ট্রেনের যাত্রীদের তৎপরতায় উদ্ধার স্কুলছাত্র, ধৃত যুবক

চলন্ত ট্রেনে স্কুলের পোশাক পরা কিশোরের সঙ্গে অনর্গল কথা বলে যাচ্ছিল ঢুলু-ঢুলু চোখের এক যুবক। দু’পক্ষের কথা শুনে সহযাত্রীদের মনে হচ্ছিল, কেউ কাউকে চেনে না। অথচ, দু’জনের মধ্যে কথা থামছিল না। ছাত্রটিকে সঙ্গে নিয়ে যুবককে ট্রেন থেকে নামতে দেখে সন্দেহের বশে পিছু নেন কয়েকজন সহযাত্রী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৪ ০২:১৪
Share:

উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ওই ছাত্রকে। পিছনে, অপহরণের অভিযোগে ধৃত যুবক। ছবি: নির্মল বসু।

চলন্ত ট্রেনে স্কুলের পোশাক পরা কিশোরের সঙ্গে অনর্গল কথা বলে যাচ্ছিল ঢুলু-ঢুলু চোখের এক যুবক। দু’পক্ষের কথা শুনে সহযাত্রীদের মনে হচ্ছিল, কেউ কাউকে চেনে না। অথচ, দু’জনের মধ্যে কথা থামছিল না। ছাত্রটিকে সঙ্গে নিয়ে যুবককে ট্রেন থেকে নামতে দেখে সন্দেহের বশে পিছু নেন কয়েকজন সহযাত্রী। জুড়ে দেন চিৎকার। মঙ্গলবার শিয়ালদহ-হাসনাবাদ শাখার ভ্যাবলা হল্ট স্টেশনে সেই চিৎকার শুনে অমর দাস নামে ওই যুবককে ধরে ফেলে প্ল্যাটফর্মে থাকা জনতা। ‘ছেলেধরা’ সন্দেহে তাকে প্ল্যাটফর্মেই এক প্রস্ত মারধর করা হয়।

Advertisement

শেষ পর্যন্ত দেখা যায়, সহযাত্রীদের সন্দেহ ভিত্তিহীন ছিল না। ছাত্রটি রেল পুলিশকে জানায়, অমরের দেওয়া বিস্কুট খাওয়ার পর থেকে সে ঘোরের মধ্যে ছিল। বসিরহাটের মোমিনপুরের বাসিন্দা অমরকে পরে গ্রেফতার করা হয়।

বসিরহাটের চাঁপাপুকুর হাইস্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ওই ছাত্র আসিফ বিল্লা মণ্ডলের বাড়ি উত্তর আবজানগর গ্রামের মল্লিকপাড়ায়। কাঁকড়া-মির্জানগর স্টেশন থেকে ট্রেন ধরে স্কুলে যাবে বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল সে। রেল পুলিশকে বছর এগারোর ছেলেটি জানিয়েছে, সকাল সাড়ে ৯টার ট্রেন ধরতে না পেরে সে প্ল্যাটফর্মে বসেছিল। সে সময়ে অমর এসে তার সঙ্গে গল্প জোড়ে। বিস্কুট খেতে দেয়। ১০টা নাগাদ হাসনাবাদগামী লোকালে ওঠে দু’জন। কিন্তু গল্পে মশগুল আসিফ চাঁপাপুকুর স্টেশনে নামতে ভুলে যায়।

Advertisement

তদন্তে নেমে রেলপুলিশ জানতে পেরেছে, অমরের সঙ্গে আসিফের কথোপকথন শুনে সন্দেহ হয় কামরার কয়েকজন যাত্রীর। একই কামরার যাত্রী স্বাগতা বসু, রমেন সর্দাররা বলেন, “বাচ্চা ছেলেটার সঙ্গে নেশাগ্রস্ত, অগোছালো চেহারার লোকটা অনর্গল কথা বলছিল। কথা শুনে মনে হচ্ছিল, কেউ কাউকে আগে থেকে চেনে না। সব মিলিয়ে ব্যাপারটা ভাল ঠেকেনি। ভ্যাবলা হল্টে ওরা নামতে আমরাও সঙ্গে সঙ্গে নেমে পড়ে চিৎকার-চেঁচামেচি জুড়ি।”

স্থানীয় সূত্রের খবর, সোমবার থেকে আসিফেরই এক সহপাঠী নিখোঁজ হয়ে গিয়েছে। সে খবর এলাকায় ছিল। তার উপরে এ দিন যাত্রীরা চিৎকার জুড়তে অমর ও আসিফকে ঘিরে ফেলে জনতা। প্রশ্ন করে তাদের ধারণা হয়, কোনও বদ মতলবে অমর আসিফের সঙ্গী হয়েছে। এর পরেই বছর চল্লিশের অমরকে বেঁধে ফেলে শুরু হয় মারধর। ভ্যাবলা হল্ট স্টেশন ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সফিকুল ইসলাম মল্লিক বলেন, ‘‘স্টেশনে ট্রেন ঢুকতেই কয়েকজন যাত্রী ‘ছেলেধরা, ছেলেধরা’ বলে চিৎকার জোড়েন। ধরে ফেলা হয় ওই যুবককে।”

রেল পুলিশ সূত্রের খবর, তাদের কাছে অমর দাবি করেছে, আসিফ তার কাছে খাবার চায়। তাই সে বাচ্চাটিকে বিস্কুট দিয়েছিল।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান আসিফের দাদু ফজলু মণ্ডল, স্কুলের শিক্ষক চন্দ্রদেব দে। ফজলু মণ্ডলের অভিযোগ, “বাড়ি এবং স্কুলের মাঝে মাত্র একটা স্টেশন। তারই মধ্যে ভুলিয়ে-ভালিয়ে ছেলেটাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল লোকটা।” আসিফ বলে, “লোকটার দেওয়া বিস্কুট খেতেই কেমন যেন হয়ে গেলাম। স্কুলে যাওয়ার কথা মনেই ছিল না! কোথায় যাচ্ছি তা-ও বুঝতে পারছিলাম না!” তার দাদুর বক্তব্য, “ভাগ্যিস সহযাত্রীরা সতর্ক ছিলেন। ওঁদের জন্যই নাতিকে ফিরে পেলাম।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement