পর্দার আড়ালে চলে বেআইনি অনলাইন লটারি খেলা। নিজস্ব চিত্র
পর্দা টাঙিয়ে দোকানের আড়াল, গলির ভিতরে চলছে বেআইনি অনলাইন জুয়া খেলা। তিন মিনিটে টাকা ডবল করতে গিয়ে বহু টাকা খোয়াচ্ছেন মানুষ। বাড়ির মহিলারা তিতিবিরক্ত। অনলাইন জুয়ার নেশায় পড়ে বাড়ির পুরুষ সদস্যেরা টাকা খুইয়ে এসে বাড়িতে অশান্তি করছেন বলে তাঁদের অভিযোগ। জুয়া বন্ধের জন্য বুধবার রাতে হিঙ্গলগঞ্জ বাজার এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা কয়েকটি দোকানে ভাঙচুর করেন। ব্যবসায়ীরা এলাকা ছেড়ে পালায়। বৃহস্পতিবার সকালে স্থানীয় রমেন্দ্রনগরের মহিলারা ব্যবসায়ীদের বাড়িতে চড়াও হয়ে জুয়া বন্ধ না করলে বড় আন্দোলনের নামার হুমকি দেন।
এই ঘটনা সারা বসিরহাটেই চলছে। এলাকাবাসীর দাবি, জুয়ার টাকা পেতে চুরি-ছিনতাই বাড়ছে। দিন কয়েক আগে হিঙ্গলগঞ্জ ব্লক দফতরের কর্মীর বাড়িতে চুরি হয়। তাঁর দাবি, অনলাইন লটারি খেলার জন্যই দুষ্কৃতীরা রাতে ঘুমের ওষুধ বাড়িতে ছড়িয়ে তাঁদের বাড়ির থেকে ৫টি মোবাইল নিয়ে পালিয়েছে। স্থানীয় এক লেপ-তোশকের দোকান থেকে বেশ কয়েক হাজার টাকা চুরি হয়েছে। বসিরহাট, বাদুড়িয়া, মাটিয়া, হাসনাবাদ, মিনাখাঁ, চৈতল, স্বরূপনগর, ন্যাজাট এলাকায় চুরি- ছিনতাই লেগেই রয়েছে।
বসিরহাটের এসডিপিও অভিজিৎ সিংহ মহাপাত্র বলেন, ‘‘কয়েকজনের অভিযোগের ভিত্তিতে বসিরহাটের বদরতলা এবং বোটঘাট এলাকা থেকে সম্প্রতি ৪ জন বেআইনি অনলাইন লটারি ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ১৯ হাজার টাকা এবং বেশ কয়েকটি কম্পিউটার আটক করা হয়েছে। দোকানগুলি সিল করে দেওয়া হয়েছে।’’
এক পুলিশ কর্তার দাবি, বসিরহাট মহকুমা জুড়ে অনলাইন লটারি বন্ধে অভিযান জারি রাখা হবে। বহু মানুষ বাড়িতে বসে মোবাইলের মাধ্যমেও লটারি খেলছেন। এমনই সব অভিযোগের ভিত্তিতে অনলাইন লটারি বন্ধে অভিযানে নামে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশ কিছু দিন অনলাইন লটারি বন্ধ ছিল। কিন্তু কয়েক মাস ধরে ফের বেড়েছে। যাঁরা দোকানে গিয়ে খেলতে চান না, অনেকে ডিস্ট্রিবিউটারের কাছ থেকে কয়েক হাজার টাকার বিনিময়ে মোবাইলে লটারির অ্যাপ ডাউনলোড করে বাড়িতে বসে খেলছেন। মহিলারাও অনেকে এই নেশার খপ্পরে পড়েছেন। অভিযোগ, রাতারাতি ধনী হতে গিয়ে সর্বস্ব হারাচ্ছেন অনেকে।
লটারি ব্যবসায়ী এক যুবকের কথায়, ‘‘প্রতি ৩ মিনিট অন্তর খেলা হয়। সর্বনিম্ন ১০ টাকা রেখে মূলত ০ থেকে ৯ নম্বর ধরে খেলতে হয়। ১০ টাকায় জ্যাকপট লাগলে মিলবে ৯০০ টাকা। আর নম্বর বাধলে ৯০ টাকা মিলবে।’’ বসিরহাটের বদরতলা, বোডঘাট, চৌমাথা, ভ্যাবলা, খোলাপোতা, স্কুলবাড়ি, ৭২ নম্বর বাসস্ট্যান্ড, টাউনহল, সংগ্রামপুর, ময়লাখোলা এলাকা-সহ শহর এবং গ্রাম্য এলাকায় বাজারে একাধিক জায়গায় অনন্ত ৪০টি অনলাইন লটারির দোকান আছে। মহকুমা জুড়ে এই সংখ্যাটি দু’শো ছাড়িয়েছে।
লটারিতে বহু টাকা হারিয়েছেন গফুর গাজি, সাধন বিশ্বাস, তারক দাস। তাঁরা বলেন, ‘‘লোভে পড়ে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এখন মনে হয়, এ সব বন্ধ হওয়াই উচিত।’’