অস্ত্রোপচার করে প্রসবের ব্যবস্থা চালু হোক, দাবি এলাকাবাসীর

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পরিকাঠামো নেই বলে চিকিৎসা পরিষেবা ঠিকঠাক মিলছে না। বাগদা ব্লক গ্রামীণ হাসপাতালে নেই কোনও পূর্ণাঙ্গ অপারেশন থিয়েটার।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র 

বাগদা শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:২৫
Share:

প্রতীকী ছবি

এলাকার মানুষের কাছে চিকিৎসা পরিষেবা পৌঁছে দিতে রয়েছে একটি ব্লক গ্রামীণ হাসপাতাল। আছে তিনটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। ৩৫টি উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্র। তারপরেও সীমান্তবর্তী ব্লক বাগদার প্রায় তিন লক্ষ মানুষের চিকিৎসা পরিষেবা পেতে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হচ্ছে।

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পরিকাঠামো নেই বলে চিকিৎসা পরিষেবা ঠিকঠাক মিলছে না। বাগদা ব্লক গ্রামীণ হাসপাতালে নেই কোনও পূর্ণাঙ্গ অপারেশন থিয়েটার। যে একটি ওটি আছে সেখানে মহিলাদের লাইগেশন ছাড়া আর কিছু হয় না। অন্তত অস্ত্রোপচার করে প্রসবের ব্যবস্থা চালু হলে মানুষ উপকৃত হবেন বলে মনে করেন অনেকেই।

হাসপাতালে নেই আলট্রাসনোগ্রাফির ব্যবস্থা। হাতে গোনা সাধারণ কিছু রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে মাত্র। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও অমিল। জেলা পরিষদের সদস্য পরিতোষ সাহা বলেন, ‘‘ওটি তৈরি। এক জন সার্জেন পাওয়া গেলে সিজার করা সম্ভব হবে। স্বাস্থ্য দফতরকে জানানো হয়েছে।’’ ব্লক মেডিক্যাল অফিসার সব্যসাচী সিকদার বলেন, ‘‘আমাদের সব থেকে অসুবিধা উপস্বাস্থ্যগুলিতে স্বাস্থ্যকর্মীর অভাব। ফলে গ্রামে গ্রামে কাজের ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে।’’

Advertisement

ব্লকের মানুষকে উন্নত চিকিৎসা পরিষেবার আশায় রাতবিরেতে দৌড়োতে হয় ৩০ কিলোমিটার দূরের বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে। কোনও রোগীকে বাগদা ব্লক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সঙ্গে সঙ্গেই তাঁদের বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। অনেক মানুষ এখন ব্লক হাসপাতালে রোগী না নিয়ে গিয়ে সরাসরি মহকুমা হাসপাতালে যান। সে জন্য অবশ্য যাতায়াত বাবদ মোটা টাকা খরচ করতে হয়।

সাগরপুর গ্রামের বাসিন্দা এক মহিলার পেটে ব্যথা হওয়ায় প্রথমে তাঁকে বাগদা ব্লক গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তাঁর স্বামী রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। তাঁকে জানানো হয়, স্ত্রীর আলট্রাসনোগ্রাফি করাতে হবে। গ্রামীণ হাসপাতালে ওই ব্যবস্থা নেই। স্ত্রীকে নিয়ে গাড়ি ভাড়া করে স্বামীকে ছুটতে হয়েছিল নদিয়ার রানাঘাটে। গাড়ি ভাড়া ও আলট্রাসনোগ্রাফি মিলিয়ে খরচ প্রায় ২ হাজার টাকা। ওই ব্যক্তির আক্ষেপ ‘‘বাগদা ব্লক গ্রামীণ হাসপাতালে যদি আলট্রাসনোগ্রাফির ব্যবস্থা থাকত, তা হলে এত হয়রান হতে হত না।’’

এমন অভিজ্ঞতা অনেকেরই। নার্সিংহোম তো দূরের কথা, বাগদা ব্লকে উন্নতমানের কোনও প্যাথোলজি ল্যাবও ‌নেই যেখানে সব রকমের রক্ত পরীক্ষা হয়। বেসরকারি ভাবে ভাল মানের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখানোর সুযোগ নেই। কলকাতা থেকে বাগদার দূরত্ব একশো কিলোমিটারের বেশি। ফলে অনেকে কলকাতা যেতে চান না। অনেকেই হাতুড়ে ও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের উপরে নির্ভর করেন। এই পরিস্থিতি ওঝা-গুনিনের কারবারও ভালই হয়।

ব্লকের তিনটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র কোনিয়ারা, নাটাবেড়িয়া এবং সিন্দ্রাণী। অতীতে ওই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে রোগী ভর্তির ব্যবস্থা ছিল। সর্বক্ষণ চিকিৎসক থাকতেন। বহু বছর হল সে সব বন্ধ। এখন সপ্তাহের ৫-৬ দিন বেলায় চিকিৎসক কয়েক ঘণ্টার জন্য রোগী দেখেন। স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির ভবন আবাসনগুলো জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। দুপুরের পরে মানুষ আর চিকিৎসকের দেখা পান না। সিন্দ্রাণীতে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নতুন ভবন তৈরি হয়ে পড়ে আছে। নানা জটিলতায় তা চালু করা যায়নি। নতুন ভবনও অব্যবহারে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

ব্লক স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্লকে যে ৩৫টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে, তার মধ্যে ১৪টি কেন্দ্রে এক জন করে স্বাস্থ্যকর্মী আছেন। স্বাভাবিক ভাবেই ঠিকমতো চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

বাগদা ব্লক গ্রামীণ হাসপাতালের ভবনগুলি খারাপ হতে শুরু করেছে। বৃষ্টি হলে ভিতরে জল পড়ে। হাসপাতালের নার্স, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের থাকার জন্য আবাসন। থাকলেও সবই প্রায় বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। দেওয়ালে শ্যাওলা। দরজা-জানলা ভেঙে গিয়েছে। বৃষ্টি হলে উপর থেকে জল পড়ে। চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর অভাব।

ডায়েরিয়া, আগুনে পোড়া রোগীর জন্য আলাদা কোনও ওয়ার্ড নেই। ফলে সব রোগীকে এক সঙ্গে রাখতে হয়। নেই ওষুধপত্র রাখার স্থায়ী ঘর। শয্যা প্রায় ৫০টি। কিন্তু চিকিৎসক পাঁচ জন। চাহিদার তুলনায় যা বেশ কম। এই হাসপাতালে রোজ প্রায় হাজারখানেক মানুষ চিকিৎসার জন্য আসেন। বছরে সাড়ে ৮০০ মহিলার স্বাভাবিক প্রসব হয়।

এক খেতমজুরের কথায়, ‘‘মহকুমা হাসপাতালে রোগী নিয়ে গেলে যত দিন ভর্তি থাকে, তত দিন কাজকর্ম সব বন্ধ রেখে সেখানেই পড়ে থাকতে হয়। রুজি রোজগার বন্ধ হয়ে যায়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement