যানজটে হাঁসফাঁস অবস্থা হয় মানুষের। — নিজস্ব চিত্র
অটো-টোটোয় এখনও দিব্যি স্বচ্ছন্দ তিনি। বেশভুষার বাহারেও বোঝার উপায় নেই তাঁর পদের ওজন। জনসংযোগেও ঘাটতি আছে বলে শোনা যায় না। তা সত্ত্বেও মগরাহাট পূর্ব কেন্দ্রের বিধায়ক নমিতা সাহার কিছু কাজ নিয়ে খুশি নন বহু মানুষ।
২০১১ সাল থেকে পর পর দু’বার এই কেন্দ্রে তৃণমূলের টিকিটে দাঁড়িয়ে ভোটে জিতেছেন নমিতা। কিন্তু এলাকার উন্নয়ন তাঁর আমলে তেমন গতি পায়নি বলে অভিযোগ। সেই তিরে বিদ্ধ করেই ক্রমশ ঘর গুছিয়ে নিয়েছে বিজেপি। গত লোকসভা ভোটে এই এলাকায় ভাল ফল করে তারা। সিপিএমও অনুন্নয়ন নিয়ে প্রচারে নেমে ভাল সাড়া পাচ্ছে বলে দলের দাবি।
মগরাহাটের যানজট দীর্ঘ দিনের সমস্যা। রাস্তার উপরে বসা দোকান সরিয়ে ফেলা বা অটো-ভ্যান রাখার আলাদা স্ট্যান্ড তৈরির পরিকল্পনা করা হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি বলে বিরোধীদের অভিযোগ। ফলে সারা বছর, বিশেষত বৃহস্পতি ও রবিবার হাটবারে যানজটে জেরবার হতে হয় বাসিন্দাদের।
তাঁদের দীর্ঘ দিনের দাবি, স্টেশন-লাগোয়া এলাকায় একটি বালিকা বিদ্যালয় হোক। বিরোধীদের অভিযোগ, সে দাবিও মেটাতে পারেননি বিধায়ক। বিজেপি নেতা পার্থ হালদার, পলাশ প্রামাণিকের অভিযোগ, কৃষিপ্রধান এলাকা হলেও খালগুলি দীর্ঘ দিন ধরে সংস্কার হয়নি। ফলে হাজার হাজার বিঘা কৃষি জমিতে বর্ষায় কোমর সমান জল জমে থাকে। চাষ করা যায় না। আবার গরমের সময় জলের অভাবে চাষ হচ্ছে না।
মোহনপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি বহু বছর আগে ১২ শয্যার অনুমোদন পেলেও আজ পর্যন্ত শয্যা চালু হল না। স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকের অভাবে স্বাস্থ্যকেন্দ্র বেহাল।
গ্রামে গ্রামে নলকূপ বসানো হলেও তা কিছু দিনের মধ্যে খারাপ হয়ে যাচ্ছে। নলকূপ থেকে আবর্জনামিশ্রিত জল বেরোচ্ছে। পানীয় জলের সমস্যা এখনও মেটেনি। কিছু এলাকায় পাইপ লাইনের জল সরবরাহ হলেও তা সংস্কার না হওয়ায় পাইপ ফেটে থাকায় পাইপ লাইনের জল সর্বত্র যাচ্ছে না।
শাসক দলের মদতে মগরাহাট, চাকদা, ধনপোতায় খালের পাড় দখল করে বড় বড় দোকান, বাড়ি নির্মাণ হচ্ছে বলেও অভিযোগ।
সিপিএমের নেতা চন্দন সাহার আবার বক্তব্য, মগরাহাটে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই। কিছু কিছু এলাকার মানুষের ভয়ে ভয়ে থাকেন। কিছু এলাকা রয়েছে, যেখানে সভা-সমিতি করতে গেলে হামলার আশঙ্কায় ভোগেন বিরোধীরা।
গত পঞ্চায়েত ভোটে শাসক দল বিরোধীদের অনেক জায়গায় মনোনয়ন জমা দিতে দেয়নি বলেও অভিযোগ। মারধর করে হটিয়ে দিয়েছিল। চন্দন বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত পাইপ লাইনের সাহায্যে আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জল সরবরাহ হল না। মগরাহাট থেকে জয়নগরের দক্ষিণ বারাসত যাওয়ার রাস্তাও দীর্ঘ দিন ধরে বেহাল। বারুইপুর বা জয়নগরে যাতায়াতের জন্য আজও বাস পরিষেবা চালু হল না। ছোট গাড়ি, অটো-টোটোই ভরসা।’’ মগরাহাটের বাসিন্দারের কলকাতায় যাওয়ার একটাই মাধ্যম, রেলপথ। কিন্ত যথেষ্ট সংখ্যায় ট্রেন না চলাচল করায় বাদুড়ঝোলা হয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। গোকর্ণী প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর অভাবে একেবারই বেহাল বলে অভিযোগ চন্দনের। বাসিন্দাদের নির্ভর করতে হয় মগরাহাট গ্রামীণ হাসপাতালের উপরে। সেখানে আবার ‘রেফার’ করে দেওয়ার প্রবণতা খুবই বেশি।
বিরোধীদের কথার গুরুত্ব দিতে রাজি নন বিধায়ক। যানজট সমস্যা নিতে তাঁর বক্তব্য, সপ্তাহে দু’দিন হাট বসে। তা ছাড়া, ট্রেনের যাত্রী ও স্থানীয় বাসিন্দারা হাটের দিনে ভিড় জমানোয় যানজট হয়। যানজটমুক্ত করতে নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র দু’টির বেহাল পরিকাঠামোর বিষয়ে বিধায়কের বক্তব্য, ‘‘ওই দু’টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে উন্নয়নের জন্য উদ্যোগ করা হচ্ছে।’’ পানীয় জল, বিদ্যুৎ, রাস্তাঘাট তৈরি হয়েছে বলে তাঁর দাবি। কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, একশো দিনের কাজের প্রকল্প-সহ সমস্ত সরকারি প্রকল্পের সুবিধা মানুষ পাচ্ছেন বলেও জানালেন তিনি।
এলাকায় গণতন্ত্র নেই বলে বিরোধীদের অভিযোগ মানতে চাননি নমিতা। তাঁর কথায়, ‘‘বিরোধিতার জন্য অনেকে অনেক কথা বলেন।’’