কোনও-মতে: এখনও এ ভাবে বাসা বেঁধে আছেন বহু মানুষ। হাসনাবাদের গ্রামে। নিজস্ব চিত্র
আমপানে বাঁধ ভেঙে যাওয়ায়, যেখানে বাঁধ ছিল সেখান থেকে কিছুটা দূরে রিং বাঁধ দেওয়া হয়। এর ফলে ১টা পাকা বাড়ি-সহ ১০ টা মাটির বাড়ি এখন ডাঁসা নদীর গর্ভে। আমপানের রাতের পর থেকেই তাই বাঁধের উপরে ত্রিপল ঘেরা ঝুপড়িতে রয়েছেন ১১টি পরিবারের প্রায় ৩০ জন সদস্য। বাঁধের উপর শীতের মধ্যে রাত কাটাতে যেমন কষ্ট পাচ্ছেন, তেমনই দুপুরের টানা রোদে ত্রিপলের নীচে থাকতে নাভিশ্বাস উঠছে। এই ছবি হাসনাবাদ ব্লকের ভবানীপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের শুলকুনি পূর্ব পাড়ার।
স্থানীয়রা জানান, আমপানের রাতে প্রাণ বাঁচাতে যে যেভাবে পারেন বাঁধের উপর এসে ওঠেন। সেই থেকে বাঁধেই বাস করছে এই মানুষগুলো। বাঁধ ভেঙে যাওয়ার কিছুটা দূরে রিং বাঁধ দেওয়া হয়। ফলে নদীগর্ভে চলে যায় ১১টি বাড়ি এবং বেশ কয়েক বিঘে জমি। বাঁধের উপর ত্রিপলের নীচে বাস করা প্রজাপতি মণ্ডল বলেন, “অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে আমপানের পর থেকে ত্রিপলের নীচে আছি। ঠান্ডায় স্বামীর অসুস্থতা বেড়েছে। আমাদের যাওয়ার জায়গা নেই। ঘরটুকু ছিল, সেটাও গিয়েছে। সরকার সাহায্য না করলে ঘর করতে পারব না। জানি না আর কত দিন এভাবে শীতের মধ্যে থাকতে হবে এখানে।” বাঁধের উপরের আর এক বাসিন্দা বৃদ্ধ তারাপদ মণ্ডল বলেন, “রাতে নদীর পাশে ফাঁকা জায়গায় ত্রিপলের নীচে ঠান্ডা হাওয়ায় কেঁপে উঠতে হয়। আমার যে এক চিলতে মাটির ঘর ছিল সেখানে জানি না কখনও আর ফিরতে পারব কিনা।”
গীতা মণ্ডল, অপর্ণা মণ্ডল, সরস্বতী মণ্ডলরা জানান, স্নানের ও পানীয় জলের খুব সমস্যা। নদীর চরে ত্রিপল ঘিরে নামমাত্র শৌচাগার করে দেওয়া হয়েছে। সেগুলোর অবস্থা ভাল না। দিনে শৌচাগারে যেতে লজ্জা করে আবার রাতে অন্ধকারের মধ্যে খুব সমস্যা হয়। স্থানীয় বাসিন্দা সুকুমার মণ্ডল জানান, এখন বিদ্যুৎ পরিষেবা নেই। সৌরশক্তিচালিত আলোও নেই। ফলে রাতে আলোর সমস্যা হয়। বিষধর সাপ দেখা যায় প্রায়।
স্থানীয় বাসিন্দা রমেশ মণ্ডল, জয়দেব মণ্ডলদের দাবি, বাঁধ যেখানে ছিল সেখানেই হোক। তাহলে তাঁরা জমি ফিরে পাবেন। না হলে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা হোক। সেচ দফতর সূত্রে খবর, দ্রুত বাঁধ তৈরি হবে। তবে বাঁধ যেখানে ছিল সেখানেই নতুন বাঁধ হবে, না কি কিছুটা দূর থেকে হবে সেটা পরিষ্কার নয়। এই পরিস্থিতিতে বাড়ি জমি ফিরে পাবেন কিনা, তা ভেবে চিন্তার মধ্যে রয়েছেন স্থানীয়রা।
হাসনাবাদের বিডিও মোস্তাব আহমেদ বলেন, “ওদের সমস্যা জেনে সমাধানের চেষ্টা করব।” ভবানীপুর ১ পঞ্চায়েতের প্রধান প্রদীপ মল্লিক বলেন, “যদি এই মানুষগুলোর জমি-বাড়ি চলে যায়, তা হলে তাঁরা যাতে ক্ষতিপূরণ পান, সে কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।”