—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে খুন-ধর্ষণের ঘটনার পরে দোষীদের শাস্তির দাবিতে রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। তার আঁচ এসে পড়েছে সীমান্ত শহর বনগাঁতেও। নাগরিক সমাজ পথে নেমে সরব হয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে আর কোনও বিষয়কে নিয়ে বনগাঁর নাগরিক সমাজকে এমন মুখর হতে দেখা যায়নি বলে মনে করছেন অনেকেই।
আর জি কর-কাণ্ডের পরে পুজো উদ্যোক্তারা দোলাচলে ছিলেন, আয়োজনে কাটছাঁট হবে কিনা, সেই ভাবনা ঘুরপাক খাচ্ছিল। তবে পরে পুজোর তোড়জোড় শুরু হয়। পুজো উপলক্ষে এখানে অসংখ্য পত্রপত্রিকা, লিটিল ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয়। এ বার সে সব অবশ্য সংখ্যায় কমে গিয়েছে।
পুলিশ-প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার বনগাঁ শহরে সব মিলিয়ে পুজো হচ্ছে ১০৩টি। বড় বাজেটের পুজোর সংখ্যা ২১টি। পুজোর দিনগুলিতে দর্শনার্থীদের সাহায্যের জন্য ৭টি পুলিশ সহায়তা কেন্দ্র থাকছে। যানজট নিয়ন্ত্রণে ৩৭টি ড্রপগেট করা হচ্ছে। থাকছে পুজোর গাইড ম্যাপ। পুলিশ আধিকারিকেরা মণ্ডপগুলির নিরাপত্তা এবং অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখছেন।
অভিযান সঙ্ঘের পুজো ৭৯ বর্ষের। এ বার থিমস ‘অমৃতের সন্ধানে।’ পরিবেশ সচেতনতার বার্তা দিতে পরিবেশবান্ধব উপকরণ দিয়ে সেজে উঠছে মণ্ডপ। প্রতাপগড় স্পোর্টিং ক্লাবের থিম ‘কোমল গান্ধার।’ হিমাচল প্রদেশের কাংড়া চিত্র শিল্পের অন্যতম প্রধান রাগ কোমল গান্ধারের উপরে ভিত্তি করে সেজে উঠছে মণ্ডপ। আয়রন গেট স্পোর্টিং ক্লাব এবং শিমূলতলা অধিবাসীবৃন্দের পুজোর মণ্ডপ তৈরি হয়েছে কর্নাটকের বিধানসভার আদলে। রেটপাড়া স্পোটিং ক্লাবের থিম, ‘মা আসছেন মায়ের ঘরে।’ টিন দিয়ে তৈরি হচ্ছে মণ্ডপ।
গান্ধী পল্লি বিবেকানন্দ স্পোর্টিং ক্লাবের থিম, ‘সমারোহে এস হে পরমতর।’ পুজোয় ব্যবহৃত যাবতীয় সামগ্রী দিয়েই তৈরি হচ্ছে মণ্ডপ। মতিগঞ্জ ৩ নম্বর টালিখোলা এগিয়ে চলো সঙ্ঘের থিম, বৃন্দাবনের ‘প্রেম মন্দির।’
আমলাপাড়া অ্যাথলেটিক ক্লাবের এ বছর প্ল্যাটিনাম জুবিলি বর্ষ। পুজোর থিম, ‘শহর জুড়ে কলতান আমলাপাড়ায় রাজস্থান।’
কুমোর পাড়ার গরুর গাড়ির থিমে সেজে উঠছে ১২-র পল্লি স্পোর্টিং ক্লাবের পুজো মণ্ডপ। জাগ্রত সঙ্ঘের পুজোর থিম ‘দে দে পাল তুলে দে মাঝি’। বনগাঁ স্পোর্টিং ক্লাবের পুজোর থিম, ‘ইতি তোমার প্রিয়তমা।’ চিঠির অতীত ঐতিহ্যকে স্মরণ করিয়ে দিতে পুজো উদ্যোক্তারা মণ্ডপ ভাবনায় চিঠি এবং ডাক ব্যবস্থাকে প্রাধান্য দিয়েছেন। মণ্ডপ ডাকঘরের আদলে তৈরি হচ্ছে। তার মধ্যে আধপোড়া, দলা পাকানো চিঠি দেখা যাবে। পশ্চিমপাড়া স্পোটিং ক্লাবের পুজোয় গাছহীন পৃথিবীর যন্ত্রণার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। চড়কতলা স্পোর্টিং ক্লাবের থিম, ‘বোধোদয়।’ শিমূলতলা শান্তি সঙ্ঘের এ বারের থিম, ‘মায়ের পুজোয় বাবাকে স্মরণ।’ মধ্যবিত্ত পরিবারের গৃহকর্তার সংগ্রাম থিমের বিষয়বস্তু।
জ্ঞানবিকাশিনী সঙ্ঘের পুজোর থিম, ‘ধামসা মাদল।’ বাঁকুড়ার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়েছে এখানে।
নোবেল স্পোর্টিং ক্লাবের মণ্ডপ হচ্ছে রাজস্থানের প্যাগোডা মন্দিরের আদলে। বনগাঁ রেল বাজার ভারত সঙ্ঘের থিম, ‘প্রজাপতির দেশে।’ বিদ্যায়তন ক্লাবের থিম, ‘মহাপীঠ তারাপীঠ।’ বক্সীপল্লি ইয়ং বেঙ্গল স্পোটিং ক্লাবের থিম ‘কৃষ্ণলীলা পার্ক।’ চাপাবেড়িয়া ঠাকুরপল্লি ইউনাইটেড স্পোটিং ক্লাবের থিম, ‘পাখি সব করে রব।’
১১-র পল্লি যুব গোষ্ঠীর পুজোর থিম, দক্ষিণ ভারতের একটি উৎসবের আদলে। প্রফুল্লনগর পুজো কমিটি এ বারের থিম, ‘কৈলাস ধাম।’ গোপালনগরের পাল্লা দক্ষিণপাড়া পুজো কমিটি ৮৯ বর্ষে থিম করেছে ‘দহন।’ ক্রমাগত গাছ কাটা, অতিমাত্রায় প্লাস্টিকের ব্যবহারের ফলে যে বিশ্ব উষ্ণায়ন ও পরিবেশ দূষণ ঘটছে, সেই চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।