হয়রানি: অটোর জন্য মানুষের লম্বা লাইন। ছবি: প্রসেনজিৎ সাহা
তৃণমূলেরই দখলে থাকা দুই অটো ইউনিয়নের মধ্যে বিবাদের জেরে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে নিত্যযাত্রীদের। তারই প্রতিবাদে সোমবার সকালে ক্যানিং বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখালেন নিত্যযাত্রীরা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, এ দিন সকালে ক্যানিং থেকে বারুইপুরগামী অটোগুলিকে বেলেগাছি মোড়ের কাছে আটকে দেওয়া হয়। অটো থেকে যাত্রী নামিয়ে সেগুলিকে ফেরত পাঠিয়ে দেন সেখানকার ইউনিয়নের নেতারা। এই কারণে সোমবার সকাল থেকেই ক্যানিং বারুইপুর রুটের অটো চালকেরা অটো বন্ধ রাখেন। ফলে সমস্যায় পড়েন যাত্রীদের অনেকেই।
লকডাউনের সময় থেকেই বন্ধ ট্রেন চলাচল। ক্যানিং, বাসন্তী, গোসাবার মানুষজনকে কলকাতায় জরুরি প্রয়োজনে বা নিজেদের কর্মস্থলে যেতে হলে বাস, অটোর উপরেই ভরসা করতে হচ্ছে। বাড়তি ভাড়া গুণতেও বাধ্য হন তাঁরা। বাসের সংখ্যা কম থাকায় অটোই প্রধান ভরসা।
রবিবার থেকে ক্যানিংয়ের অটো ইউনিয়নের সঙ্গে বারুইপুর, ফুলতলা, বেলগাছির অটো ইউনিয়নের বিবাদ শুরু হয়। আর তার জেরে ক্যানিং থেকে কোনও অটো ও দিকে গেলে তাদের আটকে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। সোমবার সকাল থেকে ক্যানিং থেকে কোনও অটো বারুইপুরের দিকে যাচ্ছিল না। সপ্তাহের প্রথম দিন সকাল থেকে অটো চলাচল বন্ধ থাকায় সমস্যায় পড়েন অসংখ্য নিত্যযাত্রী। অবিলম্বে অটো চালানোর দাবিতে এ দিন সকালে ক্যানিং বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন অনেকে।
যানজট তৈরি হয়। খবর পেয়ে প্রশাসন হস্তক্ষেপ করে। ক্যানিং থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের অবরোধ তুলে নিতে বলে। ঘটনাস্থলে আসেন দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের কো-অর্ডিনেটর পরেশরাম দাসও।
তিনি অটো চালকদের সঙ্গে কথা বলেন। পাশাপাশি বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলে অবরোধ তুলে নিতে বলেন। এরপরে বারুইপুরের অটো ইউনিয়নের সঙ্গে কথা বলে ক্যানিং থেকে অটো ছাড়ার ব্যবস্থা করে দেন পরেশ। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পরে চালু হয় অটো। পরেশ বলেন, ‘‘অটো ভাড়া ও অটোতে যাত্রী সংখ্যা নেওয়া নিয়ে দুই অটো ইউনিয়নের মধ্যে সামান্য সমস্যা তৈরি হয়েছে। সব পক্ষের সঙ্গেই কথা হয়েছে। সন্ধ্যায় প্রশাসনের উপস্থিতিতে উভয়পক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসে সমস্যার সমাধান করা হবে।’’
ক্যানিংয়ের অটো চালকদের দাবি, তাঁরা ক্যানিং থেকে বারুইপুর পর্যন্ত আগে ৬০ টাকা ভাড়া নিচ্ছিলেন লকডাউনের শুরু থেকে। কিন্তু সম্প্রতি সেই ভাড়া কমিয়ে ৪৫ টাকা করেছেন। আর সে কারণেই তাঁদের উপরে রাগ বারুইপুরের অটো চালকদের।
যদিও সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বারুইপুরের অটো চালকেরা দাবি করেছেন, দিন কয়েক আগে বারুইপুরে মহকুমাশাসকের দফতরে বারুইপুর পুলিশ জেলার ডিএসপি ট্রাফিকের উপস্থিতিতে একটি বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, চারজনের বেশি যাত্রী অটোতে নেওয়া যাবে না। কিন্তু ক্যানিংয়ের অটো চালকেরা নিয়ম না মেনে অটোয় ৬-৭ জন যাত্রী তুলছেন। সে কারণেই তাঁদের অতিরিক্ত যাত্রী নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে বেলেগাছি ও ফুলতলা মোড়ে।
বিক্ষোভকারী নিত্যযাত্রী সন্দীপ মণ্ডল ও কর্ণধর হালদার বলেন, ‘‘লকডাউনের আগে ক্যানিং থেকে বারুইপুরের অটো ভাড়া ছিল ৩০ টাকা। লকডাউনের সুযোগে সেই ভাড়া দ্বিগুণ করে নেন অটো চালকেরা। এরপরেও এক একটি অটোতে ছ’-সাতজন করে নিয়ে যাচ্ছেন। আমরা বার বার বলেছি। কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি। বাড়তি ভাড়া দিয়েও আমাদের চরম হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।’’
এ দিন সকাল থেকে অটো চলাচল বন্ধ থাকায় অনেকেই তাঁদের কর্মস্থলে পৌঁছতে পারেননি বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অটো নিয়ে দ্রুত প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের দাবি করেছেন তাঁরা।
এ বিষয়ে বারুইপুর পুলিশ জেলার ডিএসপি ট্রাফিক সৌম্যশান্ত পাহাড়ি বলেন, ‘‘সকালে একটা সমস্যা হয়েছিল। সেটা মিটে গিয়েছে। যাতে এই ধরনের সমস্যা আর না হয়, সে দিকে প্রশাসন নজর রাখছে।’’ এ বিষয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা আইএনটিটিইউসির সভাপতি শক্তিপদ মণ্ডল বলেন, ‘‘কোনও ভাবেই যাত্রীদের থেকে বাড়তি ভাড়া নেওয়া যাবে না। ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে সরকারি কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। পাশাপাশি এক একটি অটোতে চারজনের বেশি যাত্রী ও নেওয়া যাবে না। রাজ্য সরকারের সেফ ড্রাইভ সেভ লাইভ কর্মসূচির পরিপন্থী এটা।’’