বাঁ দিকে, শিবিরে আশ্রিতদের সঙ্গে কথা বলছেন মুখ্যমন্ত্রী। নিজস্ব চিত্র। ডান দিকে, মঞ্চে ত্রাণ বিলি। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
বাড়িতে বছর তিরিশের প্রতিবন্ধী মেয়ে অশোকনগরের বনবনিয়া এলাকার বাসিন্দা বকুল মজুমদারের। গত বুধবারের ঝড়ে তাঁর মাটি-ইটের দেওয়াল ভেঙে গিয়েছে। ঘরের ছাউনি উড়ে গিয়েছে। টালি ভেঙেছে। ঝড়ের সময়ে তিনি মেয়েকে নিয়ে ঘরের মধ্যেই ছিলেন। এখন মনে করেন, নেহাতই বরাত জোরে প্রাণে বেঁচেছেন। বকুলদেবীর স্বামী লটারির টিকিট বিক্রি করেন। তিনি অসুস্থ থাকায় এখন কাজ বন্ধ। সোমবার অশোকনগরের কাজলা রবীন্দ্র শিক্ষানিকেতন স্কুলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে ত্রাণ নিতে এসে তিনি বললেন, ‘‘ঘরের যা অবস্থা, তাতে সেখানে এখন বসবাস করার মতো পরিস্থিতি নেই। কিন্তু মেয়ে হাঁটতে পারে না। তাকে নিয়ে শিবিরে আসা সম্ভব নয়। তাই কোনও রকমে ত্রিপল দিয়ে ঢেকে ঢুকে বাড়িতে রয়েছি। ত্রাণের থেকেও আমার এখন প্রয়োজন, একটি বাড়ির। সুযোগ পেলে মুখ্যমন্ত্রীকে ঘরের কথা বলব।’’
সোমবার দুপুরে বকুলদেবী মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে ত্রাণের প্যাকেট নিতে পারলেও তাঁকে ঘরের কথা বলার সুযোগ পাননি। শুধু বকুলদেবীই নন, অশোকনগরের কাজলা, মোহনপুর, বনবনিয়া এলাকায় ঝড়ে যাঁদের বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাঁরা এখন ত্রাণের থেকেও বেশি করে চাইছেন সরকার দ্রুত সকলের ঘরে ফেরার ব্যবস্থা করুক। সমীরণ কর্মকার নামে ত্রাণ শিবিরে থাকা এক প্রৌঢ় বললেন, ‘‘প্রয়োজনে দু’দিন না খেয়ে থাকা যায়। আগে তো ঘরের নীচে বাস করি।’’ ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নেওয়া মানুষজন জানালেন, এখানে সকালে টিফিন, দুপুরে এবং রাতে রান্না করা খাবার দেওয়া হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রী এসে ত্রাণ বিলি করবেন, সে জন্য রবিবার সন্ধ্যা থেকে হঠাৎ ত্রাণ শিবিরে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। যদিও মুখ্যমন্ত্রী এ দিন ৫৬ জনের হাতে ত্রাণের মালপত্র তুলে দিয়েছেন।
ত্রাণ শিবিরে গিয়ে দেখা গেল, এক একটি ঘরে গাদাগাদি করে মানুষ বাস করছে। মুখ্যমন্ত্রী আসবেন বলে গোটা স্কুল চত্বরে ব্লিচিং পাউডার ছড়ানো হয়েছিল। এত দিন স্কুল চত্বরে কাদা ছিল। মমতার সফরের সুবাদে সেখানে বালি ও ইট পাতানো হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী যে ত্রাণের প্যাকেট দিয়েছেন, তারমধ্যে ছিল ঢাকনা-সহ প্লাস্টিকের বালতি, জগ, মগ, ঢাকনা-সহ হাঁড়ি, কড়াই, খুন্তি, গামলা, বাটি, ত্রিপল, শাড়ি, ধুতির মতো ১৯টি সামগ্রী। এ ছাড়াও, চাল, আলু, নুন, মুড়ি, চিঁড়ে, ডালও ছিল। যাঁরা ত্রাণ এ দিন পেয়েছেন তাদের মঞ্চের পাশে বসানোর ব্যবস্থা হয়েছিল। প্রত্যেকের বুকে ক্রমিক সংখ্যা লেখা কাগজের ব্যাজ। যার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন।
মুখ্যমন্ত্রী চলে যাওয়ার পরে হাবরা পুরসভা থেকে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বেশ কিছু ঝড়ে বিধ্বস্ত পরিবারের হাতে ত্রাণের প্যাকেট তুলে দেন। অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভার চেয়ারম্যান প্রবোধ সরকার জানিয়েছেন, ঝড়ে যাঁদের ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাঁদের শীঘ্রই ঘর মেরামত তৈরির কাজ শুরু করা হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন মঞ্চেই খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে স্বরূপনগরের বন্যা পরিস্থিতি দেখতে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। জেলাশাসক মনমীত কৌর নন্দা এবং খাদ্যমন্ত্রীকে চারটি পৃথক দল তৈরি করে জেলার চারটি মহকুমার বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন।
মমতা এ দিন বিরোধীদের আক্রমণ করে বলেন, ‘‘অতীতে ঘুমন্ত অবস্থায় জল ছেড়ে মানুষকে মেরে ফেলা হতো। এ বার তা আমরা হতে দিইনি।’’ তিনি সহকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন, ‘‘যতক্ষণ না সমস্ত মানুষ ত্রাণ শিবির থেকে ঘরে ফিরে যাচ্ছেন, ততক্ষণ আমরা কাজ করে যাব। এটা আমাদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য।’’