দায়িত্ব: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নিরাপত্তায় নজর এদেরও। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
বিধানসভা ভোটের পরে আজ, বৃহস্পতিবার প্রথমবার বনগাঁয় আসছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। পুলিশ-প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকালে তাঁর বনগাঁর পেট্রাপোল সীমান্তে হরিদাসপুর বিএসএফ ক্যাম্পে আসার কথা। সেখানে একটি মিউজিয়ামের শিলান্যাস করবেন তিনি। পাশাপাশি বিএসএফের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা। সূত্রের খবর, সীমান্তের নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর উপলক্ষে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। মঙ্গলবার পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে বিএসএফ কর্তারা বৈঠক করেন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পুলিশ ও বিএসএফ যৌথ ভাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছে। বুধবার হরিদাসপুর ও কালিয়ানি এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, রাস্তায় গার্ডরেল ফেলে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছেন বিএসএফ জওয়ানেরা। পুলিশ কুকুর দিয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। জওয়ানেরা এলাকায় নজরদারি চালাচ্ছেন। বিএসএফ কর্তারা এলাকায় ঘুরে পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছেন। হরিদাসপুর ও কালিয়ানি বিএসএফ ক্যাম্প সাজানো হয়েছে। সূত্রের খবর, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হেলিকপ্টারে কালিয়ানি ক্যাম্পে নামবেন। সেখান থেকে সড়ক পথে যাবেন হরিদাসপুর ক্যাম্পে। সেখানে মৈত্রী নামে একটি মিউজিয়ামের শিলান্যাস করবেন। বিএসএফ কর্তাদের সঙ্গে তাঁর বৈঠক করারও কথা আছে।
বুধবার সীমান্তে গিয়েছিলেন বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক অশোক কীর্তনীয়া। তিনি বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার সীমান্তের সমস্যাগুলি নিয়ে বিএসএফের উচ্চ আধিকারিকদের সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠক করবেন। আমরা বনগাঁ মহকুমার তিন বিজেপি বিধায়ক কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের নেতৃত্বে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করব। সীমান্ত এলাকার অভাব-অভিযোগের কথা তাঁকে জানাব, যাতে সীমান্ত এলাকায় উন্নয়ন করা যায়। এ ছাড়া, সীমান্ত আরও সুরক্ষিত করার আবেদন করব।’’
বনগাঁ মহকুমায় সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী মানুষ দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়ে আসছেন। বিশেষ করে চোরাচোলান এবং বেআইনি মানুষ পারাপার। এ ছাড়া, কাঁটাতারের বাইরে থাকা চাষের জমিতে কাজ করতে যেতে অনেক সময়ে বিএসএফ বাধা দেয় বলে অভিযোগ ওঠে। সীমান্তে বসবাসকারী মানুষের বক্তব্য, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে তাঁদের আবেদন, সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা সুরক্ষিত করা হোক। যাতে সকলে নির্ভয়ে বসবাস করতে পারেন, তার ব্যবস্থা করা হোক। সীমান্তের বহু অংশে এখনও কাঁটাতারের বেড়া নেই। নদীপথ রয়েছে। জলপথে নজরদারি বাড়ানোরও দাবি আছে সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী মানুষের।
তৃণমূলের পক্ষ থেকে দিন কয়েক আগে অভিযোগ করা হয়েছিল, বাংলাদেশ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে দুষ্কৃতীরা সীমান্ত পেরিয়ে চলে আসছে। তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি গোপাল শেঠ বলেন, ‘‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রুটিন অফিসিয়াল ট্যুরে আসছেন। এতে কোনও কাজ হবে না। কারণ, বিজেপি কোনও কাজ করে না। এরপরেও আমাদের তাঁর কাছে আবেদন থাকবে, অনেক এলাকা উন্মুক্ত কাঁটাতারহীন। সীমান্ত এলাকায় সিসি ক্যামেরা বসানো হোক। বিএসএফ যাতে সঠিক ভাবে নিরাপত্তা দেয়, সেই ব্যবস্থা করুন।’’
মতুয়াদের একাংশ আবার চাইছেন, সিএএ নিয়ে কোনও বার্তা দিয়ে যান মন্ত্রী। বিধানসভা ভোটের আগে গাইঘাটার ঠাকুরনগরে মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে সভা করতে এসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কেন্দ্রীয় সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) কার্যকর করা নিয়ে বলেছিলেন, দেশে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে এবং টিকাকরণের কাজ শেষ হলে সিএএ কার্যকর করা হবে। বিধানসভা ভোটে এ রাজ্যের মতুয়া অধ্যুষিত এলাকায় বিজেপি ভাল ফল করেছিল। কিন্তু এত দিনেও সিএএ কার্যকর না হওয়ায় মতুয়াদের অনেকে হতাশ। অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি মমতা ঠাকুর বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার সিএএ নিয়ে মতুয়াদের ভাঁওতা দিয়ে ভুল বুঝিয়েছিল। যদি মতুয়াদের প্রতি দরদ থাকে, তা হলে আইন পরিবর্তন করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষণা করুন, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে যাঁরা এসেছেন, তাঁরা সকলেই নাগরিক। কোনও নথিপত্র লাগবে না।’’ তাঁর কথায়, ‘‘উনি বনগাঁয় আসছেন বলে শুনেছি। তা হলে এখানে এসেই ঘোষণা করুন।’’
সিএএ নিয়ে কী তাঁদের সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কোনও কথা হবে?
অশোক বলেন, ‘‘এটা সংবাদমাধ্যমের কাছে বলা যাবে না।’’