডাঙায় পুকুর ডোবা জলাজমি ভরাট করতে দেওয়া হবে না। কড়া পদক্ষেপ করা হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement